সানজীদা সাঈদ
এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল চেইন অ্যাপোলো হসপিটাল এমন একটি সার্জারি সম্পাদনা করেছে যা এক অস্ট্রেলিয়ান শিশুর জীবন বদলে দিয়েছে। ডা. সাজান কে হেগড়ে এবং তার দল বৈপ্লবিক নন-ফিউশন অ্যান্টিরিওর স্কোলিওসিস কারেকশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে একটি মিনিমালি ইনভেসিভ ডবল কার্ভ কারেকশন সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। রোগী ছিল ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে, যে মেরুদণ্ডকে একপাশে বাঁকা করে ফেলা অ্যাডোলেসেন্ট ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের ১৩ বছর বয়সী শিশু মিস জ্যাভিয়া মঞ্চে নাচ পরিবেশন করা অবস্থায় তার মা নাচের ভঙ্গিতে একটি পরিবর্তন লক্ষ করেন। জ্যাভিয়ার বাবা মি. ওয়েইন রবার্ট এলিসন ও মা মিসেস টিজিয়ানা তেরেসা সিমোনেলি চিন্তিত হয়ে তাদের মেয়ের মেরুদণ্ডের বদলে যাওয়া আকৃতি সংশোধন করার জন্য সার্জন খুঁজতে থাকেন। জ্যাভিয়া অন্য যে কোনো ১৩ বছর বয়সী শিশুর মতোই সুস্থ ছিল, কিন্তু হঠাৎ তার মেরুদণ্ডে বদলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ায় সে প্রায়ই ব্যথা অনুভব করত। এই পরিবর্তন দ্রুত বাড়তে শুরু করে, প্রতিদিনের কাজ চালিয়ে যেতেও তার কষ্ট হতো। চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী সে অ্যাডোলেসেন্ট ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস-এ আক্রান্ত। অন্যান্য দেশের বেশ কয়েকজন সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে জ্যাভিয়া বাবা-মা চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হসপিটাল আসেন।
মেরুদণ্ডের এই অস্বাভাবিক ‘এস’ আকারের ডাবল কার্ভ সাধারণত ৮-১২ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। এই অসুখটি ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে দুই থেকে তিন শতাংশ শিশুকে প্রভাবিত করে, এমন সময় যখন মানবদেহের সর্বাধিক বৃদ্ধি ঘটে। অ্যাডোলেসেন্ট ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস একটি কমন কন্ডিশন- যেখানে মেরুদণ্ডের দৃষ্টিকটু পর্যায়ে বেঁকে যাওয়া বুকে বা পিঠের আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটায়, কিছু ক্ষেত্রে শরীরের উপরের অংশ বেঁকেও যেতে পারে। অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করলে এই বেঁকে যাওয়ার কারণে পিঠে তীব্র ব্যথা হতে পারে এবং হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের স্বাভাবিক কাজকে প্রভাবিত করতে পারে।
মেরুদণ্ড বদলে যাওয়ার পরিমাণ সামান্য হলে সাধারণত ব্রেস ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়, যাতে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে সমস্যাটা আরো প্রকট না হয়। যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন গত ৬০ বছরের প্রথাগত চিকিৎসায় ইমপ্ল্যান্ট আর রড, স্ক্রু বা পেটের সাহায্যে মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক আকারে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। তবে এই ধরনের স্কোলিওসিস কারেকশনের ফলে মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে যায়, ফলে রোগী স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না।
বৈপ্লবিক এই পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. সাজান কে হেগড়ে বলেন, ‘এই সমস্যাটির সমাধান করার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে ফিউশন সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা হয়, যেখানে মেরুদণ্ডের সঙ্গে ধাতব পেট যুক্ত করে দুটি রডের সঙ্গে আটকে দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত মেরুদণ্ডের আলাদা অংশগুলো একসঙ্গে মিশে একটি হাড় গঠন না করে, ততদিন এই ইমপ্ল্যান্টগুলো মেরুদণ্ডকে একটি স্থানে ধরে রাখে। কিন্তু এখন শিশুদের সারিয়ে তুলতে আজ আমাদের একটি বৈপ্লবিক পদ্ধতি চলে এসেছে। এই কৌশলটি দিয়ে মেরুদণ্ডের আকার সংশোধন করা হয়, বাইরে থেকে কিছু সংযুক্ত করা হয় না। এই সার্জারির পর বাচ্চারা আগের মতোই স্পোর্টস, জিমন্যাস্টিকস বা নাচসহ স্বাভাবিক কাজগুলো শুরু করতে পারে। পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতিতে এটি সম্ভব ছিল না।’
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কয়েকটি স্পাইন-সেন্টারে এই পদ্ধতিটি থাকলেও, ভারতের অ্যাপোলো ইনস্টিটিউট অব স্পাইন সার্জারি একমাত্র কেন্দ্র যেখানে এটি ব্যবহার করা হয়। সার্জারির পর মিস জ্যাভিয়াকে ফিজিওথেরাপির অধীনে রাখা হয়েছে। তার দেহভঙ্গি স্বাভাবিক হয়ে রিব-কেইজ সেরে উঠছে, শরীর ও কাঁধের সঙ্গতি ফিরে আসছে। সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, আস্তে আস্তে সে প্রতিদিনের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসছে।
অনুসন্ধান : ০১৭৪৬১১০১০০