
চিত্রনায়িকা পপি। সবার মতো তিনিও কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তারপরেও মানুষের জন্য কাঁদছে তার মন। ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলী থেকে শুরু করে দেশের মানুষ নিয়ে ভাবছেন। সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেন এ অভিনেত্রী। কথা বলে লিখেছেন শাকিল মাহমুদ।
গৃহবন্দি এ সময়ের অনুভূতি কেমন?
আসলে খুব খারাপ লাগছে। কোথাও যেতে পারছি না এটা যেমন আছে তেমনই করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তাতে দেশের মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষদের সমস্যা দেখে কষ্ট হচ্ছে।
দুর্যোগকালীন যে সংকট তার থেকেও ভয়াবহ অবস্থা কিন্তু দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর হবে। সে সময়ের পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী ধরনের পরিকল্পনা নেয়া উচিত?
দেখুন, বাংলাদেশ একটি গরিব রাষ্ট্র। এখানে চিকিৎসার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই, খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই করোনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আমাদের চিকিৎসাসেবা কি যথেষ্ট? বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোও এ ভাইরাসের কাছে ধরাশায়ী। সেখানে আমাদের মতো দরিদ্র দেশ তো নস্যি। সুতরাং পরবর্তী সময়ে কী করণীয় বা কী পরিকল্পনা তা ঠিক করার চেয়ে এই মুহূর্তে কীভাবে ভাইরাসটি থেকে জনগণকে রক্ষা করা যায় সেটি ভাবা উচিত।
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছে। এই লোকসান থেকে ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে বের হতে পারবে বলে মনে করেন?
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী খানিকটা সচ্ছল। কিন্তু বাদবাকি যারা আছেন তারা এখনই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেকনিশিয়ানরা খুবই করুণ অবস্থায় পড়েছেন। আমরা কয়েকজন তাদের সাহায্য করছি। কিন্তু আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত বিষয়টির প্রতি নজর দেয়া। যে সব সেক্টরে অনুদান দেয়া হচ্ছে তেমনভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও অনুদান দেয়া উচিত। আর আপনি বললেন লোকসানে পড়ছে, এ লোকসান কাটিয়ে ওঠা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানিও এগিয়ে আসতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে এই মুহূর্তে সেবামূলক কী কাজ করছেন?
আমাদের গ্রামগুলোতে শহরের মতো করোনার প্রভাব অতটা পড়েনি। আমি যখন খুলনা আসলাম, তখন দেখলাম মানুষজন যার যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাজ করছে- করোনা সম্পর্কে তারা তেমন কিছুই জানে না। তাই আমি এখানকার মানুষদের করোনা সম্পর্কে এবং এটা মোকাবেলায় কী করা উচিত- সে সব সচেতনতামূলক বার্তাগুলো পৌঁছে দিচ্ছি। আর ব্যক্তিগতভাবে ইন্ডাস্ট্রির কিছু টেকনিশিয়ানদের যতটুকু পারছি সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও গ্রামের মানুষদেরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করছি।
ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন কীভাবে?
আসলে খুব ভয়ে ভয়ে সময়টা পার করছি। আর এ ভয়টা শুধু আমার মধ্যে না শুধু আমাদের দেশের সবার মধ্যেই শুরু হয়েছে। তারপরেও সচেতন থাকছি, বাসাতেই আছি এ সময়েও। তাছাড়া মানুষের খোঁজখবর তো নেয়া প্রয়োজন। নিজে যতটুকু নিরাপদ থাকা যায় তা মেনে মানুষদের খোঁজ নিচ্ছি। বাসাতে থাকাকালীন পরিবারকে সময় দিচ্ছি। এছাড়া বই পড়ছি, সিনেমা দেখছি।
দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে অল্প করে কিছু বলুন…
আসলে এখন আমাদের কী করা উচিত তা আমরা সবাই কমবেশি জানি এবং বুঝি। সুতরাং সে অনুযায়ী নিরাপদ থাকতে হবে। সরকার আমাদের ঘরে থাকতে বলেছে, আমরা ঘরে থাকব- সরকারকে সাহায্য করব। আর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেমন, আপনারা মানে সংবাদকর্মীরা, নিরাপত্তাকর্মীরা, চিকিৎসকরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান দেখানো ছাড়া আর কিছু নেই। খুব তাড়াতাড়ি এই সময়টা আমরা পেরিয়ে যেতে চাই। তাই সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এ সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।