×

রাজনীতি

যেভাবে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ছাড়েন শেখ হাসিনা

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪১ পিএম

যেভাবে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ছাড়েন শেখ হাসিনা

ছবি: সংগৃহীত

গণআন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে গত সোমবার দেশ ছাড়েন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কারফিউ বলবৎ করতে বেসামরিক মানুষের ওপর সেনারা গুলি চালাবে না। বিক্ষোভকারীদের দমনে শক্তি প্রয়োগ অর্থাৎ গুলি না চালানোর যে সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী, মূলত তাতেই নির্ধারণ হয়ে যায় শেখ হাসিনার ক্ষমতার ভাগ্য। 

এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কীভাবে শেখ হাসিনার পতনের ঘণ্টা বাজল সে বিষয়ে বুঝতে পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টার ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করেছে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি বলছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া একজন ভারতীয় কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে পর সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে তাকে জানিয়ে দেন, তিনি যেমনটি চাচ্ছেন সেভাবে সেনা সদস্যদের পক্ষে অবরোধ কার্যকর করা সম্ভব নয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি ইন্ডিয়া’ এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের সময় সঙ্গে করে দুটি স্যুটকেস নিয়ে গেছেন। ওই স্যুটকেসগুলোতে ছিল কিছু পোশাক ও জরুরি নথিপত্র। এছাড়া আর কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি তিনি। 

বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডাকা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, সেটার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁজোয়া যানে উঠে লাল রং দিচ্ছে, সামরিক যানে পর্যন্ত উঠে পড়ছেন, এরপরও কেন তারা কঠোর হচ্ছে না, সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে বিশ্বাস করে এই কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

একপর্যায়ে শেখ হাসিনা আইজিপিকে দেখিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ) তো ভালো করছে। তখন আইজিপি জানান, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়। ওই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। কিন্তু, শেখ হাসিনা সেটা মানতে চাচ্ছিলেন না। তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন। তখন তিনি একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চান জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য। ততক্ষণে গোয়েন্দা তথ্য আসে, বিপুল ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে রওনা হয়েছে। 

দূরত্ব বিবেচনায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে শাহবাগ থেকে গণভবনে আন্দোলনকারীরা চলে আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ভাষণ রেকর্ড করতে দিলে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ডের সময় না দিয়ে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাদের কয়েকটি লাগেজ ওঠানো হয়। তারপর তারা বঙ্গভবনে যান। সেখানে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোনসহ ভারতের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেন শেখ হাসিনা।

গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর শাসন করেছেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলগুলোর হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং প্রধান বিরোধীদের নির্বাচন বয়কট করার মধ্যে গত জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মত ১৭ কোটি মানুষের দেশে নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। উচ্চ বেকারত্বের মধ্যে খুবই আকাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট অংশের মানুষের জন্য কোটা সংরক্ষেণে আদালতের এক সিদ্ধান্তের পর শুরু হওয়া আন্দোলনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ক্ষমতার ওপর শেখ হাসিনার কঠোর নিয়ন্ত্রণ। আদালতের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হলেও খুবই দ্রুতই আন্দোলন মোড় নেয় শেখ হাসিনাকে উৎখাতের দাবিতে।

সেনাবাহিনীর সাবেক তিনজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের প্রকাশ্য ঘোষণা দেননি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তবে বিক্ষোভের পরিসর এবং ২৪১ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে সমর্থন দেয়ার পথ রুদ্ধ করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাদের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি ছিল। বিষয়টি হয়ত সেনাপ্রধানের ওপর চাপ তৈরি করেছিল। কারণ, সেনারা বাইরে ছিল, কী কী ঘটছে তারা তা দেখছিলেন।

বৈবাহিক সূত্রে শেখ হাসিনার আত্মীয় ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি যে আর প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন না, তার ইঙ্গিত পাওয়া শনিবারের এক বৈঠক থেকে। ওই দিন অলংকৃত কাঠের চেয়ারে বসে উর্দিধারী কয়েকশ কর্মকর্তার উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। ওই বৈঠকের কিছু বিষয় পরে প্রকাশ্যে আনে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, জেনারেল (সেনাপ্রধান) ঘোষণা দেন জীবন বাঁচাতে হবে এবং সেনা কর্মকর্তাদের সংযম দেখানোর আহ্বান জানান। শক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে সহিংস আন্দোলনকারীদের দমন করবে না, এটি ছিল তার প্রথম লক্ষ্মণ। বিষয়টি হাসিনাকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সোমবার যারা রাস্তায় নামেন তাদের মধ্যে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহেদুল আলম খান বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের আটকায়নি। সেনাবাহিনী যেটা বলেছিল, তারা সেটা করেছে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App