কাগজ প্রতিবেদক : নাচ, গান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ বছরের অনন্যা শীর্ষ দশ-২০১৬ প্রদানের আয়োজন করা হলো। জয়ী নারীরা হলেন : অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান (শিক্ষা), ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (রাজনীতি), ড. জেবা ইসলাম সিরাজ (বিজ্ঞান গবেষণা), সাবেরী আলম মোতাহের (অভিনয়), নিশারানী মালাকার (শোলাশিল্পী), আশরাফুন নাহার মিষ্টি (প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী), বাসন্তী মুরমু (আদিবাসী অধিকারকর্মী), সুরমা জাহিদ (মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা), সাবিনা খাতুন (খেলাধুলা) এবং তাসমিনা আক্তার (অদম্য সাহসী)।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীতে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা আয়োজিত ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা প্রদান-২০১৬’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. রওনক জাহান এবং সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক ও প্রকাশক তাসমিমা হোসেন।
২০১৬ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের কৃতী বিশিষ্ট ১০ নারীকে অনন্যা সম্মাননার ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি তাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, জঙ্গিবাদ গোটা পৃথিবীকেই তছনছ করে ফেলার জিঘাংসা নিয়ে নেমেছে। বাংলাদেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের এতে আত্মঘাতী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জঙ্গিরা ঠিক করে দিচ্ছে, তাদের কেউ নিহত হলে তার স্ত্রীর কার সঙ্গে বিয়ে হবে। নারীরা কী হাতবদলের জিনিস? এমন উন্মার্গ চিন্তার বিরুদ্ধে পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের একত্রে রুখে দাঁড়াতে হবে। অন্তত একটি জায়গায় আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে পারি।
শীর্ষ দশ সম্মাননা প্রাপ্তদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর ১০ নারীর ৯ জন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, রাজনীতিতে প্রয়োজন হয় অনেক টাকা-পয়সা ও পেশিশক্তির। সেটা নারীদের নেই বলে তারা মূলধারার রাজনীতিতে সেভাবে আসতে পারছেন না। এই প্রতিক‚লতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কোনো কোনো নারী অনন্য অবদান রাখছেন, সেটা গর্বের বিষয়। অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননাপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি বলেন, গত শতকের আশির দশকে বিদেশের জার্নালে একটি লেখায় আমি অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীর কথা লিখেছিলাম, যে নারী ডায়নাস্টিক বলয়ের বাইরে থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন।
সংসদ সদস্য ও কবি কাজী রোজী বলেন, নারীদের সবাই সমান সুযোগ পান না। এটা তাদের দোষ নয়, অন্বেষণের সমস্যা। অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন আলোকিত নারীদের খুঁজে খুঁজে বের করে সম্মানিত করছেন, তাকে বলব তিনি হচ্ছেন শীর্ষ অদম্য। নিয়মিতভাবে অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের জন্য তিনি অনন্যার সম্পাদক প্রকাশক ও অনন্যা পরিবারকে ধন্যবাদ জানান।
তাসমিমা হোসেন বলেন, নব্বইয়ের দশকে তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম যখন ঘোষিত হলো, তখন থেকে ওম্যান অব দ্য ইয়ার সম্মাননা প্রদানের কথা আমরা ভাবি, যা পরে অনন্যা শীর্ষ দশ হয়। আগে সারা বছরের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের জন্য ১০ জন নারী খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন অনেক বেশি-সংখ্যক যোগ্য ও কৃতী নারীকে আমরা পাই। এ পর্যন্ত ২৪০ জন নারীকে আমরা সম্মাননা দিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত। অনন্যা শীর্ষ দশ কফি টেবিল বুকের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো এবার।
অনুষ্ঠানে সাধনার নৃত্যশিল্পীরা মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন।