হাসেম ফুডে অগ্নিকাণ্ড : ৩ মাস পর দগ্ধ ছেলের মরদেহ পেলেন বাবা

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গাদের অস্ত্র-অর্থের উৎস কী

পরের সংবাদ

অভিজাত এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশে কর প্রদান কতটা যানজট খুলে দেবে?

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

২৫ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। এই প্রথম এমন একটি দিবসের কথা শুনলাম। যেখানে প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা ও যোগাযোগে সহজ কৌশল হিসেবে ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়ছে সেখানে এমন একটি দিবস বিস্ময় তৈরি করে বৈকি। তাছাড়া বিশ্ব এখন অত্যাধুনিক গাড়ি নির্মাণ ও বাজারজাতকরণে সক্রিয় প্রতিযোগিতায় মেতেছে। গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে ছাড়ছে। প্রয়োজন এবং শখ একাকার হয়ে গাড়ি কেনার বিষয়টি মানুষের স্বপ্নে ঠাঁই নিয়েছে, নিচ্ছে। স্বপ্ন পূরণে কোনো কোনো ব্যক্তি তার উপার্জন সক্ষমতা বাড়িয়েছেন। কিংবা যার সক্ষমতা হয়ে ওঠেনি তিনি ব্যাংক ঋণ করে গাড়ি কিনছেন। আশ্রয়ের জন্য বাড়ি নির্মাণের মতোই ব্যক্তি তার ও তার পরিবারের যোগাযোগে নিরাপত্তা এবং সহজতর করার লক্ষ্যে গাড়ি কেনেন। এটি হলো একটি শ্রেণি। আবার প্রয়োজনের তুলনায় অত্যধিক অর্থের মালিকদের কথা কিন্তু ভিন্ন। প্রয়োজন নয়, বরং অর্থ, সম্পদ প্রদর্শন কিংবা অঢেল টাকায় বেপরোয়া শৌখিনতা তাদের গাড়ি কিনতে প্রভাবিত করে থাকে। তাই তাদের প্রাসাদসম বাড়িতে গাড়ির সংখ্যাও হয় অনেক। পরিবারের সদস্যভিত্তিক হয় গাড়ির সংখ্যা। কাজেই গাড়ি ব্যবহারকারীদের ভেতর গাড়ি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টত ভিন্ন। অর্থাৎ যারা গাড়ি ব্যবহার করেন তারা কিন্তু সবাই অর্থসম্পদে একই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নন।
যাই হোক বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘গণপরিবহনে ও হেঁটে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত করি’। প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েও কথা আছে। ব্যক্তিগত গাড়ি কারা সীমিত করতে পারেন, যাদের দুইয়ের অধিক বা তারও অধিক গাড়ি আছে বা থাকে। তারা তো অতি ধনী শ্রেণির মানুষ। তারা কি গণপরিবহনে বা পায়ে হেঁটে চলবেন বা চলার কথা ভাবতে পারবেন? বোধহয় না। আবার বাংলাদেশে তো অতি ধনীর সংখ্যা অতি দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের চেয়ে বেশি নয়। তাছাড়া এমন একটি প্রতিপাদ্য বিষয়ে কিন্তু গাড়ি কেনা-বেচাকে নিরুৎসাহিত ও নিষিদ্ধ করে কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। পাশাপাশি গণপরিবহন মালিকদের পরিবহন ব্যবসাকে সফল হতে ইন্ধন দেয় তো বটেই। এদিকে বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা ও গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব যে কতটা যাত্রীদের প্রতিকূলে তার কিন্তু কষ্টদায়ক ইতিহাস বহু রয়েছে। যা হোক ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এদিন রাজধানীর মালিবাগ-খিলগাঁও এলাকায় র‌্যালিতে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য রাখেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, ফুটপাত দখল নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দখল নিয়ে রাজনৈতিক নেতা, কাউন্সিলর এবং পুলিশ যে পাল্টাপাল্টি কথা বলেন সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন। বাস্তব ও সত্য। ফুটপাত তৈরির পরদিনই তা দখল হয়ে যায় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন। একজন মেয়রের কাছে যখন ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তখন কিন্তু আরো বড় ধরনের কোনো দখল নিয়ে শঙ্কা ও ভীতি প্রকট হয়ে ওঠে সাধারণের মনে। মেয়র মহোদয় এটা বুঝতে পারেন কিনা। এ কারণে যে, তিনি এর চেয়ে বড় দখলবাজদের উৎখাত করবেন কীভাবে, এই শঙ্কা জনমনে জেগে ওঠে। আবার তার কথায় পরিষ্কার হয় যে, কারা ফুটপাত দখল করে, চাঁদা আদায় করে তা তিনি অবগত। তাহলে তার কাছে অনুরোধ রাখা যেতে পারে যে, এই শ্রেণির দখলদার ও চাঁদাবাজদের তিনি নির্মূল করুন। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে তিনি যে সিরিয়াসভাবে অভিযান চালিয়েছেন, আমরা আশা করব তারও অধিক সিরিয়াসভাবে তিনি ফুটপাত দখলদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন। এই প্রসঙ্গে একজন রিকশাচালক রসিয়ে বললেন, এডিস মশার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা অর্থের দাপট নেই। তাই তাদের ওষুধ ছিটিয়ে নির্মূল করা যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে মেয়র বলেছেন, চাঁদাবাজির সঙ্গে সবাই জড়িত। তাই এটিকে সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। তিনি মনে করেন মেয়র, স্থানীয় সাংসদ, কাউন্সিলর বা পুলিশ একা প্রতিহত করতে পারবেন না। ভাবছি ফুটপাত দখলদার ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে আর কাকে লাগতে পারে। মেয়র, স্থানীয় সাংসদ, কাউন্সিলর বা পুলিশ যদি ইনস্টিটিউট না হয়ে এক একজন ব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই চারজন ব্যক্তি দিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত হবে না এবং চাঁদাবাজও রোখা যাবে না। আর সামাজিকভাবে প্রতিহত করা বলতে যদি সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়, তাহলে জনগণের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। হেনস্তার কারণে অপরাধ দমনে অরাজনৈতিক সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসতে অনেক ভয় পায়। ভীত হয়।
অভিজাত এলাকার যানজট নিয়ে তিনি চিন্তিত। গাড়ির ভিড়ে যানজট হচ্ছে। যানজট নিরসনে তিনি অভিজাত এলাকায় গাড়ি নিয়ে ঢুকলে কর দিতে হবে তিনি জানিয়েছেন। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বাধিধারা, ডিওএইচও, ধানমন্ডি, নিকেতন। যে এলাকায় অভিজাতরা বসবাস করেন সেই সব এলাকা সহজ অর্থে অভিজাত। এমন এলাকার বাইরেও অভিজাত পরিবার বাস করে এমন এলাকাও আছে। যাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ির সংখ্যা কিন্তু কম নয়। কিন্তু সেইসব এলাকাকে অভিজাত এলাকা বলা হয় না। বলা হচ্ছে না। মেয়র সাহেব বলছেন না। এখন কথা হলো, অভিজাত এলাকায় বাসাবাড়ির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অ-অভিজাত এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কর্মজীবীরা কর্মস্থলে পৌঁছান। তাদের পৌঁছাতে হয়। এখন নাকে খত দেয়ার মতো অবস্থা দাঁড়ায় কিনা ভাবছি। একে তো গাড়ির মালিকানার জন্য প্রতি বছর ট্যাক্স দিতে হয়, তার ওপর অভিজাত এলাকায় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের কারণে ট্যাক্স দেয়া এক রকম অবিচার হয়ে যায় কিনা? যানজট নিরসনে কর দিয়ে অভিজাত এলাকায় প্রবেশ কতটা যুক্তিযুক্ত এবং কর ছাড়া রাস্তায় সড়ক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার দায় কার কতটুকু সেই পর্যালোচনা ও কারণগুলো দেখা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও কিন্তু রয়ে যায়। জানি না কে আছেন তার জবাব দেয়ার। জনগণ তো কর দিচ্ছে তার বিভিন্ন নাগরিকসেবা পেতে। সেই কর অর্থ দিয়েই তো সরকারি চাকুরেদের বেতন দেয়া হচ্ছে। তাহলে কেন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের কাছ থেকে করের মতো জরিমানা আদায় করা হবে না?
আর যানজট কমাতে কেন অভিজাত এলাকায় শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশের জন্য কর আদায়ের ভাবনা? মেয়র মহোদয় অভিজাত এলাকায় বাস করেন, তাই বলেই কি? অভিজাত এলাকার যানজট নিরসন করলেই কি জনগণের চলাচলে স্বস্তি নেমে আসবে, সময় বাঁচবে? বোধহয় না। আর যানজট তো শহরজুড়ে কেবল ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া। পুরান ঢাকা, মতিঝিল এলাকা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী কোথায় নেই যানজট। ট্রাফিক নিয়ম-কানুন মানতে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন করেছে। লালবাতি, হলুদ বাতি কিংবা সবুজ বাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা খাম্বা। তারপরও ট্রাফিক পুলিশকে বাঁশি আর লাঠি উঁচিয়ে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। পারলে হাত দিয়ে গাড়ি টেনে ধরা হয়। কারণ হলো, বাতির স্থাপনার অধিকাংশই অচল, অকার্যকর। কোনো দায় নেই কারোর। দায়িত্ব কিংবা জবাবদিহিতাও নেই। পরিশেষে বলব, এদিন দেখতাম ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে তথা জাতির ভেতর শ্রেণি-বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজচিন্তার যন্ত্রকৌশলে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, অতিদরিদ্র তারই ফলশ্রæতি। এখন দেখছি এলাকার ভেতর বৈষম্যের রেখা এঁকে দেয়ার চেষ্টা চলছে। যখন কোনো সমস্যাকে জাতীয়ভাবে সমগ্র জাতির স্বার্থে সমাধানের চিন্তা করা হয় না, তখন কিন্তু সেই সমস্যা দূর হয় না। বরং সেই সমস্যার সঙ্গে নতুন সমস্যা এসে যুক্ত হতে পারে। অভিজাত এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশের কর আদায়ের চিন্তা অ-অভিজাত এলাকার মানুষগুলোকে সমাজ ও মানব মর্যাদার ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করছে বা করবে কিনা ভেবে দেখা দরকার। যানজট নিরসনের অজুহাতে অভিজাত বনাম অ-অভিজাত এলাকার দ্ব›দ্ব নাই-ই হোক।

স্বপ্না রেজা : কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়