গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা : জেএমবির মিজানের মৃত্যুদণ্ড জাবেদের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের আদালত ভবন প্রাঙ্গণে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি জেএমবির চট্টগ্রাম শাখার বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবালকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা। আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে এই হামলার রায় পেতে দীর্ঘ ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হলো।
গতকাল রবিবার চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজান এখনো পলাতক। অপর আসামি জাবেদ ইকবাল আদালতে বোমা হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেও অনুতপ্ত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশের তল্লাশি চৌকির সামনে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা। ওই ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়–য়া এবং শাহাবুদ্দিন নামে এক বিচারপ্রার্থী মারা যান। আহত হন কনস্টেবল আবদুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, শামসুল কবির ও আবু রায়হানসহ ১০ জন।
সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ বলেন, আদালতে বোমা হামলা মামলায় ভিকটিমের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করে শাস্তি দিয়েছেন আদালত। ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকায় বোমা মিজানের মৃত্যুদণ্ড এবং আরেক আসামি জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ওই হামলা বহুদিনের পরিকল্পিত ঘটনা। জাবেদ ইকবাল ও জাহিদুল ইসলাম মিজানসহ আসামিরা নীলনকশার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, দণ্ডিত দুই আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ভারতের কারাগারে বন্দি। সেখানে এক মামলায় তার ২৯ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া জাবেদ ইকবাল রায়ের সময় আদালতে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিচার চলাকালে আসামি জাবেদ ইকবালের সহযোগিতা এবং তার অনুতপ্ত হওয়া- এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ওই বোমা হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন তখন। তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিদর্শক হ্লা চিং প্রæং। অভিযোগপত্রে জেএমবি চট্টগ্রাম শাখার বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল এবং বোমার কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে আসামি করা হয়। এজাহারের আসামিদের মধ্যে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি হওয়ায় তাদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৭৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তইয়েবার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তার নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’। গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাগারে থাকার পর ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে বোমা মিজানকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
ত্রিশালের ঘটনার পর পালিয়ে ভারতে চলে যান মিজান। সেখানে জেএমবিকে সংগঠিত করে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর আবারো মিজানের নাম আলোচনায় আসে। তারপর ২০১৮ সালের আগস্টে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন মিজান। বর্ধমান বিস্ফোরণের মামলায় চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে ২৯ বছরের সাজা দেয় ভারতের একটি আদালত। এছাড়া দেশেও বিভিন্ন মামলায় মিজানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হয়েছে এর আগে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়