ডিআরআরএ আয়োজিত ওয়েবিনার : প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি

আগের সংবাদ

মহামারিতেও আনন্দময় হোক ঈদ

পরের সংবাদ

লকডাউন

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অসম্ভব! একেবারেই অসম্ভব। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সের ব্যাপারটা যদি মাথায় থাকে আর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের হুকুমনামা যদি প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ সত্যিই মানে তা হলে লকডাউনকালে বাচ্চাকাচ্চা হবার সুযোগ কোথায়? চুমকির কাছ থেকে ছয় ফুট দূরে থেকে আমার পক্ষে বাচ্চার বাবা হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ছয় ফুট কেনো ছয় ইঞ্চি দূরে থেকেও অসম্ভব। এটা কি টিভি নাকি যে দশ কি পনের ফুট দূর থেকে রিমোটটা ওদিকে একবার মুখ করে বাটন টিপে দেব আর অমনি অন্ধকার স্ক্রিন হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠবে, দেখা যাবে সিএনএন, আলজাজিরা, এইচবিও কিংবা দিদি নম্বর ওয়ান এবং বাংলাদেশের দেড় ডজন চ্যানেল।
সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সের ফরমান মানা হলে অনেক কিছুই হবার নয়।
তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের তিক্ততায় আমাদের সম্পর্ক যেখানে গিয়ে ঠেকেছে শরীর এমনিই সাড়া দিতে চায় না, তারপর আবার সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স!
হাজার পঞ্চাশ স্কোয়ার ফিট মেঝের ওপর যদি তিন রুমের অ্যাপার্টমেন্ট হয়, তাতে যদি দুটো বাথরুম কিচেন ডাইনি-ড্রইং স্পেসও থাকে তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় একেকটা রুমে ডাবল খাট ফেলার পর ওয়ার্ডরোব ঢুকালে পা চালানোই মুশকিল। মাস্টার বেডে আবার বার ইঞ্চি প্রশস্ত পাঁচ তাকের বইয়ের আলমারি ঢুকানো হয়েছে। চুমকি বই পড়ে। ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষার বই-ই।
কম কথা বলে, রাগ হলে মাথা ঝিমঝিম করে, মাসে তিনচার দিন মেজাজ এমনিতেই খটমটে থাকে, সবুজ রঙের কোনো কাপড় দু’চক্ষে দেখতে পারে না। যেখানে ছোট বোন রুমকির সাথেই এক বিছানায় থাকতে ইচ্ছে করত না সেখানে পুরুষ মানুষের সাথে ঘুমোতে হবে এটা তো ভাবতেই পারতো না। এসব কথা চুমকি বিয়ের আগে ও বিয়ের পরে আমাকে শুনিয়েছে।
ঠিক প্রেম নয়, আমাদের বিয়ের আগে কথাটথা বলার এই পর্বটি মাত্র চুয়াল্লিশ দিনের। তখনও সম্পর্কের ধরনটা আপনি সম্বোধন নির্ভর ছিল। চুমকি বলল, শুনুন, আমি কিন্তু বই পড়ি দিন কাটাই, বাধা দিলে কিন্তু শুনবো না।
আমি বললাম, পড়–ন, সেটা ভালো, লিখতে যাবেন না কিন্তু।
কেনো?
লেখকদের সম্পর্কে আমার ধারণা কিন্তু খারাপ।
চুমকি বলল, বাঁচালেন। মেজোমামা দেখা হলেই বলেন, বুড়ি, তুই এতো পড়িস, লিখিস না কেনো? ভালোই হয়েছে, এখন থেকে আপনাকে দেখিয়ে বলে দেবো, তিনি পছন্দ করেন না তাই।
বুড়ি?
হাঁ, মেজোমামা বলেন, এক সময় তো বুড়ি হবিই, আগে থেকে বুড়ি বলে ডাকাডাকি করলে তখন আর কারো মুখে বুড়ি শুনলে মেজাজ খারাপ হবে না।
টেলিফোন আলাপেই বিয়ের ঠিক আগের দিন আমরা একই সঙ্গে আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসি। আমি বললাম, চুমকি আপনি মানে তুমি কি…?
বলো, কি বলতে চাচ্ছিলে?
এটাই, মানে তুমি বলতে চাচ্ছিলাম।
ও আচ্ছা, আমিও তো তাই বললাম।
ঢাকা শহরে আমার তেমন দূর সস্পর্কেরও কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই যে তার গায়ে হলুদ দিতে যাবে, কেবল ছবি তোলার জন্য তাদেরই বিল্ডিংয়ের ছাদে চুমকির একটা নামমাত্র গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে।
বিয়ের পর তিনটা বছর আমাদের ভালো যায়নি। প্রথম বছরই আমরা দুজনই বুুঝি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। চুমকি রাখঢাক না করে বলেছে যার ইন্টেলেকচুয়াল কোনো ডেপথ নেই তাকে বিয়ে করা আর মিরপুর চিড়িয়াখানার একটা সিংভাঙ্গা মহিষকে বিয়ে করা একই কথা।
মিরপুর চিড়িয়াখানায় সিংভাঙ্গা কোনো মহিষ আছে কিনা তাও আমি জানি না।
তিন বছর কোনোভাবে কাটলেও পরের দুটো মাস আমাদের দুজনের জন্যই ছিল ভয়ঙ্কর। চুমকি বলল, তোমার লজ্জা করে না শ্বশুরবাড়িতে থাকো?
অবশ্যই করার কথা। সে জন্যই তো আমি আমার দেড় রুমের ভাড়া বাসা ছেড়ে আসতে চাইনি। বলেছি, চালো আপাতত এখানেই উঠি তারপর দেখে শুনে দু’রুমের একটা বাসা নেব। ঘরজামাই থেকে আমার বাাবাকেও যথেষ্ট লাঞ্ছিত হতে দেখেছি। আমি এর মধ্যে নেই। কেউ কিছু না বললেও আমার মনে হবে নিশ্চয়ই আমাকে কিছু একটা বলছে। মনে করে দেখো তুমি কি বলেছিলে।
কি বলেছিলাম?
বলেছিলে, অ্যাপর্টমেন্টটা তো তোমার শ্বশুরের নয় যে তোমার ঘরজামাই ঘরজামাই লাগবে। বাবা দিলেও এটা আমার নামেই পাকাপাকি রেজিস্ট্রি করা। স্ত্রীর অ্যাপার্টমেন্টে থাকলে ঘরজামাই বলা হয় এমন কোথাও দেখিনি।
তাহলে কি বলা হয়?
এটাও কোনো বইয়ে পাইনি।
তুমিই একটা পিকআপ ভ্যান নিয়ে আমার যা যা ছিল সব এনে তুললে তোমাদের অ্যাপার্টমেন্টে। জায়গা ছিল না বলে আমার প্রায় সব জিনিসপত্র রাখলে তোমাদের নামে বরাদ্দ গ্যারেজের জায়গাটিতে। তোমাদের গাড়ি ছিল না গ্যারেজ ছিল। কেবল আমার একটি ছোট্ট টেবিল আর রিভলভিং চেয়ারটা সিমকি তার রুমে ঢুকিয়েছে। তোমার ভাবি তোমার মাকে পছন্দ করতেন না বলে তিনি রয়ে গেলেন তোমার সাথে- মানে আমাদের সাথে। রুমকির অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়েছে। তোমার মা ও সিমকির যৌথভাবে একটি অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানে থেকেও ভাড়া আসে। ব্যবস্থা এমনভাবেই করা হয়েছে যেন তোমার মায়ের মৃত্যুর পর কেউ মায়ের সম্পত্তির ভাগ না চায়- এটা পেয়ে যাবে সিমকি।
আসলে এতোসব কথা আমি বলিনি; এমনিই বিড়বিড় করেছি। যা আমি স্পষ্ট করে তাকে বলেছি তা হচ্ছে, বেশ আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।
আরো আগে বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ডিভোর্স আমিই দিচ্ছি, কাগজটা নিয়ে তবে যেয়ো। তুমি আমাকে ডিভোর্স করেছে এই অহংকার করার সুযোগ চুমকি তোমাকে দেবে না।
বললাম, তুমি দাও আর আমি দিই, তোমার সাথে থাকার প্রশ্নই আসে না। এতো ইন্টেলেকচুয়াল ডেপথ তার জন্য দরকার গভীর সমুদ্রের জাহাজ, মরা গাঙ্গের ডিঙ্গি দিয়ে কার কি কাজ?
আমি বেরিয়েই যাচ্ছিলাম। সিমকি আটকালো, বলল, ফর গড’স সেইক দুলাভাই তুমি যাবে না। আমি মার রুমে চলে যাচ্ছি, তুমি এ রুমে থাকবে, তাহলে চুমকির সাথে থাকা হবে না। আমি তোমাকে মিস করতে চাই না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই চুমকির অফিসের গাড়ি এসে পড়ে, কাঁধে চামড়ার ব্যাগ ঝুলিয়ে এক হাতে খাবারের হটপট অন্যহাতে শাওমি স্মার্ট ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। সিমকি বলল, চুমকির রুমের চাবি দাও, তোমার জিনিসপত্রগুলো এখানে শিফট করি।
কিচেন, একটা বাথরুম আর চুমকির মায়ের রুমটা ছাড়া সবগুলো লক করা থাকে। চুমকিরটাই মাস্টারবেড, একটা চাবি আমার কাছেও থাকে। আমি রুম খুলে দিয়ে বেরিয়ে যাই। সিমকির দক্ষতা সম্পর্কে আমার সামান্য সন্দেহও নেই, অফিস থেকে ফিরে যখন এই রুমটাতে ঢুকব, দেখব এমনভাবে রুমটা গোছানো থাকবে যে এটাকেই আমার রুমই মনে হবে। আমার অফিস দশ মিনিটের হাঁটা দূরত্বের মধ্যে। চুমকির অফিস গাড়িতেই চল্লিশ মিনিট ফেরার সময় জ্যামে আটকা পড়লে আড়াই ঘণ্টাও লেগে যায়। আমি খাবার নিই না, অফিসের ক্যাফেটেরিয়াতে ভর্তুকি দামে পঁচিশ টাকায় ভরপেট খাওয়া যায়।
আমি এখানে স্থানান্তরিত হই ২০২০-এর ১৫ মার্চ রাতে। সিমকি পেস্ট-টুথব্রাশ, জিলেট শেভিং ফোম ও রেজর, ওল্ড স্পাইস আফটারশেভ লোশন, স্যান্ডেল, প্যান্টের বেল্ট, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সবই এনেছে- যাতে আমাকে চুমকির ঘরের দরজায় ঢুকতে টোকা দিতে না হয়। তবুও বলল, অ্যাটাচড বাথরুম নেই, তোমার কষ্ট হবে।
পরদিন শুক্রবার চুমকির সারাদিন বাসায় থাকার কথা, তার সাথে দেখা হয়ে যাওয়া এড়াতে নাশতার আগেই বেরিয়ে যাই। বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস সদরঘাট যাচ্ছে, আমি উঠে পড়ি। লঞ্চঘাটের কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে তন্দুর রুটি এবং খাসির পায়ার নেহারিতে একটি জবরদস্ত নাশতা করি। টার্মিনালের ভেতর ঢুকে দূরগামী লঞ্চ দেখি, একবার ভাবি লঞ্চে উঠে পড়ি কিন্তু শনিবার যে আমাকে অফিস করতে হয়।
আমার মহসিন হলের রুমমেট আবদুল হান্নানকে প্রায় চার মাস পর ফোন দিই, বুড়িগঙ্গার ওপাড়ে জিঞ্জিরায় তার বাড়ি ও কসমেটিক্সের কারখানা। কারখানাটা বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনদ্রব্য এখানে তৈরি হয়। শুধু বিদেশি খালি কৌটা পেলেই তার চলে। ফোন ধরতেই বললাম, সদরঘাটে আছি, নদী পেরিয়ে তোর বাড়িতে আসছি।
হান্নান বলল, ফিরে আয়, স্কোয়ার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার সামনে হাঁটাহাঁটি করছি, নার্গিসের জোড়া বাচ্চা হবে, বুঝলি দোস্ত দেখাইয়া দিলাম দুইটাই মর্দ। তোর মতো আঙ্গুল চুষলে আঙ্গুল ক্ষয় হবে, বাচ্চা হবে না।
সুতরাং জিঞ্জিরা যাওয়া হলো না। এখানে আধা ঘণ্টা ওখানে পৌনে এক, এমন করতে করতে ‘সাবলেট চাই’র অন্তত দশটি বিজ্ঞাপন থেকে ছয়টি সরেজমিন দেখে রাত সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরি।
সিমকি বলল, চুমকি ফোনে কোনো এক উকিলের সাথে কথা বলেছে। তাতে তার ডিভোর্স কেইসটা শক্ত করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে কয়েকটা পয়েন্ট দাঁড় করাচ্ছে।
১. শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছো।
২. যৌতুকের জন্য মারধর করেছো।
৩. স্ত্রীর ভরণপোষণ দিচ্ছো না।
৪. স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা মেটানোর যে হক তা আদায় করছ না।
৫. সন্তানের আকাক্সক্ষা সত্ত্বেও তাকে গর্ভবর্তী বানাতে পারোনি।
আমি বললাম, আসল পয়েন্ট তো বাদ পড়ে গেছে- তার স্বামীর চরিত্র খারাপ, অন্য নারীতে আসক্ত। উদাহরণ হিসেবে সিমকির নাম উল্লেখ করতে পারত।
সিমকি বলল, তাহলে আর মনে করিয়ে দেবার দরকার নেই। কোনো কারণে কথাটা রাশেদের কানে গেলে ২৭ এপ্রিলের অনুষ্ঠানটা ভেস্তে যাবে।
সিমকির বিয়ে ২৭ এপ্রিল, রাশেদের সাথে। ২৩ এপ্রিল কানাডার কুইবেক থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে, ২৫ তারিখ ঈদ করবে ২৭ তারিখ বিয়ে করবে, ৩০ তারিখে আবার চলে যাবে। রাশেদ কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছে মাত্র ছ’মাস আগে। আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছে, নিজে থেকেই বলেছে, দিনের বেলা কিছু পড়াশোনা করি, ফ্রেঞ্চ ভাষাটা ভালো করে শিখেছি বলে ওখানকার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ইন্টারপ্রেটর হিসেবে ডাকে, সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত ১২টা পর্যস্ত ক্যাব চালাই। সিমকিকে নিয়ে আসার পর টাইমটা আবার অ্যাডজাস্ট করে নেব। ফ্রেঞ্চটা সিমকিও কমবেশি শিখে নেবে। টরন্টো, আটোয়া ওদিকটাতে ইংলিশ চলে, কিন্তু বাঙালি বেশি, আমি বাঙালিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই।
রুমকির শাশুড়ি মৃত্যুশয্যায়। শেষ দেখার জন্য রুমকি, তার স্বামী রইস আহমেদ, তিন বছর বয়সী ছেলে ভিঞ্চি সাত দিনের জন্য ফ্রোরেন্স থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে সোজা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ নামের গ্রামে। কদিনের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। ২২ মার্চ রাতে আবার তারা ফিরে যাবে, ২০ তারিখ সন্ধ্যায় চুমকি কিংবা সিমকিদের বাড়িতেই এসে হাজির, এখানে দু’রাত, পরের রাত তো উড়োজাহাজেই। যে রুমে আমার আশ্রয় হয়েছিল সেই রুমটিই ছেড়ে দিতে হলো।
তাহলে আমার রাতের আশ্রয় হবে কোথায়? একটাতে চুমকি, একটাতে রুমকি ও রইস আহমেদ এবং তাদের ভিঞ্চি। একটাতে আমার শাশুড়ি তার একটি বড় সময় শুয়েই কাটে, সাথে থাকে সিমকি।
তাহলে আমি কোথায়?
আমি ফিসফিস করে সিমকিকে বলি, আমি কোনো এক বন্ধুর বাসায় চলে যাচ্ছি, চিন্তা করো না, আমি যোগাযোগ রাখব।
ভয়ংকর দুঃসাহসী একটি কথা চলে বসল সিমকি। বলল, বেশ তুমি চুমকির সাথে ঘুমাবে না, এই তো। আমি মাকে চুমকির রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি আমার সাথে ঘুমাবে।
আমি হেসে উঠি এবং বলি, পাগলামির একটা সীমা থাকা চাই, কি রকম লঙ্কাকাণ্ড ঘটবে ভেবে দেখ।
সিমকি তখনই ঢুকল চুমকির রুমে, কি বলল আমি শুনিনি। কিন্তু দু-তিন মিনিটের মধ্যেই চুমকি বেরিয়ে এসে আমার হাত ধরে প্রায় হেঁচকা টানে তার ঘরে নিয়ে বলল, কী নাটক শুরু করলে? রুমকির বরের সামনে এই বাহাদুরিটা না দেখালে হয় না?
পরের পাঁচ মিনিটের মধ্যে টুথপেস্ট ব্রাশ রেজার শেভিং ফোম, স্যান্ডেল সব এনে চুমকির রুমে আগে যেখানে সেটা সেভাবে ছিল রেখে আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গুড নাইট বলে সিমকি বেরিয়ে গেল।
চুমকি বলল, অসুবিধে নেই, আমি আগেই সুইচ অফ করে দেব।
আমি বললাম, আলো থাকলে আমার সমস্যা হবে না, যখন তোমার কাজ শেষ হবে তখনই অফ করো।
কাজ মানে উপন্যাস পড়া। ইংরেজি বাংলা দুই-ই। এসব আজেবাজে বানোয়াট জিনিস মানুষ কেনো যে পড়ে! এক নজরে দেখলাম তার বইটার নাম ‘লাভ স্টোরি’। ঠিকই আছে, এমনই হয়, নিজের জীবনে প্রেম না থাকলে লাভ স্টোরিই পড়তে হয়। এক সময় দেয়ালমুখো হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে নাশতার সময় রইস আহমেদ বললেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার তো চাকরি নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে। করোনা ভাইরাসের কারণে টার্কিশ এয়ারওয়েজ আসা বা ঢাকা থেকে যাওয়া সব ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে।
রুমকি বলল, মানে? আমাদের টিকেট তো টার্কিশ এয়ারের।
তিনি বললেন, ম্যাসেজ তো আগেই দিয়েছে, কিন্তু ওয়াইফাই জোনে না থাকায় দেখিনি, একটু আগে সিমকির কাছ থেকে তোমাদের বাড়ির পাসওয়ার্ড নিয়ে লগ-ইন করতেই এক ডজন ম্যাসেজ এলো। করোনা ভাইরাসকে প্যানডেমিক ডিক্লেয়ার করেছে। সার্সও তো প্যানডেমিক তখন তো এতো ফ্লাইট ক্যানসেলড হয়নি। এয়ারপোর্টে এটা-ওটা পরীক্ষা হয়েছে। রুমকি বলল, তোমার কিপ্টেমি ছাড়, অন্য যে এয়ারলাইনের টিকেট পাও সেটাই কিনে ফেল।
নাশতার টেবিলে বসেই তিনি ফোন করলেন, কাকে করলেন তিনিই জানেন। কিন্তু এটা শুনলাম বার বার বলছেন, সর্বনাশ সর্বনাশ, তাহলে কেমন করে যাব।
রুমকি বলল, মানে?
কোনো এয়ারলাইন-ই অপারেশনে নেই। টোটাল লকডাউন শুরু হয়ে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টও বন্ধ।
এ বাড়িতে টেলিভিশন আছে। কিন্তু কেউ এমনকি হিন্দি সিরিয়ালও দেখে না। চুমকি একটু অবসর পেলে বই নিয়ে বসে, সিমকির হাতের মোবাইলে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার চলছেই, আমার শাশুড়ি বসে থাকলে ভার্টিগোতে ভুগেন, এখন টিভির সামনেই আসেন না। পৃথিবী, দেশ, সমাজ এসব নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
আমি ভাবছি সাবলেটই ভালো, কিছু বাড়তি টাকা দিলে দু’বেলা খাবার দেবে, দুপুরে অফিসের খাবার ছ’দিন তো আছেই, শুক্রবার দুপুরে বাইরে কোথাও মেরে দেবে। না খেলেও সমস্যা নেই। রাতে ভাত একটু বেশি খাবার টানব।
রুমকি রিমোট কন্ট্রোল খুঁজে বের করে টিভি সার্ফ করতে শুরু করল। করোনা নিয়েই সিএনএন বিবিসি আলজাজিরা সবার কথা। বাংলাদেশের চ্যানেল বলছে ছাব্বিশ তারিখের পর থেকে সব অফিস-আদালত বন্ধ। দেশে কমপ্লিট লকডাউন। বাসা থেকেও কেউ বেরোতে পারবে না। বাসা থেকে বেরোনো ঠেকাতে আনসার, পুলিশ র‌্যাব সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
রুমকি বলে, পৃথিবীটা কোন দিকে যাচ্ছে? আমি তো কখনো উহানের নাম শুনিনি। কেয়ামত এসে গেছে নাকি?
রাতের বেলা রুমকি বলল, ওই দেখ টিভিতে চীনের বাংলাদেশিরা ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছে, সরকার ব্যবস্থা করতে দেরি করছে বলে অভিশাপ দিচ্ছে। আরো দুটো খবর দিল রুমকি- ইতালি আর আমেরিকার অবস্থা খারাপ। ও বাবা, এটা কি প্লেগ নাকি? ব্ল্যাক ডেথ?
সিমকি একটু পড়াশোনা করে? বলল, শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে। সিম্পটম হচ্ছে- জ্বর, গলাব্যথা, কাশি।
রুমকি বলল, ওহ মাই গড, আমার তো গলা ব্যথা, গত রাতে একটু জ্বরও ছিল। প্যারাসিটামল খেয়ে সামলেছি। করোনার নাকি কোনো ওষুধ নেই? আমি মরে গেলে ভিঞ্চির কি হবে?
রইস আহমেদ বললেন, চিন্তা করো না, তুমি মরে গেলে ভিঞ্চির কিন্ডারগার্টেনের অ্যাটেন্ডেন্ট ফ্রান্সেসকাকে বিয়ে করব, মেয়েটা ভিঞ্চির খুব টেইককেয়ার করে।
হঠাৎ রুমকি খেপে গেল, গøাস ভর্তি পানি ছুড়ে মারল ভিঞ্চির বাবার ওপর। বসল, তোমার চোখের তারা কাকে দেখলে নেচে উঠে আমি কি সেটা জানি না? তুমি বিয়ে করবে ঐ প্রস্টিটিউটটাকে, বিয়াত্রিচে। ভিঞ্চির সেকেন্ড শিফটের বুয়া। অ্যাটেন্ডেন্ট আবার কি? বুয়া বলতে পারো না। তোমার রুচি কখনো বুয়ার ওপর উঠেছে?
পরিবারিক প্রস্তাবে রাশেদের সাথে সিমকির বিয়ের যোগাযোগটা রাখছেন সিমকিদের ছোট মামি হাফসা। রাশেদ হাফসার ক্লাসমেট, নিষেধাজ্ঞা হাফসারই। সিমকি রাশেদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল। হাফসা বলেছে, প্রশ্নই আসে না। তাহলে সিমকির দাম কমে যাবে। বিয়ের পর কথা বলবে, তার আগে দু’পক্ষের যত কথা সব হাফসাই বলবে। সিমকি রুমকিকে বলল, ভালোই হয়েছে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ নই যে প্লেন ভাড়া দিয়ে আমার বিয়েতে আসবে। আটকা যখন পড়েছই বিয়েটা অ্যাটেন্ড করে যাও। আজ তো এপ্রিলের ছয়, আর একুশ দিন।
রইস আহমেদ বলল, বিয়ে কি কাজী সাহেবকে করবে না পাত্রকে?
কেন? কাজীকে কেন বিয়ে করব? পাত্র কি ঘাস কাটবে?
এছাড়া কোনো উপায় নেই। ওসব দেশে ঘাস অনেক বড় হয়। দুনিয়ার কোনো খোঁজখবর না রাখলে হবে কেমন করে? দেখ ফেডারেল এভিয়েশন অথোরিটি কি বলছে- জুনের আগে উত্তর আমেরিকার কোনো এয়ারপোর্ট থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা নেই।
একজন এভিয়েশন জার্নালিস্টের ভিডিও করা খবরটি তাকে দেখায়। হঠাৎ সিমকি মলিন হয়ে যায়।
রুমকি বলে, মন খারাপ করিস না। হেঁটে কিংবা রিকশায় কিংবা টেম্পোতে তো আর কুইবেক থেকে আসতে পারবে না। প্লেনে চড়তে হবে। রইস আহমেদ একটা বিকল্প পথ দেখায়। বিয়ের দিনই ভিডিও কনফারেন্স করে কাজীকে নিয়ে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে পার। তারপর যখন আকাশে প্লেন উড়বে জামাই চলে আসবে।
একটু বেহায়ার মতো শোনালেও সিমকি বলল, তাই হবে, আমি ছোট মামিকে বলছি।
এপ্রিলের ২১ তারিখ সিমকিদের ছোট মামা এরফান হাতে গøাভস, মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে চলে এলো। বলল, ফোনে বললে পারতাম, কিন্তু বিশ্বাস করানোটা কষ্টকর হতো।
রুমকি জিজ্ঞেস করল, ছোট মামা কোনটা বিশ্বাস করতে বলছ?
কানাডার বদমাশটার সাথে সিমকির বিয়ে হবে না। হতে পারে না। সে হচ্ছে হাফসার বয়ফ্রেন্ড। সিমকির বিয়ের নাম করে প্রত্যেক দিন তার সাথে দেড় দু’ঘণ্টা কথা বলে, এদ্দিন পাত্তা দিইনি, কাল কিছুক্ষণ কান পেতে যা শুনলাম কান গরম হয়ে যাবার কথা। হাফসা তার সাথে থ্রি এক্স স্টাইলে কথা বলছে, পুরোটাই পর্নো।
সিমকি বলল, তুমি এসব কি বলছ ছোট মামা?
হাফসা যা বলেছে তার একশ ভাগের একভাগও বলিনি। বলেছে সিমকিকে টাচ করার আগে হাফসার সাথে তাকে থাকতে হবে, সব সুযোগ সে তৈরি করে দেবে।
এই বিষয়ে প্রথম মুখ খুলল চুমকি। বলল, তুমি যে এসব জেনেছ ছোট মামি কি তা জানে?
জানবে তিন-চারদিন পর। আমি এখন মুখে যা বলব সব অস্বীকার করবে, এমনকি আমাকে বলতে পারে মানসিক ডাক্তার দেখাও। এটা তোমার অবসেশন। আমি আজই সিক্রেট ভয়েস রেকর্ডার আমার এন্ড্রয়েড ফোনে ডাউন লোড করছি। ফোনটা সাইলেন্ট মোডে দিয়ে বেডরুমে কোথাও লুকিয়ে রাখব। আমি টিভি দেখার নাম করে চলে আসব। এভাবে তিনদিনের কথা রেকর্ড করে নিজে শুনে সিমকিকে এবং তোমাদের শুনিয়ে তারপর হাফসাফে বলব। যদি শুভ্র আর রুদ্র না থাকত আজই হতো হাফসার সাথে আমার শেষ দিন।
চুমকি বলল, ছোট মামা তুমি আসলেই মেন্টাল কেইস নয় তো?
চারদিন পর ডকুমেন্টসহ আসছি।
ছোট মামা সিমকিকে জিজ্ঞেস করল, হোয়াট ইজ ইয়োর ডিসিশন?
সিমকি বলল, বিয়েতো আমি ঠিক করিনি, তোমরা ঠিক করেছ, বিয়ের তারিখও তোমাদের ঠিক করা। আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?
তিন.
ছোট মামা বেরোবার আধঘণ্টার মধ্যে র‌্যাব চুমিকদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। মাইক্রোফোনে জোর গলায় বলল, এই ভবনে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই বাড়ি সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। কেউ বেরোতে চেষ্টা করলে গ্রেপ্তার করা হবে। হ্যান্ডমাইকে আরো ঘোষণা করা হলো, এটি একটি প্রাণঘাতী ছোঁয়াচে রোগ। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর নাম মোদাব্বের হোসেন বয়স সত্তরের উপরে, তিনি এই বিল্ডিংয়ের চারতলার ডানপাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন। এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছাড়া অন্য কেউ যদি তার সংস্পর্শে এসে থাকেন তিনিও বিপজ্জনক ভাইরাস বহন করে থাকতে পারেন। অবিলম্বে তাকে শনাক্ত করুন এবং আমাদের কাছে হস্তান্তর করুন।
মোদাব্বের হোসেন দূরের কেউ নন, সিমকিদের একমাত্র ভাই রাতুলের শ্বশুর, ডায়ানার বাবা। নভোচারীর মতো পোশাক পরা লোকজন মোদাব্বের হোসেনকে চারতলা থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় তিনি চিৎকার করছিলেন, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।
ডায়ানা ভাবির সাথে তার শাশুড়ির খারাপ সম্পর্ক থাকলেও ডায়ানার বাবা আসার পর তিনি তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। আবার মায়ের সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে সিমকি। চুমকি এবার চড়াও হলো মা ও বোনের উপর, তোমরা কোয়ারেন্টাইনে চলে যাও। চৌদ্দ দিনের আইসোলেশনের পর যদি সুস্থ থাকো তবেই কথাবার্তা হবে নতুবা এই-ই শেষ। আল বিদা।
তারপর রুমকির সামনে করোনা ভাইরাস কতো ভয়ঙ্কর রোগ, শ্বাসকষ্ঠে কেমন দুঃসহ মৃত্যু ঘটে তার একটি বর্ণনা দিল। ভয়ঙ্কর এক ধমক দিল আমাকে, সাবধান রুম থেকে বেরোবে না, তুমি অনেক অশান্তি আমাকে দিয়েছ, দয়া করে এইবার মা আর সিমকির কাছ থেকে করোনা ভাইরাস এনে আমাকে দিয়ো না।
রুমকি তার স্বামীকে বলল, যেভাবেই হোক ভিঞ্চিকে বাঁচাতে হবে, একটা ট্যাক্সিক্যাব ডাকো, আমরা আবার চুয়াডাঙ্গা চলে যাব। সমস্ত নষ্টের মূল হচ্ছে আমার মা। কী দরকার ছিল ওই ঘাটের মরাটাকে দেখতে যাবার?
রইস আহমেদ বললেন, লকডাউন মানে বোঝো? প্লেন যেমন বন্ধ, ট্যাক্সিক্যাবও। তা ছাড়া কাল দেখনি টিভিতে- রাস্তায় বেরোলে পুলিশ কান ধরে উঠবস করাচ্ছে।
হঠাৎ আমাদেরটা ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে একটি ফ্ল্যাট হয়ে উঠল। টোকা দিলে শুধু রুমকি আর ভিঞ্চির জন্য আমাদের রুমের দরজা খোলা হয়, দুজন আমাদের বাথরুম শেয়ার করে।
রুমকি যখনই ঢোকে তখনই একটা না একটা মৃত্যুসংবাদ দেয়। ইতালির মিলানে মারা গেছে রইসের বড় মামা বেদারুদ্দিন আহমেদ, নিউইয়র্কে রুমকির বান্ধবীর বড়বোন নিশি আপু ও তার খালা শাশুড়ি।
সিমকির বিয়ে নিয়ে আলোচনা হঠাৎ থেমে গেছে। আমাকে ডিভোর্স করার নোটিশের ড্রাফট চূড়ান্ত হয়ে আছে। অনেক দিন ধরেই, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হবার আগে থেকেই আমি ও চুমকি বিছানাতেও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স রক্ষা করে চলেছি। এখন তো আরো স্ট্রিক্ট হতে হচ্ছে। আমি দেয়ালের দিকে মুখ করেই ঘুমোই সকালে ঘুম তাহলে দেখি চোখের সামনে দেয়াল। চুমকি দেখে চোখের সামনে জানালা।
আমার জ্বরটা হঠাৎ করেই এলো, বাড়লও খুব দ্রুত। মাঝরাত কি তার পরে আমি কাঁপতে শুরু করলাম। আমার লেপ দরকার। কিন্তু এত রাতে কাকে বলি? চুমকির সাথে এক বিছানায় থাকলেও আমাদের টকিং টার্ম নেই। আমি দেয়ালের দিক থেকে চাদরসহ তোষকটা টেনে নিজেকে এর ভেতর সেধিয়ে দিই। কিন্তু তাতে আমাকে বিছানার প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আসতে হয়, তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে আমার হাত চুমকির ওপর পড়েছে না চুমকির হাত আমার ওপর বলতে পারব না, কিন্তু ঘুমটা যখন ভাঙ্গে বুঝতে পারি আমরা দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে আছি। তারপর কেমন করে ব্যাপারটা ঘটে গেল।
চুমকি বলল, শরীর এতো গরম কেনো? করোনা ভাইরাস ঢুকেছে? আমাকে আবার ইনফেকটেড করছো না তো?
নীলাভ ডিমলাইটের সুইচ অন করে চুমকি দুটো প্যারাসিটামল বের করে আনে। পানিসহ ট্যাবলেট এগিয়ে দেয়। বলে, আগে টেম্পারেচার কন্ট্রোলে আসুক।
সকালে যখন ঘুম ভাঙে অনেক অনেক দিন পর আবিষ্কার করি আমরা মুখোমুখি শুয়ে আছি।
চার.
চৌদ্দ দিন পর সিমকি এবং তার মা আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়। ডায়ানার বাবা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি। সরকারের পিপিই-পরা লোকজন তাকে খিলগাঁওয়ে কোনো একটি কবরস্থানে সমাহিত করেছে। সিমকি মুক্ত হবার তিন কি চারদিন পর ছোট মামি হাফসা মাস্ক গøাভস পরে বাসায় এসে সবাইকে শুনিয়েই বলে, আল্লাহর রহমতের শেষ নেই। যদি এই ভাইরাসটার কারণে লকডাউন না থাকত সিমকি তোর অনেক ভোগান্তি হতো। ভাগ্যিস এয়ারপোর্ট বন্ধ। বুঝলি রাশেদের কথায় আমার খুব সন্দেহ হচ্ছিল, এজন্য কদিন ধরে পটিয়ে পটিয়ে বের করলাম তার একটা বউ আছে, নাম পেনিলোপ ক্রুজ। আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছি, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ, নো ফারদার টক। সিমকিকে তোমার মতো বদমাশের কাছে বিয়ে দেব না।
সে রাতেই ছোট মামা ফোন করে বললেন, একচুয়ালি হাফসা নিজেই প্রতারিত বোধ করে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছে। যাক বাবা, তবুও ভালো। আমি বউ ভাগ্নি দুইই হারাতাম।
২৫ মে ঈদুল ফিতরের সকালে চুমকি বলল, দিলে তো আমাকে ফাঁসিয়ে। আমি এখন কোনটা সামলাব- প্রেগন্যান্সি না ডিভোর্স?
টুয়েন্টি টুয়েন্টির করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালের লকডাউনে শেষ পর্যন্ত আমি ও চুমকি সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স বজায় রাখতে পারিনি। এর মধ্যে কোরবানির ঈদও এসে গেছে, আগস্টের প্রথম দিন। এক একবার বমি হলেই চুমকি বলছে, তোমার জন্যই আমার এই অবস্থা, আমি তোমাকে ছাড়বো না।
এই কোয়ারেন্টাইনে আমরা একটি বাবুর জন্মের অপেক্ষায় ছিলাম। বাবুটার কারণে আমাদের অনিবার্য তালাক অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়