অভিযুক্ত ইভ্যালির ১০ কর্মকর্তা : ডিজিটাল আইনে মামলার আবেদন খারিজ

আগের সংবাদ

উজানে খরা ভাটিতে দখল-দূষণ : বিশ্ব নদী দিবস আজ

পরের সংবাদ

মীরগড় আদর্শ পাঠাগারে জমজমাট জ্ঞানের আসর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : বেলা গড়িয়ে হয়েছে বিকাল। সব বয়সি শিক্ষিত মানুষ দল বেঁধে ছুটছেন গ্রামের পাঠাগারে। বৃদ্ধ কিংবা তরুণ-তরুণী পাঠাগারটির সব বয়সি সদস্য আলমারি থেকে নিজেদের পছন্দমতো বই হাতে নিয়ে মজেছেন বই পড়ায়। চারদিকে সুনসান নীরবতা। কেউ কাউকে বিরক্তও করছে না। সবাই আপন মনে বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করেছেন। অন্যরা যখন মোবাইলে ফেসবুকিং বা গেম খেলা কিংবা অযথা বাইরে বা বাজারে অলস সময় কাটাচ্ছেন, সে সময়ে পাঠাগারটির সদস্যরা ব্যস্ত বই পড়ায়।
মাদকাসক্তি কিংবা অপরাধমূলক কোনো কাজ ছুঁতে পারেনি পাঠাগারটির সদস্যদের। ভার্চুয়াল জগৎ পাঠাগারটির সদস্যদের ছুঁলেও যেন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ায়। এমনকি করোনাকালেও পাঠাগারের সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চালিয়ে গেছেন বই পড়া।
স্থানীয় কিছু উদ্যোগী এবং বইপ্রেমী যুবকের সহায়তায় ১৯৭২ সালে ১৬ শতক জমি দান করে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম আবুল কালাম আজাদ। প্রথমে বিভিন্ন লেখকের কিছু সংখ্যক বই নিয়ে খড়ের ঘরে ছোট একটি কক্ষে শুরু হয় পাঠাগারের কার্যক্রম। এর পরে স্থানীয়দের সহায়তা আর শ্রমের বিনিময়ে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ পাঠাগারে রূপান্তর হয়। ১৯৮৬ সালে নিবন্ধন পায় পাঠাগারটি। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৭৬৭ জন। পাঠাগারটিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, গল্প, উপন্যাস, রম্য রচনা, বিজ্ঞানভিত্তিক বই, অনুসন্ধানীমূলক বই, গবেষণাধর্মী বই ও ধর্মীয় বইসহ মোট বইয়ের সংখ্যা ১৪শর অধিক।
পাঠাগারটিতে থাকা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শিশু বিশ্বকোষ, মুসলিম কীর্তি, কুরআন-হাদিসভিত্তিক অসংখ্য বই। পাঠাগারটির সদস্যদের প্রত্যেক্ষ এবং পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বিবার্ষিক কমিটি গঠিত হয়। মেয়াদ শেষ হলেই শুরু হয় নির্বাচন। অন্যান্য নির্বাচনের মতোই চলে ভোটের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম। সব বয়সি প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগও পান। প্রচারণা, মিছিল, মিটিং সবই হয় এই পাঠাগারের নির্বাচনে। আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট শেষে কমিটি গঠন হয়। নির্বাচনকে ঘিরে পাঠাগারটির সদস্যদের মধ্যে যেন মিলনমেলার তৈরি হয়।
মীরগড় ময়েনউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুনা আফরিন শান্তা বলে, আমার বাবা-চাচারা এই পাঠাগারে এসে বই পড়তেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও পাঠাগারে বই পড়ি। ফোনে যে মজাটা পাই, তার থেকে বই পড়ে বেশি মজা পাই। আল মামুন রাফি নামে পাঠাগারটির কলেজছাত্র বলেন, আমাদের বর্তমান যুবসমাজ মোবাইল ফোনে আসক্ত হলেও এই পাঠাগারটিতে যারা পড়তে আসেন তারা এ থেকে অনেকটা দূরে থাকেন। তারা এই পাঠাগারের মাধ্যমে নিজেদের পড়ালেখা, খেলাধুলা, জ্ঞান চর্চার ধারাকে অব্যাহত রাখেন। আমিসহ আমার বন্ধুরা এখানে এসে বই পড়ি। একাডেমিক বইয়ের বাইরে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে নিজেদের জ্ঞানের পরিধিকে বিকশিত করি।
পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তৎকালীন আমি কামরুল ইসলাম, নওশেদ আলীসহ অনেক তরুণ মিলে আবুল কালামের সহযোগিতায় অল্পসংখ্যক বই নিয়ে ১৬ শতক জমির ওপর পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করি। সে সময়ে বাঁশ-কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি করে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। বর্তমানে পাঠাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। নিত্যনতুন বইয়ের সংযোজন হয়েছে। এই পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, গল্প, উপন্যাস, রম্য রচনা, ধর্মীয় বইসহ ১৪শর অধিক বই আছে। আমার বয়স এখন ষাটের কাছাকাছি। আমরা তো আর বাইরে কোথাও আড্ডা দিতে পারি না। তাই এই পাঠাগারে এসে বই পড়ি, সবার সঙ্গে সবাই কুশল বিনিময় করি। এতে করে আমাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরো বাড়ে। আমরা আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করি। পাঠাগারটির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জালাল উদ্দীন জানান, মীরগড় আদর্শ পাঠাগার জাতীয় দিবস পালন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই পাঠাগারের পরিধি এবং বইয়ের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা যেত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়