শবনম মোস্তফা
আর কয়েকদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। সারাদেশে প্রায় কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এই সময় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও এক ধরনের উদ্বেগ আর মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে পার করে। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম আর বিশ্রামের ব্যাপারে খুবই অনিয়ম করতে দেখা যায়। তবে খাবারে সঠিক পুষ্টি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও বুদ্ধি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে পরীক্ষা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে অবশ্যই সহায়ক হবে।
পরীক্ষায় ভালো পারফর্ম করার জন্য নিউট্রিশনিস্ট শবনম মোস্তফার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি টিপস :
১. লেখাপড়ায় তৎপর থাকতে প্রচুর পানি পান কর
পানিশূন্যতা থেকে অবসন্ন ভাব, খিটখিটে মেজাজ, ক্লান্তি আর মনোযোগ হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা দেয় যার কারণে পড়াশুনা ও ভালো ফলাফল করা কষ্টকর হয়।
দিনে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করার লক্ষ্য রাখবে এবং পরীক্ষার হলে অবশই একটি ওয়াটার বোতল সঙ্গে রাখবে।
২. স্ন্যাকস খাও বুদ্ধি করে
বিকেলের নাস্তা কিংবা মধ্য সকালের হালকা নাস্তায় ফলমূল, মধু, বাদাম, স্যুপ, সালাদ, দুধ অথবা দই খেতে পার বেশি বেশি এনার্জি পেতে। বিশেষ করে সকালের নাস্তা কখনই বাদ দেয়া যাবে না যা দিনভর তোমাকে সক্রিয় রাখবে।
৩. খেতে শুরু কর বুদ্ধিবর্ধক খাবার
এমন কোনো জাদুকরী খাবার নেই যা খেলে পরীক্ষার দিনে হঠাৎ করেই তোমাকে জিনিয়াস বানিয়ে দেবে। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষার আগের রাতে এই বুদ্ধির খাবার তালিকা অনুসরণ করবে :
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির পরিপোষক খাবারগুলোতে থাকছে এনটিঅক্সিডেন্ট- ভিটামিন এ, ই এবং সি যা পাওয়া যায় সহজাত কিছু খাবারেই যেমন ডিম, গাজর, ব্রুকলি, মাছ, বাদাম, সবুজ শাক-সবজি এবং ফলমূল যেটা মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয় রোধ করে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় মাছ, সরিষার তেল, সরিষা বীজ, মেথি, কলাই ডাল, রাজমা, সয়াবিন, আখরোট, বাজরা এবং শনবীজ (তিসি) যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো এমনকি ত্বক ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
** ভিটামিন বি ১
স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং স্মৃতিশক্তি ও লেখাপড়ায় সাহায্য করে। সুষম উৎস হলো রাইস ব্র্যান, গম বীজ, গমের আটা, বার্লি, ভুট্টা (শুকনো), ডিম, দুধ (স্কিমড, হোল), খোয়া ইত্যাদি।
** ভিটামিন বি ১২
এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন। এটি পাওয়া যায় প্রাণিজ প্রোটিন যেমন ডিম, চর্বিহীন মাংস, কলিজা, কিডনি, লো ফ্যাট মিল্ক, দই প্রভৃতি খাবারে। এসব খাবার মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, বিরক্তিভাব দূর করে এবং দেহের সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
** ফলিক এসিড
দেহের হোমোসিস্টাইন, এক ধরনের অ্যামিনো এসিড যা বুদ্ধি ক্ষয় করে; এটি অপসারণের জন্য ফলিক এসিড অপরিহার্য। সবুজ শাক-সবজি, ফুলকপি, ব্রুকলি, গাজর, পালং, ডাল, বাদাম এবং বীজ ফলিক এসিডের খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৪. এড়িয়ে চলো বুদ্ধিরোধক খাবার-
নিচে যেসব খাবারের তালিকা দেয়া হলো সেগুলো পরীক্ষা চলাকালীন বিশেষ করে পরীক্ষা প্রস্তুতির শেষ সপ্তাহগুলোতে না খাওয়ার চেষ্টা করবে কারণ এ খাবারগুলো তোমাকে অবসাদ, ঝাপসা স্মৃতি, হতাশা এবং ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিবে-
** ঠাণ্ডা পানীয় যেমন সোডা, এনার্জি ড্রিংকস, কমার্শিয়াল ফ্রুট জুস
** চিনিযুক্ত খাবার যেমন কুকিজ, ক্যান্ডি, আইসক্রিম,
** অতিরিক্ত চিনিযুক্ত সিরিয়ালস,
** রেগুলার চিপস,
** ক্যালোরি আধিক্য খাবার যেমন পিৎজা এবং বার্গার
** তেলে ভাজা খাবার যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অথবা চিকেন নাগেটস।
৫. চাই পর্যাপ্ত ঘুম-
অনেক শিক্ষার্থীর মাঝেই পরীক্ষার আগের রাতে অনেক রাত অবধি পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় এই ভেবে যে আর একটু বেশি পড়লে হয়তো আরো বেশি মনে থাকবে- এটি কখনই করবে না, প্রকৃতপক্ষে এটি তোমার মস্তিষ্ককে আরো ক্লান্ত করে দেয়।
মনে রাখবে ভালো ফলাফল করার জন্য তোমাকে কেবল পুষ্টিকর খাবার খেলেই হবে না, অবশ্যই তোমার পরিমিত ও শান্তিপূর্ণ ঘুম দরকার যা তোমাকে পরদিন অর্থাৎ পরীক্ষার দিন সতেজ থাকতে সাহায্য করবে।
সুস্থ দেহ চিন্তামুক্ত মন, পরীক্ষায় সেরা হও সর্বক্ষণ!!
শুভ কামনায়
নিউট্রিশন কনসালটেন্ট
শিওরসেল মেডিকেল (বিডি) লিমিটেড।