পঞ্চমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব’। আগামী ২৪ নভেম্বর এর উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাঁচদিনের এ উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে আরো থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। সূচনা বক্তব্য রাখবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। গত সোমবার ঢাকার গুলশানে একটি পাঁচতারা হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত চার বছরের ধারাবাহিকতায় ধ্রæপদী সঙ্গীত ও নৃত্যের গুরুত্বপূর্ণ শাখার উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা উপস্থাপন করা হবে এতে। এবারের কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। সঙ্গীতায়োজন ও গৎ রচনা করেছেন পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের গুরুপণ্ডিত কুশল দাশ। উৎসবে বাংলাদেশের ১৬৫ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন। উদ্বোধনী পর্বে স্বনামধন্য নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ৬০ জন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙা গানে মনিপুরী, ভরতনাট্যম, ওডিশি ও কত্থক রীতির রূপায়ণ পরিবেশন করবেন। প্রথিতযশা শিল্পী মুনমুন আহমদ তার দল নিয়ে কত্থক পরিবেশন করবেন উৎসবের চতুর্থ দিন। উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ এককভাবে খেয়াল এবং তারই নির্দেশনায় দলগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সমাপনী আয়োজনে। এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছেন বেনারস ঘরানার পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত ৮৭ বছরের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। উৎসবের প্রবীণতম এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি ও টপ্পার পরিবেশনায় ছড়াবেন পূরব অঙ্গের রূপ-রস। প্রথমদিনের পরিবেশনায় অংশ নেবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেয়া কিংবদন্তি শিল্পী আলাউদ্দিন খাঁ’র বংশধর ওস্তাদ আশিষ খাঁ। এবারের উৎসবে প্রাধান্য পাবে নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। পুরুষ ও নারীকণ্ঠের ভিন্ন স্তরের রাগে পরিবেশিত জাসরাঙ্গি শীর্ষক যুগলবন্দি পরিবেশনায় অংশ নেবেন জয়পুর আত্রোলির বিদূষী অশ্বিনী ভিদে ও মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত সমঞ্জীব অভয়ঙ্কর। উৎসবের প্রথমদিনে পশ্চিমা ও ঢংয়ে বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত ড. এল সুব্রহ্মণ্যন। প্রেরণাসঞ্চারী ওড়িশি নৃত্যের আশ্রয়ে মঞ্চ আলোকিত করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্যা আরুশি মুডগাল। এ উৎসবের প্রথমবারের মতো শোনা যাবে ম্যান্ডোলিনের সুর। বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত শিল্পী বংশীবাদক রনু মজুমদার ও ইউ রাজেশ। বিগত বছরের মতো এবারো অনন্য এই সঙ্গীতায়োজনে অংশ নেবেন প্রবাদপ্রতিম বাঁশরিয়া পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। শোনা যাবে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মোহনীয় সন্তুরের সুর। কণ্ঠসঙ্গীত ও বাদ্যের নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবতী, পণ্ডিত উলহাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। শোনা যাবে বিশিষ্ট সেতারির পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপায়েরর মিষ্টি-মধুর সেতারের বাজনা। থাকবে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কিরানা ঘরানার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী ড. প্রভা আত্রে এবং ফরুকাবাদা ঘরানার খ্যাতিমান তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তার ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনা। বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি পরিবেশনায় রঙ ছড়াবেন প্রবীণ গোধকিণ্ডি ও রাতিশ টাগডের। যৌথ তবলাবাদনে অংশ নেবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসী ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেজাজের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উপস্থাপন করবেন সেতারে রাগসঙ্গীতের নন্দিতশিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, কর্ণাটকি সঙ্গীতে পারদর্শী ভগ্নিদ্বয় রঞ্জনী ও গায়ত্রী, কর্ণাটকি বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন, খেয়ালিয়া আরবতহী আঙ্কালিকার, জয়তীর্থ মেউন্ডি ও কুমার মারদুর। কনিষ্ঠতম শিল্পী হিসেবে উৎসবে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত ফুলঝুরি খান। সাত বছরের এই শিল্পী সেতার বাজিয়ে শোনাবেন। উৎসবে অংশগ্রহণের নিয়মনীতি : প্রতি বছরের মতো অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে প্রবেশ পাশ। নভেম্বরের শুরু থেকে সীমিত সময়ের জন্য চলবে এই নিবন্ধন কার্যক্রম। অনলাইনের বাইরে ধানমন্ডির ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়ির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ এবং এয়ারপোর্ট রোডের খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। প্রতিদিন রাত ১টায় বন্ধ হয়ে যাবে উৎসবের প্রবেশ পথ।
:: মেলা প্রতিবেদক