৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাধা : দেয়া হয়নি গার্ড অব অনার

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছেন তার গ্রামের বাসিন্দারা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেয়া ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। অবশেষে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’র সদস্যরা তার গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ গত ৩০ জুলাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার গেজেট নং ৫০৮৩, লাল বই নং ০২০৩০৪১২০৯। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর স্ত্রী লুৎফুন নাহার (৬৫) ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যও বর্তমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে চট্টগ্রাম থেকে মরদেহ দাফন-কাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজন ও গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরে তারা মিরসরাই সদর ইউনিয়নের শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে বাবার মরদেহ নিয়ে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। বুধবার সকালে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে গোসল শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যান। নেয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমামও জানাজা দেয়ার জন্য আসেননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের লোকজন লাশের গোসল করানো, কবরের মাটি খোঁড়া ও দাফন করতে পারবে না বলে জানায়। আমাদের বাড়ির গালিব নামে একজন প্রবেশমুখে বাঁশ পুঁতে দেয় যাতে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। বিষয়টি ১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নকে জানালে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর মাধ্যমে লাশ পরিবহন ও গোসলের ব্যবস্থা করেন। লাশ বাড়িতে নেয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমাম জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতি জানালে শেষ বিদায়ের বন্ধু করেরহাট ইউনিয়ন টিম লিডার মাওলানা ইসমাঈল নামাজে ইমামতি করেন।
তিনি আরো বলেন, আমি বুধবার সকাল ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় যাই বাবার মৃত্যুর খবরটি দেয়ার জন্য। তিনি ঘুমে থাকায় দেখা করতে পারিনি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে এসেছি। পরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদকে মোবাইলে বাবার মৃত্যু ও জানাজার সময় সকাল ৯টায় নির্ধারণের বিষয়টি জানাই। তিনি গার্ড অব অনারের বিষয়ে ইউএনওকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।
করেরহাট ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আবছার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজেও অসুস্থ হওয়ায় জানাজায় যেতে পারিনি। তার বাড়ি ও গ্রামবাসীর বিরোধিতার কারণে পরিবারের লোকজন তাড়াহুড়া করে দাফন করে চলে গেছে বলে শুনেছি।
শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সমন্বয়ক (সেবা) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, করোনায় আক্রান্ত্র হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর দাফন কাফনে এলাকাবাসী বাধা দেয়। পরবর্তীতে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও তার ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সদস্যরা, যেখানে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের ক্বারি নোমান, ইসমাঈল বিন মোজাম্মেল, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মাওলানা মাহমুদ হোসেন, মো. নুরুল আবছার, মো. এরাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় তার বাড়ির লোকজন বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ী গালিব উল্লাহ লাশ দাফনে বাধা দেয়। পরবর্তীতে আমি, ইউপি সদস্য মো. শহীদ ও নাসিম উদ্দিন রুবেল কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা করি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য সকাল ১০টা সময় নির্ধারণ করা হয়। উনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি করে সকাল ৯টায় দাফন করে শহরে চলে যায়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসী বাধা দেয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি, এটি জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়