৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

বিয়ের বালাই নেই চীনের মসুও সমাজে : নারীরাই সে রাজ্যের সর্বেসর্বা

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : চীনের এই সমাজে নারীরাই রাজা। পুরুষের কাজ শুধু শয্যাসঙ্গী হওয়া। দক্ষিণ পশ্চিম চীনে হিমালয়ের কোলে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক এক সম্প্রদায়ের নাম মসুও। এলাকাটি নারী শাসিত এক অভিনব সা¤্রাজ্য। চীনের উনান প্রদেশে পাহাড়ের কোলে মসুও সমাজে নারীরাই সর্বেসর্বা। সেখানে পুরুষরা গৌণ। কেবল সন্তান উৎপাদনের কাজেই ভূমিকা রাখে পুরুষ সদস্যরা। এর বাইরে পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিরুৎসাহিত করা হয় এ সমাজে।
সিঙ্গাপুরের শীর্ষ আইনজীবী চু ওয়াই হং জানান, ২০০৬ সালে শহুরে জীবন থেকে আগাম অবসর নিয়ে তার পূর্বপুরুষের দেশ চীনে বেড়াতে যান। সেখানে হঠাৎই তিনি দেখা পান পাহাড়ের বাসিন্দা এই বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ের। তিনি জানান, নারীরা সেখানে দারুণ ক্ষমতাশালী। আপনি সেখানে গেলে দেখবেন এই সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যে কী প্রবল আত্মবিশ্বাস- সেটা কিন্তু তাদের সহজাত। আমাদের নারীদের মধ্যে এটা সচরাচর দেখা যায় না। এরা কিন্তু সেই অর্থে শিক্ষিত নয়। অধিকাংশই কৃষক, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে যেন টগবগ করছে! পাহাড়ের ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় অপূর্ব সুন্দর এক হ্রদ। তার নাম লুগু লেক। চারপাশে চমৎকার ঝাউবন। পাহাড়ে ঘেরা চোখ জুড়ানো দারুণ এলাকা।
চু ওয়াই যখন লুগু লেকে যান, তখনো সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় ছিলই না। বাইরের মানুষের প্রভাবও তেমন পড়েনি। তিনি তখনো ভাবেননি যে সেখানেই তিনি ভবিষ্যতে তার ঘর বাঁধবেন। মসুও একটি ছোট প্রাচীন সম্প্রদায়। সংখ্যায় ৪০ হাজারের মতো। মূলত স্বনির্ভর জাতিগোষ্ঠী। ওয়াই হং যেদিন সেখানে গেলেন, সেদিন মসুও নারীরা তাদের প্রথাগত উজ্জ্বল সাজপোশাক পরে তাদের পাহাড়ের দেবীর উৎসব উদযাপন করছিলেন। হং বলেন, তারা খুব মজা করে নাচগান করছিল। আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করছিল। আর পর্বতের দেবীর সামনে ধূপ জ্বালাতে সবাই পাহাড় ভেঙে উপরে উঠছিল। পাহাড়ের মাথায় তাদের দেবী গামুর মন্দির। তাদের বিশ্বাস এই দেবীই তাদের রক্ষাকর্ত্রী। এই দেবী নাচগান ভালোবাসেন। মদ্যপান ও বহুগামিতা তার খুব পছন্দ। তাই এই দেবীকেই তারা অনুসরণ করে। মসুও নারীরা বলেন, দেবীর মতো আমাদের জীবনেও আমরা একাধিক পুরুষসঙ্গী চাই। আমরা একজনের সঙ্গে আটকে থাকতে চাই না।
মসুওদের জীবন নিয়ে হং একটি বই লিখেছেন ‘কিংডম অব উইমেন’ নামে। মসুওদের ভাষাও শিখেছেন, তাদের সঙ্গে বসবাস করেছেন। প্রথাগতভাবে মসুওরা মাতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ তাদের বংশপরম্পরা মায়ের দিক থেকে তাদের সমাজে মাতামহী বা প্রমাতামহী সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। মেয়েরাই মায়েদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। মসুও পরিবারের কন্যারাই ভাই বা ছেলেদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ছেলেরা কখনো বাসা ছেড়ে বাইরে যায় না; বোনের পরিবারেই থাকে। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে পরিবারের মাথা কে হবে, সেটা বয়সের ওপর নির্ভর করে না। পরিবারে যে কন্যাসন্তান সবচেয়ে বুদ্ধিমতী ও পরিশ্রমী সে-ই পরিবারের মাথা হয়। অন্যদিকে মসুওদের লোক সংস্কৃতির বিশ্বাস, পুরুষের ভূমিকা হলো শুধু সন্তান উৎপাদনে সাহায্য করা। তাদের ব্যাখ্যায়, নারীর শরীরে নতুন জীবনের যে বীজ সুপ্ত আছে, পুরুষ তাকে অঙ্কুরিত করবে। সেই বীজে যখন প্রাণের সঞ্চার হবে, তখন থেকেই সেই শিশুর মালিক তার গর্ভধারিণী মা।
ওয়াই হং জানান, বাবার ওই শিশুতে কোনো অধিকার নেই। সে শুধু বীজে পানি দিয়ে তাকে অঙ্কুরিত করেছে। এটুকুই তার অবদান। শিশুর জীবনে বাবার আর কোনো ভূমিকাই থাকে না। শিশুরা বাবার চেয়ে বেশি চেনে মামাকে বা মায়ের বংশের পুরুষদের। বিয়ে বলে তাদের সমাজে কিছু নেই। নারী আর পুরুষের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কেও তারা বিশ্বাস করে না। মসুও সমাজে একজন পুরুষ কোনো নারীকে বলে, আজ রাতে আমি তোমার সঙ্গে কাটাব। পুরুষ এসে রাতে তার পছন্দের নারীর দরজায় পাথর দিয়ে টোকা দেয়। তার ঘরে রাত কাটায়। কিন্তু ওই পুরুষকে সূর্য ওঠার আগেই ঘর থেকে চলে যেতে হয়। মসুওরা এটাকে বলে ‘পথচলতি বিয়ে’। তারা কখনই এ বিয়েকে স্থায়ী সম্পর্ক হিসেবে দেখে না; প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না।
তাই বলে মসুও নারীরা কিন্তু পুরুষদের কখনই হেয় করেন না। হংয়ের ভাষায়, পুরুষপ্রধান দুনিয়ায় পুরুষরা নারীদের প্রতি যেভাবে আচরণ করে, তাদের যে চোখে দেখে, মসুও সমাজ নারীপ্রধান হলেও নারীরা কিন্তু পুরুষদের একইভাবে দেখেন না। তারা পুরুষের ওপর প্রভুত্ব করেন না। পুরুষদের গালমন্দ করেন না। তাদের প্রতি মসুও নারীরা খুবই মমতাশীল। পুরুষরাও সেই সমাজে কখনো নিজেদের অধস্তন বা অবদমিত বলে মনে করে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়