হাসেম ফুডে অগ্নিকাণ্ড : ৩ মাস পর দগ্ধ ছেলের মরদেহ পেলেন বাবা

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গাদের অস্ত্র-অর্থের উৎস কী

পরের সংবাদ

পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা : ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে সোনালি আঁশ পাট। দীর্ঘদিন পর এবার পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। তারা লাভের মুখ দেখছেন। তবে মৌসুমের শুরুতে পানি না থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তাদের। সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনার মধ্যেও বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পেরে ফুরফুরে মেজাজে আছেন কৃষকরা। সরজমিন সদর উপজেলার বড় খোচাবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাটচাষিরা ভ্যান, অটোরিকশা ও ভটভটিতে করে বাজারে পাট নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য।
কথা হয় পাটচাষি নারায়ণের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। পাট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৫ মণ। তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করে পাওয়া গেছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। জগন্নাথপুর এলাকার বিলপাড়া গ্রামের পাটচাষি বেলাল হোসেন বলেন, চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভালো। মৌসুমের শুরুতে দাম পাব না বলে ভেবেছি। এখন তো বাজারে ডাবল দামে বিক্রি করছি। গত ৫-৭ বছরেও এতো বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পারিনি। এ ছাড়াও অন্তত ২০ হাজার টাকার পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করতে পারব। বাজারে পাট বিক্রি করে বেজায় খুশি কৃষক আব্দুর রহমান, হরিবর্ধন সরকার, কমলা কান্তসহ একাধিক কৃষক। তারা বলেন, অনেক দিন পর পাট বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছি। দাম বেশি পাওয়ায় আগামী বছর আরো বেশি জমিতে পাটের আবাদ করার ইচ্ছা আছে। খোচাবাড়ি বাজারের পাট ব্যবসায়ী গৌরহরি ঘোষ জানান, এবার পাট বাজারে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ দাম বেড়ে তিন হাজার টাকায় মণ বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই রকম পাট বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এ বাজার থেকে তিনি পাট কিনেন। এ পর্যন্ত তার গোডাউনে ৭০ লাখ টাকার পাট কিনে রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে পাট কিনতে এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামে এক পাট ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে পাটের মান ভালো। আমদানিও ভালো। মানভেদে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাট কিনছেন তিনি। এবার বৃষ্টি কম থাকায় শুরুতে কৃষকরা কিছুটা কম দামে পাট বিক্রি করছিলেন। পানি থাকলে পাটের মান আরো ভালো হতো। বাজারে পাটের আমদানিও বাড়ত। আরেক পাট ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, তাদের ক্রয়কৃত পাট ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাটকল মালিকদের পাঠান। তবে সমস্যা হচ্ছে এখনো অনেক পাটকল মালিক তাদের মিল বন্ধ রেখেছেন। দ্রুত ওই মিলকারখানাগুলো চালু করলে সমস্যা কেটে যাবে। এবার ৮০ লাখ টাকার পাট কিনে রেখেছি। আশা করি ভালো লাভ পাব। খোচাবাড়ি বাজারের হাট ইজারাদার উত্তম কুমার রায় জানান, সপ্তাহে দুই দিন এ বাজারে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মতো পাট কেনা-বেচা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর উপজেলা থেকে আসেন। এ ছাড়াও পাটের মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষও এ বাজারে পাট কিনতে আসেন। তবে পাটের হাটে জায়গা অপ্রতুল হওয়ায় পাট কেনা-বেচায় কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন বলেন, জেলার সব উপজেলায় কম বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ৫২৫ হেক্টর বেড়ে পাটের চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার ২৯২ হেক্টরে। এ অঞ্চলের পাট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মিল-কারখানায় বিক্রি হয়ে থাকে। পাটের চাষ বেশি এবং মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়ে আগামীতে পাটচাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন চাষিরা, এমন প্রত্যাশা জেলা কৃষি বিভাগের শীর্ষ এ কর্মকর্তার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়