৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

দুই বছরে ৬৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়মিত

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের বড় একটি অংশ ফেরত আসছে না। যে কারণে খেলাপি ঋণ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে। এজন্য ২০১৯ সালের মে মাসে ঋণ খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০২০ সালে ১৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত বা পুনঃতফসিল করেন খেলাপিরা। আর ২০১৯ সালে নিয়মিত করা হয় ৫২ হাজার ৭৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ঋণ। সে হিসেবে মোট ২ বছরে ৬৬ হাজার ২৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের মতে, খেলাপি ঋণ আদায় না করতে পারা ব্যাংকের জন্য বড় দুর্বলতা। তিনি বলেন, আসলে ব্যাংকগুলো হয়তো ঋণ আদায়ের চেষ্টা করে না। অথবা তারা ভালো গ্রাহককে ঋণ দেয় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও যথাযথ ভূমিকা নেয় না।
জানা গেছে, সম্ভাব্য খেলাপি হওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং খেলাপি হওয়ার পর তা নিয়মিত করতে পুনঃতফসিল করেন ঋণগ্রহীতারা। পুনঃতফসিল করতে নির্ধারিত হারে নগদ ডাউন-পেমেন্ট দেয়ার নিয়ম রয়েছে। ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ঋণখেলাপিরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। ঋণের অবস্থা, পরিশোধের ধরনসহ নানা বিষয় যাচাই-বাছাই করে এটি পুনঃতফসিলের যোগ্য কি না, তা সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক পর্ষদ। এরপর অনুমোদনের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঋণ পুনঃতফসিল বা মওকুফ সুবিধা দেয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো। তবে সুবিধা দিয়েও খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। ফলে রাষ্ট্রীয় বেশির ভাগ ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এদিকে দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধ করে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ যারা নিয়েছিলেন, তাদেরও মহামারিকালের বিশেষ সুবিধার আওতায় সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৯ সালে যেসব ঋণখেলাপি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপিঋণ পরিশোধের সুযোগ নিয়েছিলেন, তারাও ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তি না দিলে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হননি। পরে সেই সুবিধা করা হয় জুন পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন সার্কুলারে জানায়, ঋণের কিস্তির ২০ শতাংশ পরিশোধ করলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কাউকে খেলাপি ঘোষণা করা হবে না।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত। ফলে ঋণের সুযোগ-সুবিধা তারাই নিচ্ছে বেশি। বেসিকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে সেটা দেখা গেছে। এখানে সরকারের ইচ্ছাকৃত দুর্বলতা আছে। সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও এ সুযোগ নিচ্ছেন। তারা মনে করেন, আমরা কেন বাদ যাব? ব্যবসায়ীরাও এটার সুযোগ নিচ্ছেন।
মোট ঋণ পুনঃতফসিল : রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ২০২০ সালে ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ২ হাজার ৬৭৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৫০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিতকরণ করেছে। আর সরকারি বিশেষায়িত কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক করেছে ২৭৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর বিদেশি মালিকানার ৯ ব্যাংক ঋণ নিয়মিত করেছে ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল হয়েছে ১০ হাজার ৯৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঋণ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৩১ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিতকরণ করেছে। আর সরকারি বিশেষায়িত তিন ব্যাংক করেছে ৫ হাজার ৯৬৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর বিদেশি মালিকানার ৯ ব্যাংক ঋণ নিয়মিত করেছে ৪ হাজার ৬০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
ঋণের সুদ মওকুফ : ২০২০ সালে ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে মওকুফ করা হয় ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৭ লাখ টাকার সুদ। ২০২০ সালে সরকারি ৬ ব্যাংক ৬৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করেছে।
একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংক ৩৬১ কোটি ১১ লাখ টাকা ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করেছে।
২০১৯ সালে সরকারি ব্যাংকগুলো মওকুফ করেছে ৭০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫০৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংক ২২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ৩৩৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়