বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার

আগের সংবাদ

বেপরোয়া চোরাচালান চক্র : স্থল, নৌ ও আকাশপথে আসছে হরেক চোরাই পণ্য, বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য পাচারও হচ্ছে

পরের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় ভোগান্তিও

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ঢাকা উত্তর সিটিতে সময় বিভ্রাট ** কেন্দ্রে কাউন্সিলরদের স্বজনপ্রীতি ** প্রচারণায় ঘাটতি **
কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দেশব্যাপী গণটিকা ক্যাম্পেইনে মানুষের মাঝে উৎসাহ যেমন ছিল তেমনি ছিল দুর্ভোগও। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বাইরে আলাদা দুটি লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন শত শত নারী-পুরুষ। তবে বয়স্ক এবং সঙ্গে সন্তান নিয়ে আসা নারীদের লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই টিকা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি যারা নিবন্ধন করেননি, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে আসলেও তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম সুশৃঙ্খল পরিবেশে পরিচালনা করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় রাজধানীর বাইরে কিছু কিছু এলাকায় বাড়িতে ক্যাম্প বসিয়ে টিকা দেয়া হয়েছে।
তবে এবারো স্থানীয় কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানসহ ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের প্রভাব খাটিয়ে টিকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাকেন্দ্রে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সিরিয়াল নিয়েছেন, তারা আগে টিকা নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের যাদের হাতে স্মার্টফোন ছিল, এই ব্যক্তিদের টিকা নিতে উপরে পাঠান নিচে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যরা।
টিকা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, কাউন্সিলরের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে এখানে টিকা মিলছে। তবে এ বিষয়ে কাউন্সিলর আসিফ আহমেদের বক্তব্য, প্রথমবার গণটিকা কর্মসূচির আওতায় প্রায় শখানেক লোক দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আসেননি। তাই কারা টিকা নিতে আসছেন, সেই তথ্য সংরক্ষণের জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে কোথাও কোথাও। ডিএনসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্ধারিত কেন্দ্র রায়েরবাজারের কমিউনিটি সেন্টারে দেখা গেছে, সন্তান কোলে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীকে আগে টিকা দেয়া হয়েছে। ওই নারী জানান, বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবীদের জানানোর পর তারা তাকে আগে টিকা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

এদিকে সকাল ৯টায় গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সরকার পক্ষ থেকে। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দুপুর আড়াইটার পর। এতে অনেকেই টিকা না নিয়ে ফেরত গেছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে আগেভাগে কিছু জানানো হয়নি, মাইকিংও করা হয়নি। এছাড়া এসএমএস জটিলতাও ভুগিয়েছে অনেককে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা রহমান আরিফ জানান, এসএমএস না আসলে টিকা দিবে না এমন কথা তারা জানতেন না। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর জানতে পেরেছেন তিনি টিকা নিতে পারবেন না।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবারই বলা হয়েছিল- এসএমএস না পেয়ে অতি উৎসাহীরা যাতে টিকাকেন্দ্রে এসে ভিড় না করেন। ২৫ বছরের বেশি বয়সি যারা আগেই টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের মধ্যে থেকেই ৭৫ লাখ মানুষকে এদিন টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। সেজন্য তাদের মোবাইলে আগেই এসএমএস পাঠিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পেইনে শুধু প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হবে। একইভাবে আগামী মাসের একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হবে। টিকাদানের ক্ষেত্রে প্রথম ২ ঘণ্টা ৫০ বছরের বেশি বয়সি, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে এবার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীকে টিকা দেয়া হবে না। অন্যদিকে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীর বাইরে সারাদেশের টিকা ক্যাম্পেইন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৭টি, ৯টি উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নে ও ৪৫টি পৌরসভায় টিকাকেন্দ্র খোলা হয়েছিল। রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে তেমন লোকজন ভিড় করেননি। তবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক ভিড় হয়েছে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদ টিকাকেন্দ্রে রোকেয়া বেগম (৪০) নামের এক নারীকে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে করোনার দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। রোকেয়া বেগম জানান, সকাল ১০টায় তিনি কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে যান। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দুপুর ১২টার দিকে এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী তার বাম হাতে টিকা দেন। এর আধাঘণ্টা পর ওই স্বাস্থ্যকর্মী আবারো তাকে টিকা দেন। এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, ভিড়ের মধ্যে ভুলে হয়তো ওই নারীকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ওই নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার খানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সহকারী এনায়েত করিমকে (৩৫) লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে এ ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য সহকারী এনায়েত করিম জানান, চেয়ারম্যান তাকে মারধর করে শুধু লাঞ্ছিতই করেননি, সিরিঞ্জ দিয়ে পেট পুটো করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাকসুদাও জানান, এনায়েত করিমকে শত শত মানুষের সামনে মারধর করেছেন চেয়ারম্যান। তবে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার খান দাবি করেন, এনায়েত করিম তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি তাকে মারধর করেনি।
একদিনের এই বিশেষ ক্যাম্পেইনে ৮০ লাখ (নিয়মিত ৫ লাখসহ) মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সকাল ৯টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিশেষ এই ক্যাম্পেইনের টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত টিকাদানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (৭৫ লাখ) পূরণ না হবে ততক্ষণ টিকাদান কর্মসূচি চলবে। কোথাও যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয় তাহলে আগামীকালও (আজ বুধবার) এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিও চলবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রমুখ।
এদিকে গতকাল বনানীর কড়াইল বস্তিতে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এলাকার বস্তিবাসীর মাঝে পর্যায়ক্রমে ৫ লাখ করোনা টিকা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দুই দিনে (মঙ্গলবার ও বুধবার) ৫৪টি ওয়ার্ডের নির্ধারিত ৫৪টি কেন্দ্রে ১ হাজার করে মোট ৫৪ হাজার টিকা দেয়া হবে। এছাড়া এই দুই দিনে বস্তিতে দেয়া হবে ৫ হাজার টিকা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ৭ আগস্ট দেশব্যাপী গণটিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়। সে সময় ৫ দিনের জন্য চলে এ কার্যক্রম। তবে টিকার সংকটের কারণে সেই কার্যক্রম আর চালু রাখতে পারেনি সরকার। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, প্রত্যাশিত টিকা পেলে গণটিকা ক্যাম্পেইন নিয়ে ভাবা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়