তেজগাঁওয়ে বাসায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ

আগের সংবাদ

১৫ সদস্যের দলে আট নতুন মুখ : আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা

পরের সংবাদ

তেজগাঁওয়ে বিস্ফোরণ : মিথেন গ্যাসের আগুনে দগ্ধ জিতুর মৃত্যু

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকার ছয়তলা একটি ভবনের তিনতলায় বিস্ফোরণের ঘটনাটি মিথেন গ্যাস থেকে ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে গ্যাসের উৎস সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, বাসাটির জানালার সঙ্গে পাশের ভবনের ছাদ লেগে থাকায় কখনো জানালা খোলা হতো না। এতেই রুমের ভেতরে মিথেন গ্যাসের চেম্বার তৈরি হয়। পরে আগুনের সংস্পর্শ পেয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বাসা থেকে আটককৃত নুরুল কবির ও আসাদুজ্জান পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আগেও রুমটিতে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। একই রকম তথ্য জানিয়েছেন বিস্ফোরণ ঘটা রুমের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বকর।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ জিতু হাসানের (২৮) মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জিতুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মৃত জিতুর শরীরে ৬৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শুক্রবার রাতেই তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ অপরজন ইয়াসিনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
মৃতের ভগ্নিপতি গিয়াস উদ্দিন জানান, জিতুর বাড়ি পাবনার আতাইকুলা উপজেলায়। অবিবাহিত জিতু বাঙলা কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২ ভাই ৩ বোনের মধ্যে জিতু ছিল ২য়। বর্তমানে ওই বাসায় মেসে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইএমবিএ করার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন জিতু হাসান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাসাটির যে রুমে বিস্ফোরণ ঘটেছে ওই রুমে থাকতেন নিহত জিতু ও মোহাম্মদ আলী বকর নামে এক ব্যক্তি। ওই রুমের জানালার সঙ্গে পাশের ভবনের ছাদ লাগোয়া থাকায় মালামাল চুরির ভয়ে কখনো জানালাটি খোলা হতো না। এতেই রুমের ভেতরে গ্যাসের চেম্বার তৈরি হয়। আগেও বেশ কয়েকবার বাসাটির সবাই ওই রুমে গ্যাসের গন্ধ টের পেয়েছেন। তখন জানালা খুলে ফ্যান চালিয়ে দিলে গন্ধ চলে যেত। শুক্রবার রাতে জিতু বাসায় ফিরে রুমে যায়। তখন জানালা বন্ধ ছিল। রাত ৮টার দিকে সিগারেট জ¦ালাতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ইয়াসিন ওই রুমে না থাকলেও রুমটির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুয়া কি কি রান্না করবে তা জানাচ্ছিল। ফলে তিনিও দগ্ধ হন। এ সময় জিতুর রুমমেট বকর বাসায় না থাকায় তার কিছু হয়নি।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, নাশকতা নয়, মিথেন গ্যাস থেকেই এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে জানালা বন্ধ থাকায় সেখানে গ্যাসের চেম্বার তৈরি হয়েছিল। ওসি বলেন, ঘটনার পর ওই বাসার দুই সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। তারাও আগে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। এমনকি জিতুর রুমমেট বকরও একই কথা জানিয়েছে। গ্যাসের উৎস কোথায় জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পাশের ভবনের কোনো লিকেজ থেকে সেখানে গ্যাস জমা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকার ৮৭/এ নম্বর বাসায় বিস্ফোরণে জিকরুল্লাহ জিতু ও ইয়াসিন তালুকদার নামে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণের পর ওই বাসা থেকে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সিআইডি ও র‌্যাব বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়