নলডাঙ্গা : আ.লীগ-বিএনপি নেতাসহ আটক ১১ জুয়াড়ি

আগের সংবাদ

উন্নয়নের ভোগান্তি আর কত : কোনো প্রকল্পই শেষ হয় না নির্ধারিত সময়ে, বছরজুড়েই চলে সেবা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি

পরের সংবাদ

কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধে খামারিরা দিশেহারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস কে রঞ্জন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে এক সময় ১৫টি কাঁকড়া খামার ছিল, তবে এখন টিকে আছে মাত্র একটি খামার। ১৪টি খামারের মালিকরা লোকসানের ঘানি টানতে টানতে আসহায় হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিদেশে রপ্তানি করতে পারেনি খামারিরা। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে, অন্যদিকে লোকসানের ঘানি টানতে না পেরে কাঁকড়া উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন চাষিরা।
দিন দিন খামার মালিকরা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারের কাছে তাদের তাদের দাবি- অতি শিগগির স্বপ্ল সুদে ঋণ পেলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তা না হলে তাদের এই ব্যবসা করা দূরের কথা, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে যাবে। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে এসব চাষি কাঁকড়া খামার চালাত। গত দুই বছর বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি না হওয়ায় তারা এনজিও কিস্তি দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর ধরে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় মনোহরপুর গ্রামের ১৫টি কাঁকড়া খামারের মধ্যে এখন আছে মাত্র ১টি। লোকসানের ঘাটতি মেটাতে না পেরে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে ১৪টি খামার। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে খামার করে মোটামুটিভাবে চলছিল। তবে করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পরে চাষিরা। কিস্তি দিতে না পেরে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ প্রায় ৪৮টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে সব চেয়ে রপ্তানি হয় চীনে। বর্তমানে রপ্তানি বন্ধ থাকায় মনোহরপুরের কাঁকড়া খামারগুলো বিলুপ্তির পথে। প্রতিটি খামার তৈরি করতে ১-৩ একর জমি লাগে। প্রতি শতাংশ জমিতে ৬০ কেজি কাঁকড়া চাষ করা যায়। চাষিরা মহিলা ও পুরুষ এই দুই প্রকার কাঁকড়া চাষ করে থাকেন। খামারিরা সাগর ও ফাতরার বন থেকে ছোট কাঁকড়া সংগ্রহ করে তারা খামারে পুষে শামুক, কাঁচা মাছের শুঁটকি খাবার দিয়ে প্রতিদিন পরিচর্যা করে থাকেন। বিশ দিন পর প্রতিটি কাঁকড়া ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজন হয়। পুকুর থেকে বিশ দিন পর এসব কাঁকড়া ধরে বিক্রি করা হয়। ৩০ দিন পর্যন্ত খামারে রাখা যাবে, এর বেশি রাখলে মারা যায়। ছোট কাঁকড়া ক্রয়, খাবার ও পরিচর্যাসহ প্রতি কেজিতে ২৫০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি কাঁকড়া ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি হয়। সঠিকভাবে উৎপাদন করতে পারলে অনেক লাভবান হয় খামার মালিকরা। কাঁকড়া উৎপাদন ও বাণিজ্যিকীকরণে আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ সরকার বলেন, মনোহরপুর গ্রামে ১৫টি কাকরা খামার ছিল। এখন একটি খামার আছে। লোকসানের কারনে খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি প্রণোদনা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে খামার মালিকরা।
কাঁকড়া খামারি মাখম হাওলাদার ও প্রফুল্ল মিস্ত্রী বলেন, দুই বছর ধরে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। আমরা এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা আবার কাঁকড়া চাষ শুরু করব, তবে সরকারি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ পেলে অনেক ভালো হতো।
কাঁকড়া খামারি সুমন গাইন, ফটিক মিস্ত্রী ও বিকাশ গাইন বলেন, এ বছর আমাদের ৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিদেশে রপ্তানি শুরু হলে আবার কাঁকড়া চাষ শুরু করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খামারিদের সরকারি প্রণোদনা দিলেও আমরা এখনো পায়নি।
কাঁকড়া খামারি সুব্রত সরকার বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি করতে না পেরে আমার ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি কাটাতে ২ বছর সময় লাগবে। আমার ৪টি খামার ছিল, বর্তমানে একটি খামার রয়েছে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কাঁকড়া খামারিরা নিজ উদ্যোগে চাষ শুরু করলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছি, পেলে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়