৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

চিত্রনায়িকা পরীমনি গ্রেপ্তার : বাসায় এলএসডি ও আইসসহ বিদেশি মদ >> ফেসবুক লাইভ করেও হয়নি শেষরক্ষা

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তার বাসা থেকে এলএসডি, আইসসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদও উদ্ধার করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার বিকাল থেকে বনানীর বাসায় প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযানের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে হেফাজতে নেয়া হয়।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। অন্যদিকে অভিযানে অংশ নেয়া র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, পরীমনির বাসা তল্লাশিকালে ক্যাবিনেট থেকে বিদেশি মদ, লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি) এবং আইস উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তার ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুল সংখ্যক মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পরীমনির বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মদ নেই। তার কাছে দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়।
অভিযান চলাকালে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পরীমনির বাসার নিচে র‌্যাব-১ এর একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িও ছিল। বাসার আশপাশে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন। মূল গেটের সামনেও কয়েকজন র‌্যাব সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরই মধ্যে তার বাসায় একে একে তিন থেকে চারজন র‌্যাবের নারী সদস্য প্রবেশ করেন। এরপর পরীমনিকে আটকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে অভিযান শুরুর পরপরই বাসার ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ফেসবুকে লাইভে আসেন পরীমনি। লাইভে তিনি বলেন, দিনদুপুরে কে বা কারা তার বাসায় আক্রমণ করেছে। তিনি থানা-পুলিশ, ডিবির কর্মকর্তা ও পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান। বারবার র‌্যাব সদস্যরা তাদের পরিচয় দিলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না তিনি। পরে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে দরজা খুলে দেয়া হলে র‌্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢোকেন। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। একপর্যায়ে পরীমণিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন,

বোটক্লাব কাণ্ডের পর থেকে র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে আসছিল। পরীমনির লাইফ স্টাইল নিয়েও তারা খোঁজখবর করছিল। মদ্যপানে অভ্যস্ত এই চিত্রনায়িকার বাসায় বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের স্তূপ রয়েছে, এমন অভিযোগ ও ক্লু পায় র‌্যাব। বাসার একাধিক পার্টির প্রমাণও পায় তারা। মদ পানের লাইসেন্স ও পারমিটের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হয়। সবকিছু নিশ্চিত হয়েই বুধবার অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একটি সূত্রের দাবি, হেলেনা জাহাঙ্গীর, পিয়াসা ও মৌ আটকের পর হাইপ্রোফাইল অনেকের ব্যাপারে র‌্যাব তথ্য পেয়েছে। ধনাঢ্যদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আয়ের সঙ্গে জড়িত মিডিয়া-ঘনিষ্ঠ অনেকের তালিকা এখন র‌্যাবের হাতে।
অন্যদিকে সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই। রাতবিরাতে ক্লাব, রিসোর্ট ও তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়ানো এবং মদ্যপান করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য তিনি সমালোচিত। শুটিংয়ে গিয়েও তিনি নিখোঁজ হতেন, পরিচালকদের ভোগাতেন। একাধিক বিয়ে এবং ডিভোর্সের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সিনেমা হিট না হলেও তার বিলাসী জীবন, ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ সাভারের বোটক্লাবে মদ্যপান করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই ঘটনায় তার দায়েরকৃত মামলায় একজন ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হন। এর আগে গুলশানের অলকমিউনিটি ক্লাবে ড্রেসকোড ভেঙে প্রবেশ করে সমালোচিত হন পরীমনি। অভিনয়ে যতটা না তিনি নাম করেছেন, তার চেয়ে অপকর্মের কারণে বেশি হয়েছেন সমালোচিত।
জানা গেছে, পরীমনির স্কুল জীবন কেটেছে সাভারে। তিনি সাভার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী। ছাত্রী অবস্থায় দুটি বিয়ে করে এবং ডিভোর্স দিয়ে সাভার ছাড়েন । এর আগে কলেজ শিক্ষককে বিয়ে করে ব্যাপক সমালোচিত হন। সাভার রাজাবাড়ি মহল্লায় থাকাকালীন থানা বাসস্ট্যান্ডে রাত্রী বিউটি পার্লারে তিনি কাজও শিখতেন। পরে রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় থাকেন।
হঠাৎ করে তারকা বনে যাওয়া পরীমনি বোট ক্লাবের ঘটনা প্রসঙ্গে দাবি করেন, ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার ওই ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনিকে পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়ের গøাস চেপে ধরেন এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান। এ সময় মারধর করা হয় পরীমনির সঙ্গে থাকা জিমিকেও। এ ঘটনায় পরীমনি নাসির উদ্দিন আহমেদ নামে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে দায়ী করেন। ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন পরীমনি। তিনি অভিযোগ করেন, সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তার অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েন পরীমনি। তবে দুদিন পরই ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ভিডিও পোস্ট করেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। যার জেরে গ্রেপ্তার হন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অমিসহ আরো কয়েকজন।
তবে ওই ঘটনার পর পরীমনির কান্না এবং ঢং দেখে অনেকে বিস্মিত হন। ওই মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে পরীমনির জিঘাংসার কথা। এরপর তার বনানীর বাসায় মিনিবারের ছবি ও খবর ফাঁস হয়। র‌্যাবের কাছেও এমন অভিযোগ জমা পড়ে। এ বিষয়ে ছায়া তদন্তের পর গতকাল দুপুর থেকে র‌্যাব তার বাসার সামনে টহল জোরদার করে। বিকালে শুরু হয় অভিযান।
এদিকে গ্রেপ্তারের খবর চাউর হওয়ার পরই পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। বোটক্লাবের ঘটনায় এ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলা করেছিলেন হালের এ নায়িকা। গতকাল বুধবার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মিথ্যা অপবাদ, সম্মানহানি ও পারিবারিকভাবে অপদস্থ করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরীমনির বিরুদ্ধে আমি মামলা করার জন্য প্রস্তুত। তবে কখন করব, সে ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা দায়ের করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়