এস এম মিজান : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব পর্যুদস্ত। স্থবির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। পৃথিবী এর আগে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখেনি। মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আয়-রোজগার না থাকায় দেশের স্বল্প আয়ের, খেটে খাওয়া ও দুস্থ মানুষ পড়েছেন খাদ্যাভাবে। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চলছে ত্রাণ বিতরণ। এ সুযোগে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ করা গরিবের ত্রাণ আত্মসাৎ করছেন এক শ্রেণির জনপ্রতিনিধি। এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের ধরতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে অ্যাকশনও শুরু হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। একই সঙ্গে নি¤œ আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ১০ টাকা দরে চাল বিক্রির প্রকল্প চালু করার পাশাপাশি শহরের নি¤œবিত্ত মানুষের জন্য সাধারণ ত্রাণ কর্মসূচি জোরদার করা হয়। সারাদেশে ওএমএস কর্মসূচি আগে থেকেই কার্যকর ছিল। বর্তমান সংকটে ওএমএসের চালের দাম কমিয়ে ১০ টাকা করে সরকার। সারাদেশে এ কার্যক্রম জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে লুটেরাদের তৎপরতাও বেড়ে যায়। নানা ফন্দি-ফিকিরের মাধ্যমে তারা ত্রাণের চাল লুটপাট করতে থাকে। কেউ ত্রাণের কিছু অংশ সরিয়ে নিজেদের বাসাবাড়ি ও নিরাপদ স্থানে মজুত করেছে। কেউ ত্রাণের পুরো অংশই মেরে দিয়েছে। প্রতিদিন শত শত বস্তা করে চাল আটক করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুদক সূত্র জানায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারের সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত ত্রাণের তালিকা প্রস্তুতিতে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের কয়েকটি জায়গায় ত্রাণের চাল যথাস্থানে রাখা হয়নি, তালিকা প্রস্তুতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বা ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কমিশন বেশ কিছু জায়গায় এ ধরনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। আরো অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, বগুড়া, বরিশাল ও বরগুনার পৃথক ৮টি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কমিশন থেকে এসব মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে দ্রুত চার্জশিট দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুদক দ্রুত আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রসিকিউটিং সংস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানিয়েছে সূত্র। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়, খেটে খাওয়া ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল বিতরণে অনিয়মের যে অভিযোগ আসছে তা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। জনপ্রতিনিধিসহ যে কেউই দুর্নীতি করুক না কেন সেটা দুদক বিবেচনা করবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি ঘটনার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করতে আমি আমাদের বিভাগীয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।
এ বিষয়ে দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, কোনো অবস্থাতেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে দুর্নীতির ন্যূনতম সুযোগ দেয়া হবে না। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।