৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

রিটার্ন জমা দেননি অর্ধেকের বেশি টিআইএনধারী

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে নিবন্ধিত ৫৬ লাখ করদাতার মধ্যে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৫ জন করদাতা আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) দাখিল করেননি। শতাংশের হিসাবে যা ৫৬.৬০ শতাংশ। যদিও ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ২৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৪৫ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এনবিআরের তথ্যানুসারে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৫ জন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, রিটার্ন দাখিলে আইনের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও বিশাল পরিমাণের করদাতা গত অর্থবছরে কেন তাদের আয়কর বিবরণী দাখিল করেননি, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামছে এনবিআর। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এনবিআরের আয়কর বিভাগের আওতায় দেশের সব কর অঞ্চল থেকে কর শনাক্ত নম্বরধারী (টিআইএন) ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিস ইস্যু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন করদাতাকে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়। সে বিষয়ে করদাতাদের সচেতন করতে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে আয়কর মেলাসহ বিভিন্ন প্রচারণামূলক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে এনবিআর। যদিও গত বছর করোনা মহামারির কারণে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। চলতি বছরেও হয়তো মেলা হবে না।
তবে অনলাইন সেবাসহ বিশেষ ব্যবস্থায় কর অঞ্চলগুলোতে সারা বছরই করসেবা অব্যাহত রয়েছে। তারপরও আয়কর রিটার্ন দাখিল কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বাড়েনি। সেজন্য রিটার্ন দাখিল না করা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে নোটিস দেয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি ভাবছে এনবিআর। এছাড়া আগামীতে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতিকে আরো সহজ করা হচ্ছে।
প্রথমপর্যায়ে এনবিআরের লক্ষ্য থাকবে ব্যবসায়ী হিসেবে যারা টিআইএন নিয়েছেন কিন্তু নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করছেন না তাদের এর আওতায় আনা। সাধারণত অধিকাংশ চাকরিজীবী রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। কারণ তাদের বেতনের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন দাখিলের একটি অফিসিয়াল সম্পর্ক রয়েছে।
এছাড়া মোটরযান, নৌযানসহ সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে করোনা মহামারির কারণে এ ধরনের কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তারপরও সীমিত জনবল দিয়ে যতটুকু করা সম্ভব এনবিআর করবে। কারণ করের আওতা বাড়ানো দরকার।
আইন অনুযায়ী, কোনো করদাতা আয়কর অধ্যাদেশ ৭৫ ধারা অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে তার ওপর আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং ৭৩(এ) ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে। আবার করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করে উপকর কমিশনার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে করদাতার ওপর জরিমানা আরোপিত হবে না। তবে অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে।
অন্যদিকে টানা কয়েক বছর ধরে যদি কেউ রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে ওই জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে।
তবে তা যতদিনই হোক না কেন নতুন করদাতা হলে সব মিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না। আর পুরনো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে সেটিসহ ওই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দিতে হবে।
এদিকে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুন-জুলাই) রেকর্ড ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও আয়কর বিভাগে প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এর মধ্যে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে প্রতিষ্ঠানটির আদায় যথাক্রমে ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি, ৯৭ হাজার ৫০৯ কোটি এবং প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে রাজস্ব আদায়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরের পুরো সময় করোনা মহামারির মধ্য দিয়ে পার করেছি। তারপরও কর-সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা অব্যাহত রাখতে আমাদের কর অফিসগুলো খোলা রাখা হয়েছে। সে কারণেই আমাদের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ও রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয়তো বাড়েনি। টিআইএন নেয়ার পরও যারা রিটার্ন দাখিল করেননি তাদের বিষয়ে আইনেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এনবিআর আইন অনুসারেই ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাহমাতুল মুনিম রাজস্ববিষয়ক বিভিন্ন সভায় বলেছেন, রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই। আর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ারও কোনো কারণ নেই। আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে সবাইকে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর তথা সরকারকে সবার আগে কর ফাঁকি বন্ধের ওপর বিশেষ নজর দেয়া উচিত। আর করের আওতা বাড়ানো এবং সব টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করতে এনবিআরকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাহলে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়