হাসেম ফুডে অগ্নিকাণ্ড : ৩ মাস পর দগ্ধ ছেলের মরদেহ পেলেন বাবা

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গাদের অস্ত্র-অর্থের উৎস কী

পরের সংবাদ

বাদ পড়লেন কাদের মির্জা : নোয়াখালী আ.লীগের নেতৃত্বে সেলিম, শাহীন ও সোহেল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জাকে বাদ দিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিমকে আহ্বায়ক করে জেলা আওয়ামী লীগের ৮৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদুল্লাহ খান সোহেল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদনে এ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কাদের মির্জার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা জেলা কমিটির সহসভাপতি পদে ছিলেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর জেলা শহরের সুলতান কলোনির চেয়ারম্যান পার্ক ও জজ কোর্ট এলাকায় জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল আলম মঞ্জুর অফিস, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পাড়ামহল্লায় মিষ্টি বিতরণ এবং খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল করেছেন ঘোষিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও সহিদুল্লাহ খান সোহেলের কর্মী-সমর্থকরা।
২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে সভাপতি ও সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একসময় একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলের সঙ্গে ওই সম্মেলনকে ঘিরে একরামুল করিম চৌধুরীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে দলীয় প্রধানের দপ্তরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ

কমিটি জমা দেয়া হলে সেই কমিটি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা প্রায় ১৮ থেকে ২০ জনের মতো ছিল অনুপ্রবেশকারী।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে কাদের মির্জা তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অপরাজনীতি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্য ও লুটপাটের অভিযোগ এনে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের স্থান না হওয়া নিয়েও বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যের কারণে আলোচনায় আসেন মেয়র কাদের মির্জা।
পরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এমপি নিজাম ও একরাম চৌধুরীর সঙ্গে কাদের মির্জার বিরোধ। এই বিরোধের জেরে কাদের মির্জা ও একরামের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। ঘটেছে প্রাণহানিও। দলের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে গত ২৪ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।
এরপর প্রতিনিয়তই নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে বিতর্কিত নানা মন্তব্য করে আসছিলেন কাদের মির্জা, সমালোচনা করেন নিজের ভাই ওবায়দুল কাদেরেরও। এমন এক ফেসবুক লাইভেই গত ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আর নির্বাচন করবেন না বলেও জানান।
তিনি বলেন, আমি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। ভবিষ্যতে আমি কোনো দলীয় পদপদবির দায়িত্ব নেব না। এর ঠিক দেড় মাস পর বসুরহাট পৌর মিলনায়তনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে ফেরার ঘোষণাও দেন কাদের মির্জা। তিনি তখন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যালে আমি আবারো আওয়ামী লীগের ছায়াতলে ফিরে এলাম। অন্য যারা আমাদের সঙ্গে আসতে চান, আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
অন্যদিকে কাদের মির্জার সত্য বচনের পাশাপাশি জেলা শহরে একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে গ্রুপিং শুরু করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও মেয়র সহিদুল্লাহ খান সোহেল। এরপর থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।
ঘোষিত কমিটির বিষয়ে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এটি ভাগাভাগির কমিটি হয়েছে। আমি এই কমিটির পক্ষেও না বিপক্ষেও না। তবে অপরাজনীতির হোতা একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।
ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, দীর্ঘদিন পর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ায় প্রাণপ্রিয় মাতৃতুল্য নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নোয়াখালীর ৪০ লাখ জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সাথে নোয়াখালীর অভিভাবক আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, নেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অপরিহার্য নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়