গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

‘ক্লিন ফিড’ সংকট উত্তরণ কোন পথে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশেদ আলী : বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার নিয়ে দেখা দেয়া অচলাবস্থা নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো মতৈক্য হয়নি। সরকার ও ক্যাবল অপারেটররা এখনো নিজ নিজ অবস্থানেই রয়েছে। এর জেরে গত দুদিন ধরে দেশে বন্ধ রয়েছে সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার। উল্টো গত শনিবার ক্যাবল অপারেটরদের সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল রবিবার আরো কঠোর বার্তা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বেশ কয়েকটি ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল কেন বন্ধ করা হলো- এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সব মিলিয়ে এ খাতের সংকট উত্তরণের পরিবর্তে তা আরো অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশের বাজার ছোট বলে ‘ক্লিন ফিড’ বা বিজ্ঞাপনমুক্ত অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিদেশি চ্যানেলগুলো রাজি নয়- এমন বক্তব্য ক্যাবল অপারেটর ও ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) পরিবেশকদের। ডাউন লিংকে বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রযুক্তি ব্যয়বহুল ও বাস্তবসম্মত নয় বলেও দাবি তাদের। অন্যদিকে, বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার দেশের আইনের পরিপন্থি জানিয়ে সরকার বলছে, আইনটি মানতে অপারেটর ও পরিবেশকদের প্রায় ২ বছর সময় দেয়া হয়েছিল। এরপরও তারা প্রস্তুতি নেয়নি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এখন কঠোর হওয়া ছাড়া আর করার কিছু নেই।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে গতকাল এ বিষয়ে বেশ কৌশলী বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তবে ওই বক্তব্যে সরকারের অনড় অবস্থানের বিষয়টিও উঠে আসে। তিনি গতকাল সচিবালয়ে বলেন, বিজ্ঞাপনযুক্ত বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ায় অপারেটর ও পরিবেশকদের সাধুবাদ জানাই। কারণ, তারা দেশের আইন মেনেছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি, বন্ধ করার জন্যও বলিনি। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত। এখানে দেশের আইন মেনেই সম্প্রচার করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের আইন ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। শুধু আমাদের দেশেই এই আইনকে বছরের পর বছর বৃদ্ধাঙুলি দেখানো হচ্ছিল। তিনি বলেন, আইন বাস্তবায়নের কথা দুবছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম এবং বেশ কয়েকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে, নোটিস করা হয়েছে এবং সবশেষে গত আগস্টে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে আমরা আইনটি কার্যকর করেছি। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছে ডিজিটালাইজড না হওয়া পর্যন্ত এ আইন শিথিল রাখার জন্য। পুরো ভারতবর্ষ তো ডিজিটাল হয়নি। কিন্তু সে সব দেশেও তো আইন কার্যকর আছে। তাই এ ধরনের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইন না মেনে অপারেটর ও পরিবেশকরা উল্টো সেটির বাস্তবায়ন ব্যাহত করতে চাইছে কিনা এমন প্রশ্ন তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স ২৪, রাশিয়া টুডেসহ প্রায় ২৪টি চ্যানেলের ক্লিন ফিড আসে। কিন্তু সেগুলোও অনেকে চালাচ্ছেন না। এটি ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ। তারা কিন্তু সে অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারেন।
ড. হাছান বলেন, বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে। ক্লিন ফিডের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের ও এজেন্টের। কিন্তু কোনো কোনো অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। অনুমতি ছাড়া ডাউনলিংক করা আইন-বহির্ভূত। তাই সরকার কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
চ্যানেলগুলো আসলে ক্লিন ফিড করবে কে-

এমন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ জানান, বিশ্বজুড়ে ক্লিন ফিড পাওয়ার প্রচলিত দুটি পন্থা রয়েছে। অনেক দেশে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আপ লিংকের সময় বিজ্ঞাপন ছাড়া সম্প্রচার করে। আবার অনেক দেশে অপারেটর বা পরিবেশকরাও ডাউন লিংকের পর সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞাপন ছেঁটে তা প্রচার করতে পারেন। এতে প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় ও অর্থ ব্যয় রয়েছে।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশে ভারতের চ্যানেলগুলোতে সে দেশের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। কিন্তু সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচের সব দেশে ক্লিন ফিড সরবরাহ করে। আর বাংলাদেশের বাজারকে ছোট বলারও সুযোগ নেই। এ দেশে অনেক বেশি মানুষ ভারতীয় চ্যানেল দেখেন। তিনি বলেন, তারা সৌদি আরবের দর্শকদের জন্য আরবি কনটেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে আপ লিংক ফিড দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে বিজ্ঞাপনজুড়ে দেয়া হয়। এমনকি কলকাতায়ও সেটা দেখানো হয় না।
তবে ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবের সাবেক সভাপতি সোহেল জানান, আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে যে টাকায় মানুষ ক্যাবল টিভি সাবস্ক্রাইব করেন, বাংলাদেশে তার চেয়ে অনেক কম দামে দেয়া হয়। ফলে ক্লিন ফিড চ্যানেল সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। আমাদের সময় দিতে হবে। সরকার সময় না দিলে আমরা সুইচ বন্ধ করে দেব। সক্ষম না হলে ব্যবসা গুটিয়ে আনা ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, আগে ক্লিন ফিডে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলো বিনাশুল্কে বা কম শুল্কে আমদানির অনুমতি দেয়া উচিত। দেশে ৫৭০টির মতো কন্ট্রোল রুম আছে। সেখানে ডিভাইসগুলো সরবরাহ করতে হবে। এ কাজে চিপ, ডিকোডার বক্স ও স্যাটেলাইট ট্রান্সপন্ডার দরকার। এ জন্য সরকারের কাছে আমরা সময় চেয়েছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের কাছ থেকে ডাউন লিংকের অনুমতি নিয়ে চারটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার করে। এর মধ্যে জি নেটওয়ার্ক, সনি গ্রুপ, টেন স্পোর্টস ও ডিসকভারি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে মিডিয়া কেয়ার লিমিটেড। বেঙ্গল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া করে সিএনএন, কার্টুন নেটওয়ার্ক। জাদু ভিশন করে স্টার জলসাসহ অন্যান্য চ্যানেলগুলো। কালারস নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে পরিবেশন করে ওয়ান এলাইন্স। এরা সবাই ব্রডকাস্টারদের কাছ থেকে বিদেশি চ্যানেল ‘ডাউন লিংক’ করার পর ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়। ফলে চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে ক্লিন ফিড অনুষ্ঠান আনা অথবা এখানে ডাউন লিংক করার পর বিজ্ঞাপন মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।
প্রযুক্তিবিদ প্রকৌশলী কায়কোবাদ জানান, এটি করতে পরিবেশকরা হয়তো রাজি হচ্ছেন না তাদের অনেক অর্থ খরচ হবে বলে। কারণ যদি বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড দিতে রাজি না হয়, তবে দেশে অনুষ্ঠানের সময় বিজ্ঞাপন মুক্ত করতে কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। এতে তাদের বিনিয়োগ হবে। কিন্তু সে তুলনায় আয় নাও বাড়তে পারে। এ ভয় তাদের রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার অনুমতি দিলে তারা ওই সময়ে বিদেশি বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে দেশীয় বিজ্ঞাপনও যুক্ত করতে পারে। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। কিন্তু সরকার সেটি করবে কিনা তাও দেখার বিষয়। দেশীয় টিভি চ্যালেনগুলো হয়তো এতে আপত্তি জানাতে পারে।
ক্যাবল অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের (কোয়াব) সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ জানান, ক্লিন ফিড সম্প্রচারের জন্য যন্ত্রপাতি বসাতে ১৫ থেকে ২০ কোটি ডলার খরচ হবে। এত টাকা আমরা হঠাৎ করে কোথায় পাব। এজন্য সরকারের কাছে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ দাবি করা হয়েছে। এ খাতের প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়