তেজগাঁওয়ে বাসায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ

আগের সংবাদ

১৫ সদস্যের দলে আট নতুন মুখ : আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা

পরের সংবাদ

‘ক্লিন ফিড’ নিয়ে টানাপড়েন : বিদেশি চ্যানেলগুলো কবে চালু হবে জানে না কেউই

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশের ক্যাবল টিভি ও ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা অঙ্গনে। গত শুক্রবার থেকে সরকার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করায় বেশির ভাগ বিদেশি চ্যানেলই আর দেখতে পাচ্ছেন না দেশের গ্রাহকরা। কবে নাগাদ চ্যানেলগুলো চালু হবে- এর সদুত্তরও নেই কারো কাছে। সরকার বলছে, দেশের স্বার্থেই বিজ্ঞাপনযুক্ত সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাবল অপারেটরা বলছেন, চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপন মুক্ত করে সম্প্রচারের কোনো সুযোগ নেই তাদের হাতে।
বিদেশি প্রায় প্রতিটি চ্যানেলই অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। বিশেষ করে ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের কারণে এ দেশে ওই দেশের পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি হয়। এতে দেশীয় উৎপাদকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকার বিজ্ঞাপন খাতে রাজস্বও হারায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকেই বিজ্ঞাপন মুক্ত চ্যানেল বা ক্লিন ফিড চ্যানেল সম্প্রচারের দাবি উঠে আসছিল। তবে ক্যাবল টিভি ও ডিটিএইচ অপারেটররা বরাবরই ক্লিন ফিড চ্যানেলের বিপক্ষে রয়েছেন। তাদের যুক্তি, ডাউন লিংক থেকে বিজ্ঞাপন মুক্ত করে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কোনো প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই। কেননা, চ্যানেলগুলো তারা রিয়েল টাইমে প্রচার করে থাকেন। আর যদি আগে ফিল্টার করে বিজ্ঞাপন মুক্ত করতে হয়, তবে সেটি হবে অনেক ব্যয় সাপেক্ষ ও অলাভজনক।
এই বিরোধিতায় গত এপ্রিলেও সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে পারেনি সরকার। পরে ৬ মাস সময় দিয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী, শুরুর দিন থেকেই কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। পরিচালনা করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। দিনের শুরুতে প্রথমে ক্যাবল অপারেটর ও রাতে ডিটিএইচ সেবা বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি মুভি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, কার্টুন নেটওয়ার্ক, ডিসকভারি, বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিনোদন, শিক্ষামূলক বা সংবাদভিত্তিক বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচারও বন্ধ হয়ে যায়।
ক্যাবল অপারেটর ওনার্স

এসোসিয়েশনের (কোয়াব) সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ জানান, ক্লিন ফিডের মানে হচ্ছে অনুষ্ঠানের ফাঁকে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হয়, সেগুলোতে কমবেশি বিজ্ঞাপন থাকে। এ কারণে প্রায় ৬৫-৭০টি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ আছে। বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না, এমন কোনো জনপ্রিয় চ্যানেল নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে কীভাবে ক্লিন ফিড চ্যানেল সম্প্রচার হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুভাবে এটি হতে পারে। প্রথমত, চ্যানেল কাস্টমাইজ করে অর্থাৎ বাংলাদেশে তাদের চ্যানেল বিজ্ঞাপনহীন করে ডাউনলিংক করার ব্যবস্থা করতে পারে। অথবা ডাউনলিংকের পর অনুষ্ঠানের ফাঁকে থাকা বিজ্ঞাপন বাদ দেয়া যেতে পারে। তবে এর কোনোটিই বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে লাইসেন্সধারী ক্যাবল অপারেটরের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি। বেশির ভাগ অপারেটরের সংযোগ সংখ্যা ২০০-৩০০। ফলে চ্যানেল ক্লিন ফিড করে চালানো অপারেটরদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি ব্যয়বহুল। আবার বিদেশি চ্যানেলগুলোও আমাদের জন্য বিজ্ঞাপন মুক্ত সম্প্রচারে রাজি নয়। তিনি বলেন, প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সরকারকে এই দিকটাও বিবেচনা করা দরকার। আমাদের দিক থেকে করার কিছু নেই। সরকার আমাদের যা করতে বলবে, আমরা সেটিই করব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের অপারেটরা সব চ্যানেল ডাউনলিংক করে ‘রিয়েল টাইমে’ সম্প্রচার করেন। বিজ্ঞাপন মুক্ত করে রিয়েল টাইমে চ্যানেল সম্প্রচার করা তখন অপারেটরদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আর চ্যানেল ক্লিন ফিড করে পরে সম্প্রচার করা ক্যাবল অপারেটরদের জন্য ব্যয়বহুল- এ কারণে তারা এটা করতে চান না। অনেক দেশে অপারেটররা ডাউনলিংক থেকে নামিয়ে ক্লিন ফিড করে সম্প্রচার করে।
এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, যেসব চ্যানেল বিজ্ঞাপন মুক্তভাবে দেশে আসে, সেগুলো সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আইন মানা বিদেশি চ্যানেলের যেমন দায়িত্ব একই সঙ্গে যারা বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে সেই অপারেটরদেরও দায়িত্ব। কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলক জনগণকে বিক্ষুব্ধ করার জন্য বিজ্ঞাপন মুক্ত আসা চ্যানেল বন্ধ রাখে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। বিজ্ঞাপন মুক্তভাবে যেহেতু তারা ফিড দিচ্ছে না তাই এই চ্যানেলগুলোর যারা বাংলাদেশে অপারেটর তারাই সম্প্রচার বন্ধ করেছে।
এর আগে শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ক্লিন ফিড না হওয়ায় দেশের কয়েক হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের আইনে রয়েছে যে, এভাবে বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ভারত, পাকিস্তান, ব্রিটেনসহ বহু দেশে এমন আইন রয়েছে। এটি কার্যকর করলে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও লাভবান হবে। কারণ তারা তখন অনেক বিজ্ঞাপন পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়