তেজগাঁওয়ে বাসায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ

আগের সংবাদ

১৫ সদস্যের দলে আট নতুন মুখ : আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা

পরের সংবাদ

গ্রামীণ জীবনযাত্রা উন্নত হওয়া জরুরি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। গ্রামে মানুষ যায় ঠিকই, আবার চলে আসে। কিন্তু কেন চলে আসে শহরে। এ প্রশ্নের উত্তরে সমীক্ষায় উঠে এসেছে বেশকিছু অভাবের বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে কার্যকর গণপরিবহনের সুব্যবস্থা না থাকা, উন্নত গ্রামীণ অবকাঠামোর অভাব, মানসম্মত ভোগ্যপণ্যের অভাব, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যা, উন্নতমানের হাট-বাজারের অভাব, স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা না থাকা, সুপেয় পানির অভাব, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা না পাওয়া, বিনোদনের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা না পাওয়া, কারিগরি শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা না থাকা ইত্যাদি। এ বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করে গ্রামীণ মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ঢাকা শহর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই উদ্যোগটি হচ্ছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা। যেন গ্রামের মানুষ সুযোগ-সুবিধা পায় এবং শহরমুখী না হয়। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকাসহ অন্য শহরে জনসংখ্যার চাপ কমানো যেতে পারে। কাজের খোঁজে শহরে আসার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নগরজীবন। তাই শহরকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য শহরে জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে প্রত্যেক গ্রামে নগরায়ণের ছোঁয়া দিয়ে গড়ে তুলতে পারলে তবে আবার মানুষ গ্রামমুখী হবে। শহরের এই নগরায়ণের সুবিধা যদি মানুষ গ্রামে খুঁজে পায় তবে মায়ের আঁচল ছেড়ে, গ্রামের ভালোবাসা ছেড়ে কখনোই শহরে এসে ভিড় করবে না। ইতোমধ্যেই গ্রামের মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অনেক গ্রামেই পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। মুঠোফোনের কল্যাণে ইন্টারনেটের ব্যবহারও বাড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে গ্রামে উৎপাদিত ফসল সহজেই শহরে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে। এখন গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ছেয়ে গেছে। শুধু এসব চালিয়েই অনেকে ভালো উপার্জন করছেন। আর এনজিওগুলোর তৎপরতা ও রেমিট্যান্সের ব্যাপক প্রভাব তো আছেই। অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি একরকম ইতিবাচক।
শহর থেকে গ্রামে পুঁজি ও সক্ষমতা যাচ্ছে। এখন পণ্যের দামের ক্ষেত্রে শহর-গ্রামের বিশেষ পার্থক্য নেই। তাই গ্রামে এখন কিছু করার সুবর্ণ সময়। বাংলাদেশের সব কিছুই রাজধানীকেন্দ্রিক। রাজধানীর ভেতরেই সব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর; বিভিন্ন খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও মূল স্থাপনা ঢাকায়। আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকায় গড়ে উঠেছে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। যেহেতু ঢাকার বাইরে তেমন একটা বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি, ভালো শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানও তেমন গড়ে ওঠেনি, সবাই ছুটে আসছে ঢাকায়। একটা সময় ছিল, মানুষ গ্রাম বা মফস্বল থেকে ঢাকায় আসত এবং স্থায়ীভাবে বাস শুরু করত, কিন্তু নাড়ির টান কখনোই ভুলত না। অন্ততপক্ষে বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর আগে গ্রামে চলে যেত অনেকেই, চাইত মৃত্যুটা যেন সেই ছায়া-সুনিবিড় শান্তির গ্রামেই হোক। আর এখন হয়েছে উল্টো। গ্রাম বা মফস্বলের মানুষ মৃত্যুর ঠিক আগে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসে। বিষয়টি এমন হয়েছে যে, মরতে হলেও যেন ঢাকায় আসতে হবে। সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে ঢাকা ও অন্য এলাকাগুলো গড়ে তোলা গেলে নিঃসন্দেহে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যাবে। অপরাধের কোনো তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় না গিয়েও বলা যায় যে, সমাজের এলিট শ্রেণির জমি দখলের মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ অনেক কমবে, যখন মানুষের আর ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা থাকবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, নগরের যেসব স্থানে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে অপরাধের মাত্রাও বেশি। মানুষের যদি কাজ থাকে আর সেই কাজ থেকে যদি আয় হয়, তাহলে মানুষ খুব কমই অপরাধে জড়ায়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে উন্নত করে কাজের বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে অনেক মানুষই গ্রাম বা মফস্বলে বসে ভালো উপার্জন করতে পারবে। তখন স্বাভাবিকভাবে অপরাধের মাত্রাও কমবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, কাউকে বঞ্চিত করে উন্নয়নের কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয় না। তাই গ্রামকে উপেক্ষা করে উন্নত রাষ্ট্র হবে না। আওয়ামী লীগ এজন্য তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ যুক্ত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল তার মধ্যে অঙ্গীকার ছিল, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুুবিধা সম্প্রসারণ করা। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নিয়ে ইতোমধ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করছে। আপাতত ১৫টি গ্রামের ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো পাইলট গ্রাম হিসেবে সারাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে। জানা গেছে, আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য ১৫টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫টি ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে কার্যকর গণপরিবহন পদ্ধতির জন্য পরিকল্পিত উন্নত গ্রামীণ অবকাঠামো বিনির্মাণ, মানসম্মত ভোগ্যপণ্য প্রাপ্তি ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের জন্য হাট-বাজার উন্নয়ন, স্যানিটেশন অবস্থার উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানির সুবিধা সৃষ্টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধার জন্য কার্যকর ব্যাংক ব্যবস্থা প্রবর্তন, স্থানীয় জনগণের উন্নতির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণ, কৃষি সম্পর্কিত সুবিধা নিশ্চিতকরণ, কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, পাঠাগার, ক্রীড়া ও বিনোদন সুবিধা সম্প্রসারণ, গ্রামীণ নৌ যোগাযোগ সম্প্রসারণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও নিষ্কাশন, সর্বাধুনিক ও সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, ই-গভর্নেন্স ও কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি। সর্বোপরি গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে। গ্রামের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সত্য উপলব্ধি করেই দেশ গড়ার এমন আরেকটি মহৎ কাজে হাত দিয়েছেন। এটি ভালোভাবে বাস্তবায়িত হোক- এই কামনা দেশবাসীর। জয়তু ‘আমার গ্রাম আমার শহর’।

সৈয়দ ফারুক হোসেন : লেখক, ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়