গুম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে যা বললেন মির্জা ফখরুল
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০১ পিএম
সংহতি সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের গুম ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে এক সংহতি সভায় বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল রাজনীতিতে আছি… অ্যারেস্ট হওয়া জানতাম, হত্যা করা জানতাম কিন্তু গুম করে দেয়া এটা আমাদের জানা ছিলো না। এই আওয়ামী লীগ তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করে ভয়াবহ মানবতা বিরোধী যে অপরাধ সেই অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজকে অত্যন্ত ভালো কথা… যে অন্তবর্তীকালীন সরকার তার প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস তিনি গুম বিরোধী জাতিসংঘের যে সনদ আছে তাতে সই করেছেন। আমরা জানতাম আগের সরকার এটাতে (জাতিসংঘ সনদে) সই করে নাই।'
'আজকে আরো ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে স্বৈরাচারের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘ থেকে একটি দল এসেছে… এটা প্রাথমিক দল ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফান্ডিং টিম। কিন্তু এদের যে টার্মস অব রেফারেন্স গত দুই মাসে যে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে সেটা তারা তদন্ত করবে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, যে আপনারা জাতিসংঘের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। গত ১৫ বছর ধরে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়েছে, হত্যা হয়েছে, গুম হয়েছে প্রত্যেকটির তদন্তের ব্যবস্থা করুন। এটা আপনারা (অন্তর্বতীকালীন সরকার) বললে জাতিসংঘ অবশ্যই করবে।'
আরো পড়ুন: আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে ইতিহাসের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা
ফখরুল বলেন, ‘এটা (জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত) আমরা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে আমি মিডিয়ার ভাইদের বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে অত্যাচার-নিপীড়ন-হত্যাকাণ্ড, গুম ঘটনা হয়েছে প্রত্যেকটির তদন্ত এই জাতিসংঘের কমিটি দিয়ে করতে হবে এবং তার ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।'
গুম পরিবার: রাষ্ট্র থেকে ভাতা দিতে হবে
গুম ঘটনায় ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকারের তদন্ত কমিশন গঠনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, একটা কমিশন গঠন করেছেন। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু একইসঙ্গে আজকে আমি আহ্বান জানাতে চাই এই সরকারকে যে আপনারা প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবার তাদেরকে ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।’
কারণ আমরা জানি এখানে অনেক পরিবার আছে যারা অনেক কষ্ট করে তাদের পরিবার চালাচ্ছে, ছেলে-মেয়েদেরকে মানুষ করছে, স্কুল-কলেজে পড়াচ্ছে… এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই পরিবারগুলোর পাশে এসে দাঁড়ানো। গণতন্ত্র এসেছে… আমরা গণতন্ত্র উপভোগ করব কিন্তু এই গুম হওয়া পরিবারের বাচ্চাগুলো তাদের যে লস হয়েছে, পিতাকে হারিয়েছে তা কোনদিন ফেরত পাবে না, যে তার স্বামীকে হারিয়েছে সে তা ফেরত পাবে না… তাই এই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব গ্রহন করা।
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ‘বেদনা-কষ্টে’র সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কষ্টের কথা বলছে… এই বাচ্চাটা সাফা যখন বলছে, আমি আমার বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাটতে চাই, ঈদের নামাজ পড়তে যেতে চাই তখন পিতা হয়ে আমি তার কষ্ট সংবরণ করতে পারি না।
আজকে তাদের সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যারা গুম ঘটনার সঙ্গে দায়ী আমরা তাদের কমবেশি চিনি। যারা দায়িত্বে ছিলেন, র্যাবের দায়িত্বে ছিলেন, পুলিশের বিশেষ বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।
ওই সমস্ত ভয়ংকররা কেনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না প্রশ্ন ফখরুলের
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব কষ্ট পাই যখন দেখি রাজনৈতিক নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই সমস্ত ভয়ংকর ব্যক্তি যারা আমাদের হত্যা করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার দেখতে পারবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দেখতে পারব। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ যেন একটা জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করতে সক্ষম হবো।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এই সংহতি সভা হয়। এতে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের কষ্টের আর্তি এই সংহতি সভায় মর্মস্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অশ্রুসজলে সহমর্মিতা জানান দেয়।
আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গুম হওয়া পরিবারের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ মানববন্ধন করে। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও নিখোঁজদের স্বজনরা।
এখনো পূর্ণ গণতন্ত্র পাইনি
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে যারা আছে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এখন পর্যন্ত আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র পাইনি।
আসুন আমরা এই সরকারের সঙ্গে যেটা আমাদের আন্দোলনের ফসল তাকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করি এবং এই সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই সরকার যেন সক্ষম হয় সফলভাবে একটি সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন করা যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, তারা একটা পার্লামেন্ট গঠন করবেন, সরকার গঠন করবেন…. জনগনের সমস্যার সমাধান করা যাবে।
এখনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা কম্পাসেন্সে ভুগবেন না, সন্তুষ্টির কোনো কারণ নাই। এখনো অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এখনো দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। অপেক্ষা করে আছে কখন সুযোগ পাবে সেই সুযোগে তারা স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর অ্যাটাক করবে।
তাই আজকে যে ঐক্য, ইস্পাতকঠিন ঐক্য তৈরি হয়েছে সেটাকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। আমরা এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাফল্য চাই, আমরা চাই, তারা অতিদ্রুত এই গণতন্ত্র ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন, সংস্কারের ব্যবস্থা করবেন।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, গুম হওয়া ইলিয়াস আলী স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের মেয়ে খাদিজা আখতার, মায়ের ডাকের সমনন্বয়ক সানজীদা ইসলাম তুলিসহ গুম হওয়া পরিবারের কয়েকজন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গুম হওয়া সদস্যদের স্মরণ করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন: জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট অনেক আগেই ভেঙে গেছে: মির্জা ফখরুল