জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী : কেউ গৃহহীন থাকবে না

পরের সংবাদ

বাম বিদ্রোহীদের উত্থানের সদ্ব্যবহার করে ঘাতকচক্র

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : মুজিব হত্যাকাণ্ডের রসদ জুগিয়েছে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ। সদ্য স্বাধীন দেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান, একাত্তরের পরাজিত শক্তিদের গোপন ঐক্যবদ্ধ শক্তি, উগ্র বামপন্থি দলগুলোর একদিকে গোপনে সশস্ত্র দল, স্কোয়াড গঠন, অন্যদিকে থানা, ব্যাংক লুট, খুন, হত্যা, রাহাজানির মতো ঘটনা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রকারীরা। টার্গেট পূরণ করে খুনিরা। সাকসেসফুল মিশন শেষে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেয়া হয় মৌলবাদী ভাবধারায়।
বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের মধ্যে উদীয়মান বামপন্থি শক্তি মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সদ্য স্বাধীন দেশের পরিচালনা নিয়ে একটি মতাদর্শগত দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা গণতন্ত্রকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খানের অনুসারী আ স ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ এর বিরোধিতা করে। পরে ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নামক আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে, যার লক্ষ্য ছিল সমাজতন্ত্রের একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করা, যেটিকে তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র হিসেবে অভিহিত করতেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাসদের উদ্যোগে প্রতিটি সেনানিবাসে অত্যন্ত গোপনে গঠিত হয় ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’। এর ফলে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা চরমভাবে বিনষ্ট নয়। কর্নেল আবু তাহেরের জাসদের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী সরকারের সমর্থক, আওয়ামী লীগের সদস্য ও পুলিশদের হত্যার মাধ্যমে অভ্যুত্থানে লিপ্ত হয়। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলায় সম্পূর্ণ ভাঙন ধরে এবং মুজিব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে দেয়। অন্যদিকে মুসলিম লীগ পাকিস্তানপন্থি হিসেবে, চীনপন্থিরা ভারতবিরোধী হিসেবে, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না বলে তারা সবাই কোনো একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। এ অবস্থায় সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব

ও শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে জাসদ গঠিত হলে অনেকেই এর ছায়াতলে আশ্রয় নেন। জাসদ হয়ে দাঁড়ায় মুজিব সরকারবিরোধীদের আশ্রয়স্থল।
এদিকে চীনপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতীয় দুশমন’ আখ্যা দিয়ে তাকে ‘খতম’ করার ঘোষণা দেয়। চীনপন্থি সিরাজ সিকদার, হক, তোয়াহা, মতিন, দেবেন শিকদার, শান্তি সেন, অমল সেনদের চীনপন্থি গ্রুপগুলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করে। মাওলানা ভাসানী মুজিব সরকারকে উৎখাত করে ‘নতুন পতাকা উড়াবার’ হুমকি দেন। প্রকাশ্য জনসভায় তিনি হুঙ্কার দেন, আমি এদেশে বিপ্লব ঘটাব।
এ ব্যাপারে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, বামপন্থি কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতায় উঠেপড়ে লেগেছিল- হক, তোয়াহা, সিরাজ সিকদার, নকশালরা। রাজশাহী অঞ্চলে থানা দখল করেছিল তারা। ভাসানীর ‘হক কথা’ ভারত বিদ্বেষী ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রচারণার তুঙ্গে ছিল। মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। পনের আগস্ট সকালে জাসদের কর্মীরা, রাজধানীর রাজপথে রুশ-ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান-স্লোগানে মিছিল করেছে। তবে অনেকেই সমর্থন করেনি। মোজাফ্ফর আহমেদ মোশতাকের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি। মোশতাকের নিজের ভাগনে ন্যাপ নেতা আব্দুল বারী তাকে সমর্থন করেননি। সিপিবির কেউ দেখা করেনি। এই উদাহরণও রয়েছে।
জাসদ বা গণবাহিনী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল এমন মন্তব্য গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের। ‘জাসদের উত্থান-পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইয়ে কর্নেল তাহের শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ কবর দেয়ার পরিবর্তে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া উচিত ছিল- এমন মন্তব্য করেছিলেন বলে দাবি করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৭ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরকে তাহের আক্ষেপ করে বলেন, ‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া।’
এর আগে হত্যাকাণ্ডের দিন মেজর রশিদের অনুরোধে সকাল ৯টায় ঢাকা বেতার কেন্দ্রে যান কর্নেল তাহের। সেখানে খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম ও মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান ছিলেন। তাহেরের পরামর্শে অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে বিবৃতি দেয়ার জন্য ডালিমরা সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানকে বেতার ভবনে নিয়ে আসেন। এছাড়া অবিলম্বে সংবিধান বাতিল, সারাদেশে সামরিক আইন জারি ও প্রয়োগ, দল-মত-নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি, বাকশাল বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন এবং অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা- খোন্দকার মোশ?তাককে এই ৫টি প্রস্তাব দেন তিনি।
অবশ্য জাসদ এবং কর্নেল তাহের নিয়ে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাসদবিরোধী দল ছিল। সরকারের সমালোচনা করেছে। কিন্তু জাসদ হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশারি নয়। বরং মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনামলে প্রতিরোধ যুদ্ধে জাসদের শতাধিক নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জাসদ কেন কেউই উল্লাস করেনি। কোনো আনন্দ মিছিলও হয়নি, প্রতিবাদ মিছিলও হয়নি। জাসদ কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা সমর্থন দেয়নি বরং কমিউনিস্ট পার্টি মোশতাকের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়