ডিআরআরএ আয়োজিত ওয়েবিনার : প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি

আগের সংবাদ

মহামারিতেও আনন্দময় হোক ঈদ

পরের সংবাদ

সুখের নীড়

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঊর্মি কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ছোট মফস্বল শহরের নাম মধুপুর। এই এলাকায় ঊর্মির মতো সুন্দরী আর কোনো তরুণী নেই। দুধে আলতা গায়ের রং। র‌্যাম্পের মেয়েদের মতো লম্বা ঊর্মি। উচ্চতা তার পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ঊর্মির সারা পিঠজুড়ে দীঘল কালো চুল। তার চুল দেখেই অনেকের জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন পড়ে ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা’। পথে ঊর্মিকে দেখে অনেকেই দিশা হারিয়ে পাগল হবার উপক্রম হয়। ঊর্মি যখন কোনো ছেলের সামনে দিয়ে যায় তখন নিশ্চিত সে ছেলের বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভূতি হয়। ঊর্মি অবশ্য নিজেকে সতর্কতার সাথে সাবধানে সামলে চলে। এই এলাকায় বাসে গণধর্ষণের শিকার এবং পরে রূপাকে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সে রূপার কথা মনে পড়ে তার। তখন তার মনের ভেতর একটা অনিরাপত্তা বোধ করে ঊর্মি। সুন্দরী তরুণীদের মনে এক ধরনের ভয় সব সময় কাজ করে। ঊর্মির মনে সে ভয় কাজ করে। সুন্দরী হওয়াতে কখন কোন বিপদ তার জীবনে ঘটে যায়।
ঊর্মির বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি একটি আটার মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার বাবা জাকির হোসেনের খুব ইচ্ছা মেয়েকে পড়াশোনা করাবেন। তিনি নিজে না খেয়ে থাকলেও মেয়ের বই-খাতা-কলম ঠিকই কেনার ব্যবস্থা করেন। এভাবে অভাব-অনটনে খুব ভালো চলছিল তাদের। ঊর্মি তার ছোট ভাই ও মা-বাবাকে নিয়ে চারজনের সংসারে সবসময় হাসিখুশি থাকত।
ওদের স্কুলে রাশেদ নামে একটা ছেলে ঊর্মিকে খুব পছন্দ করে।
রাশেদ ধনীর ছেলে। তার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। ধীরে ধীরে রাশেদ ঊর্মির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। ইচ্ছা করে তার মনের কথা বলার জন্য। ঊর্মিকে খাতা কলম কিনে দেয়া শুরু করে রাশেদ। ঊর্মি প্রথমে খাতা কলম নিতে চাইনি। কিন্তু পরে ভাবে খাতা কলম দিতে বাবার কষ্ট হয়, তাই রাশেদের কাছ থেকে নিলে বাবার একটু হলেও আর্থিক কষ্ট লাঘব হবে। তারপর থেকে রাশেদ যা দেয় তা ঊর্মি গ্রহণ করে।
আষাঢ় মাস, সারাদিন বৃষ্টি, ঊর্মিদের বাড়িটি নিচু জায়গায়। ঘরের মেঝেতে পানিতে ভরে গেছে। ঊর্মিদের ঘরের পাশে বেলি ফুলের ঝোপ।
গন্ধে ম ম করছে চারদিক। তার পাশে একটি পুকুর। পুকুরপাড়ে শোয়ানো একটি মিষ্টি আমগাছ। আষাঢ়ী পূর্ণিমা আজ। জোয়ারের পানি বেড়ে চলছে। সবাই ভয়ে অস্থির। হঠাৎ দরজার বাইরে রাশেদের কণ্ঠস্বর, চাচা গ্রামের বড় বাঁধ ভেঙে গেছে, পানি গ্রামে ঢুকে পড়েছে, তাড়াতাড়ি বের হন। বাড়ির সবাই রাশেদের কথা শুনে বাইরে বের হলো। বাড়িতে পানি উঠাতে তারা আর ঘরে থাকতে পারল না। এলাকার অনেকের মতো ধীরে ধীরে স্কুল ঘরে আশ্রয় নিল ঊর্মিদের বাড়ির সবাই।
স্কুল ঘরে নানা ধরনের মানসিকতার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ঊর্মির দিকে শকুনের দৃষ্টি অনেকের। রাশেদ ভয়ে ভয়ে চার দিকে তাকাচ্ছে। অনেক লোক এই বিপদের মধ্যে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে আছে। রাশেদ ভেবে পায় না এ কেমন অভদ্রতা। বিপদে সুযোগ সন্ধানী মানুষের মানসিকতা। বিপদের দিনে লোভের দৃষ্টি। ওই লোকগুলোকে রাশেদ মনে করল ওরা যেন পাকিস্তানি আর্মি। রাশেদ তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ল। তিন দিন পরে গ্রামের বাঁধ দেয়া হলো, পানি কিছুটা কমের দিকে। বাবা-মা ভাইবোনদের সাথে ঊর্মি ফিরে গেল বাড়িতে। আর রাশেদ ফিরে গেল তার বাড়িতে।
ভালোই চলছিল। কিন্তু সেই আশ্রয় কেন্দ্রে একটি শকুনের দৃষ্টি ধরে রাখতে চাইল ঊর্মিকে। তিনি ছিলেন তাদের স্কুলের বাংলা শিক্ষক শফিকুর রহমান। তিনি দুই সন্তানের জনক। বিভিন্নভাবে শিক্ষক শফিকুর রহমান ঊর্মিদের পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করা শুরু করলেন। মাসের শুরুতে শিক্ষক সাহেব এক বস্তা চাল আর ডাল নিয়ে হাজির হলেন। শফিকুর রহমান পিতৃসূত্রে অনেক জায়গা জমির মালিক ছিলেন। তিনি সহজ হিসাব করতেন দুটি স্ত্রী থাকা কোন পাপের কাজ নয়।
পড়ানোর সময় তিনি অন্য ছাত্রছাত্রী তুলনায় ঊর্মিকে বেশিক্ষণ পড়ালেখা করান। রাশেদ বিষয়টি খেয়াল করল। একদিন সব ছাত্রছাত্রীদের বিদায় করে দিয়ে ঊর্মিকে পড়ানোর নাম করে বসিয়ে রাখা হলো। হঠাৎ করে শফিকুর মাস্টার নিজের ঠোঁট দুটো ঊর্মির ঠোঁটে চেপে ধরে পশুর মতো শব্দ করতে লাগলেন। নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগল ঊর্মি। ঊর্মি খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল। কিন্তু ঊর্মির আত্মচিৎকার কারো কানে পৌঁচ্ছায় না। সেদিন খুব কষ্টে মাথা নিচু করে ঊর্মি বাড়ি ফিরছিল। মাঠের মধ্যে দিয়ে ফিরতে ফিরতে বড় তালগাছটার কাছে রাশেদের সঙ্গে তার গায়ে ধাক্কা লেগে যায়।
-ঊর্মি তুই কোথায় ছিলি?
ঊর্মি কিছু বলে না। চুপচাপ। আশ্রয়ের ভরসা নিয়ে ঊর্মি বসে পড়ল।
মাটিতে পা মেলে বসে ঊর্মি আকুল হয়ে কাঁদছে। ঊর্মির শরীরের পোশাক দেখে রাশেদ বুঝতে পারল। নিশ্চয় ঊর্মির কিছু না কিছু হয়েছে।
রাশেদ বলল, ‘ঊর্মি কী হয়েছে। আমাকে বলা যায় না।’
তবুও ঊর্মি কিছুই বলে না। মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকে।
এবার বিরক্ত হয়ে রাশেদ আবার ধমকের সুরে বলল, ‘তুই কোথায় ছিলি?’
ঊর্মি রাশেদকে সব খুলে বলল।
ওদের স্কুল এন্ড কলেজে রাশেদ কলেজ শাখায় ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। তার তেমন কোনো যোগ্যতা নেই ঊর্র্মির জন্য কিছু করার। কিন্তু সে সাহস হারাল না। সব বন্ধুদের খবর দিল। যখন মেয়েটির বাড়িতে সবাই মিলে গেল। এত রাতেও সেখানে অনেক লোকের সমাগম ছিল। শফিকুর মাস্টার সেখানে উপস্থিত। তিনি ঊর্মির মা বাবাকে ঊর্মির সাথে তার বিয়ে দিতে রাজি করে ফেলেছেন। কাজী নিয়ে বসে আছেন তিনি। এখনই বিয়ে না করলে তিনি ঊর্র্মির সাথে যা যা করেছেন তার নাকি ভিডিও আছে। সেটা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে।
ঊর্মি কিছুতেই বিয়েতে রাজি নয়, রাশেদ তাকে বলল চল পালিয়ে যাই।
মেয়েটি ভাবল আজ হয়তো রাশেদ তাকে পছন্দ করছে কিন্তু তার জীবনে যে নোংরা স্পর্শ পড়েছে তাতে কালকে আর তার পছন্দ থাকবে না।
যা হোক, সেখান থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সহায়তায় ঊর্মি চলে গেল শহরে।
ঊর্মিকে শহরের একটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল রাশেদ। রাশেদ নিজে রিকশা চালিয়ে টাকা উপার্জন করে ঊর্মিকে পড়াশোনা শেখানো শুরু করে। কিছু দিন পর তাদের বিয়ে হয়। তিন বছর পর রাশেদের বাবা-মা রাশেদ আর ঊর্মির বিয়ে মেনে নেয়।?
কয়েক বছর পর ঊর্মি বিবিএস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কলেজে জয়েন্ট করেন। ঊর্মি কলেজ শিক্ষক আর রাশেদ স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছে। তাতে কিছু যায় আসে না। এই দম্পতি মনের সুখের দিক দিয়ে অনেক ভালো আছে। অনেকে সংগ্রাম আর দুঃখ কষ্টের মুখোমুখির পর একটা সুখের নীড় পেয়েছে ঊর্মি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়