পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু বিনির্মাণের নেপথ্য স্থপতি

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ ৮ আগস্ট বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের নেপথ্য স্থপতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য প্রণয়িনী ‘রেণু’র ৯১তম জন্মদিন। ১৯৩০ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজ এই মহীয়সী নারীর জন্মদিন, কিন্তু আমাদের মনে উদযাপনের আনন্দোচ্ছ¡াস নেই। আছে বেদনাক্লিষ্ট মর্মযাতনার হাহাকার।
আগস্ট মাস সম্পর্কে ১৯৭৫-পূর্বকার অনুভব-উপলব্ধির কথা মনে নেই। তবে শৈশব হতেই বুঝতে শিখেছি ১৯৭৫ সাল থেকে আগস্ট বেদনার অশ্রæজলে ভাসা এক মাসের নাম। আগস্টে সুখের সব উদযাপন বিমর্ষ বেদনায় মøান হয়ে যায়! আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ আনন্দের দিনগুলোর উদযাপনও অসম্ভব ঠেকে। আনন্দের সব অনুষ্ঠান ঘন মেঘে ছাওয়া শ্রাবণ আকাশের মতো বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়! বৃষ্টির মতোই ঝরে পড়ে বেদনার অবিরল অশ্রæধারা। এ মাসে নিষ্ঠুর ঘাতকের কাছে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হওয়ায় বঙ্গমাতার জন্মদিনের আনন্দের চেয়ে সেদিনের সবার নিষ্ঠুর মৃত্যু আমাদেরকে সঘন আবেগে আপ্লুত করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে জন্মদিনের আনন্দ ও উচ্ছ¡াস আমাদেরকে অধীর করে না। বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সব সদস্যের নির্মম মৃত্যুর স্মৃতি বঙ্গমাতার জন্মদিনেও আমাদেরকে শোকগ্রস্ত করে। আমরা বেশি কাতর হই কেননা, ফজিলাতুন্নেছাই পর্দার অন্তরাল থেকে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে বিনির্মিাণ করেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুও বাংলাদেশকে বিনির্মাণের প্রয়াস পেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতেও পেরেছিলেন! এজন্য আমরা বলি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্থপতি আর বঙ্গমাতা ‘বঙ্গবন্ধু’ বিনির্মাণের স্থপতি! অর্থাৎ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নেপথ্য স্থপতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গমাতার জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয়তমা পতœী রেণু, বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চার দশকেরও বেশি সময়ের সভাপতি, দেশরতœ, জননেত্রী শেখ হাসিনার মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। মাতৃ-পিতৃহীন রেণু পারিবারিকভাবে চাচাতো ভাই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ৮ বছর বয়সে ১৯৩৮ সালে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৪২ সাল থেকে তার সাংসারিক জীবনে প্রবেশ। আমরা উপলব্ধি করি ফজিলাতুন্নেছা যেন শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘জাতির পিতা’ হিসেবে বিনির্মাণের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। এর প্রমাণ পাই বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র শুরুতেই। বঙ্গবন্ধু বইটির শুরু করেছেন : ‘বন্ধুবান্ধবেরা বলে, তোমার জীবনী লেখ। সহকর্মীরা বলে, রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলো লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী। [পৃ.১]’ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ‘বঙ্গবন্ধুু’কে বিনির্মাণে বঙ্গমাতার ভূমিকা আমরা টের পাই। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা শেখ মুজিব অবিসংবাদিত নেতার আসন লাভ করলেও তার ছাত্র বা রাজনৈতিক জীবনে অর্থের প্রাচুর্য ছিল না। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র বিভিন্ন পাতায় অনেকবার বঙ্গবন্ধু তার প্রয়োজনীয় টাকার কথা উল্লেখ করেছেন! আবার, ‘রেণু’ পাশে থাকায় তিনি ভরসাও পেয়েছেন।
সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের নানাবিধ টানাপড়েনের মধ্যে থেকেও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চলার পথ কণ্টকিত করেননি। আটপৌরে জীবনের চাহিদা ও অযাচিত অভিমান নিয়ে দরজা আগলিয়ে দাঁড়াননি কোনো দিন। বরং মধ্যবিত্তের গুণনিপুণ গৃহিণীর স্বভাবসুলভ সহজাত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বামীর চলার পথকে সর্বদা মসৃণ করেছেন। বঙ্গমাতার মতো আদর্শ স্ত্রী পেয়েছিলেন বলে বঙ্গবন্ধুকে সংসারের ছোটখাটো বিষয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি, উদ্বিগ্নও হতে হয়নি! ফলে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বচ্ছন্দ ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবনার অবকাশ পেয়েছিলেন।
অবকাশ পেয়েছিলেন ন্যায়সঙ্গত সব দাবি পূরণের মধ্য দিয়ে কীভাবে পৃথিবীর বুকে আত্মসম্মান ও মর্যাদাসহ বাঙালি জাতি আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারে সে বিষয়ে গভীর ও নিবিড় পরিকল্পনা উদ্ভাবনেও। তাই বঙ্গবন্ধু সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত পন্থায় রাজনৈতিকভাবে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৌশলটিও আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের বুকে অনন্য এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আবার এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুকে কেবল বাইরের বিশ্বের আহ্বানে সাড়া দানেই উদ্বুদ্ধ করেননি অন্তর্গঠনেও তাৎপর্যমণ্ডিত ভূমিকা রেখেছেন। শারীরিক সুস্থতার বিষয়েও বঙ্গবন্ধুকে তিনিই সচেতন করে দিয়েছেন। এ রকম একটি ঘটনার প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি জেলখানা থেকে কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময়। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন : ‘এক মাসে শরীর আমার একদম ভেঙে গিয়েছে। চোখের অবস্থা খারাপ। পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। বুকে ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেছি। রেণু আমাকে সাবধান করে বলল, ‘ভুলে যেও না, তুমি হার্টের অসুখে ভুগেছিলে এবং চক্ষু অপারেশন হয়েছিল। [পৃ.১৮৫]’
বাঙালির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্ভয় এবং নির্ভার পথচলাকে সহজতর করে দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। সংসার সামলানোসহ ছেলেমেয়েদের মানুষ করার দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য যে, বঙ্গমাতা একটি পরিবারকে যেমন পরিপাটি যতেœর সঙ্গে আগলে রেখেছিলেন তেমনি বঙ্গবন্ধুও আগলে রেখেছিলেন বাংলাদেশকে। সগর্বে এবং সর্বদা এ কথা প্রচার করে আমরাও আত্মগৌরব অনুভব করি যে, বঙ্গবন্ধু যেমন তিল তিল করে বাঙালির জন্য বাংলাদেশটিকে বিনির্মাণ করেছিলেন তেমনি তিনি তিল তিল করে বিনির্মিত হয়ে উঠেছিলেন প্রিয়তমা পতœী রেণুর সাহচর্য, সহমর্মিতা এবং অন্তর্গত ঔদার্যময় সহনশীলতায়। বঙ্গবন্ধুর লেখা থেকে এ বিষয়েও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন : ‘কয়েক মাস পূর্বে আমার বড় ছেলে কামালের জন্ম হয়েছে, ভালো করে দেখতেও পারি নাই ওকে। হাচিনা তো আমাকে পেলে ছাড়তেই চায় না। অনুভব করতে লাগলাম যে, আমি ছেলেমেয়ের পিতা হয়েছি। আমার আব্বা ও মাকে দেখতে মন চাইছে। তাঁরা জানেন, লাহোর থেকে ফিরে নিশ্চয়ই একবার বাড়িতে আসব। রেণু তো নিশ্চয়ই পথ চেয়ে বসে আছে। সে তো নীরবে সব কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরো বেশি ব্যথা লাগে। [পৃ.১৪৬]’
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র একস্থানে বঙ্গবন্ধু লিখছেন : ‘লাহোর থেকে রেণুকে চিঠি দিয়েছিলাম, বোধহয় পেয়ে থাকবে। বাড়ির সকলেই আমার জন্য ব্যস্ত। ঢাকায়ও যাওয়া দরকার, সহকর্মীদের সাথে আলাপ করতে হবে। আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর যেন কাজ বন্ধ না হয়। [পৃ.১৪৫]’ তাঁর এ কথা থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম নেয়া যাবে না। এই বার্তা সহকর্মীদের মধ্যে সঞ্চারের আকুতি আমরা তার বক্তব্যে বুঝতে পারি। এই কর্মীদের প্রতিও বঙ্গমাতার মমতার কথা বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন এভাবে : ‘শীতের দিন ওরা এক কাপড়ে এসেছিল। রেণু নিজের গায়ের চাদর ওদের দিয়েছিল।’ এমন মহীয়সী নারীর নামের পাশেই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধি যথার্থ। কবির ভাষায় আমাদেরও সতত উচ্চারণ : ‘প্রণমিহি বঙ্গমাতা!’
আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়