‘বিএনপির পরিচয়ে কেউ অপকর্ম করলে ধরিয়ে দিন’
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম
তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পুলিশ কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালগু জনগোষ্ঠির ওপর আজ থেকে এই মুহুর্ত থেকে হামলা কিংবা নৈরাজ্য বন্ধ করুন। এমনকি বিএনপির কেউ দলের নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথানিয়মের অভিযোগ দায়ের করুন। দেশবাসীর প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না দয়া করে। বিচারের ভার নিজ হাতে দয়া করে নেবেন না। কেবল দৃষ্টান্ত অনুসরণ নয়, নিজে দায়িত্বশীলতার এবং মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপি সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এক বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, প্রিয় দেশবাসী হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গৌরবকে কালিমামুক্ত করার ষড়যন্ত্র এরই ভেতরে আবার শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ করতে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ষড়যন্ত্রকারীদের এই নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। আমি এই মুর্হুতে সারাদেশের বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বলতে চাই, আপনারা যিনি যেখানে বসবাস করেন সেখানে আপনার বন্ধু কিংবা পাড়া প্রতিবেশি তিনি মুসলমান-বৌদ্ধ-হিন্দু-খৃষ্টান ধর্মীয় পর্যায়ের যাই হোক না কেনো, বিশ্বাস যাই হোক না কোনো তার নিরাপত্তায় আপনি দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ভূখন্ডে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষের একটিই পরিচয় সেটি হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি।
তারেক রহমান বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। পুলিশ জনগনের শত্রু নয়। অত্যাচারি হাসিনা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগনের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেকে বিশ্বাস করে পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি মেনে, দেশের আইন কানুন মেনেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে।
হাসিনা পালানোর পরে বর্তমানে সুকৌশলে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। পুলিশকে অকার্য্কর করে দেয়া গেলে দেশকে অস্থিতিশীল করা সহজ। ধর্মীয় জনগোষ্ঠির মনে নিরাপত্তাহীন সৃষ্টি করা সহজ।
তিনি বলেন, অতীত সমালোচনা কিংবা নৈরাজ্যের বদলে নৈরাজ্য কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। শাসন-প্রশাসনকে সময়পোযোগী করে গড়ে তোলা এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দাবি। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ কিংবা প্রমোশনে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকতে হবে। দেশকে আমদানি নির্ভর কিংবা বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে হবে আমাদেরকে। দেশীয় উৎপাদন এবং উপাদনের প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়াতে হবে। দেশের কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকার সমস্যার সমাধান দ্রুতই চেষ্টা করতে হবে। গার্মেন্টস, শ্রম, ঔষধ, সোর্স আউট সোসিংসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নিয়ে রপ্তানিমুখী বাজারের আওতায় আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে দেশে-বিদেশে শ্রম বাজারে আমাদেরকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো দক্ষ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য ও চিকিসা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও বাস্তব সম্মত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতির উপরে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইন শাসন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশে ও প্রবাসে এমন অনেক বাংলাদেশিরয়েছেন যারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট হতে চান না। সুতরাং এইসব গুনি মানুষদের রাষ্ট্র পরিচালনায় ও নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ চালু করার প্রস্তাব বিএনপি রেখেছে এরই ভেতরে। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গুনগত পরিবর্তন না পারলে আমাদের এই বিপ্লবে কাঙিত ফল মিলবে না।
তিনি বলেন, সাড়ে ১২ কোটি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিলো স্বৈরাচার। গত ১৫/১৬ বছর ধরে জনগনের ওপরে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছিলো। স্বৈরাচার গণহত্যাকারী হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে হাজারো শহীদের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। ছাত্র-জনতার এই রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দ্রুততম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। স্বৈরাচার হাসিনা পতনের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবকে সার্থক এবং সফল করে আসুন নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল আচরন করি। বিভেদ-বিরোধ, হিংসা-প্রতিহিংসা নয়। আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করি, প্রতিষ্ঠা করার শপথ গ্রহন করি। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দুর্ণীতিমুক্ত এবং জবাবদিহিমূলক নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারুণের জন্যে যে তারুণের নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ এই বিপ্লব সফল হয়েছে। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য,তারুণ্যের জন্য্ একটি নিরাপদ ভবিষ্যতে গড়তে পারবো। সবাই যার যার এলাকায় জনগনের সঙ্গে থাকবেন, জনগনের সঙ্গে রাখবেন। কারণ জনগনই বিএনপির সকল ক্ষমতার উৎস্।
তারেক রহমান বলেন, প্রিয় দেশবাসী আপনাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। প্রমাণ হয়েছে আবারও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানে না, মানতে পারে না এবং মানবে না। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো অপশক্তি বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে ইনশাল্লাহ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আর ২০২৪ সালের মুক্তিযুদ্ধ উভয় মুক্তিযুদ্ধেই জনগনের বার্তা একটি। কি সেটি? সেই বার্তা হলো শর্ত দিয়ে স্বাধীনতা হয় না। স্বাধীনতা প্রিয় জনগন, স্বাধীনতা অর্জন কিংবা স্বাধীনতা রক্ষায় কোনো শর্ত মানে না, মানতে রাজি না।
তিনি বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনা পালিয়ে যাবার পরে আমি প্রিয় বাংলাদেশ থেকে আমি যত মানুষের সাথে কথা বলেছি, প্রতিটি মানুষ অনুভূতি প্রকাশের প্রথম উচ্চারণ ছিলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে বলছি। দেশ এবং জনগনকে স্বাধীন করতে গিয়ে চোখে মুখে বুকে গুলি আলিঙ্গন করা আবু সাঈদ কিংবা মুগন্ধের মতন হাজারো ছাত্র-ছাত্রী-তরুণ-তরুণীকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য, অগনিত মানুষ। এর ভেতরে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন, এর ভেতরে রয়েছেন সাধারণ মানুষ, গৃহিনী, এর ভেতরে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীবৃন্দ।
গণতন্ত্র বিজয়ের ইতিহাসে এই মানুষগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে দেশের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি একজন মা যেমন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে সেদিন রাজপথে শামীল হয়েছিলেন। একইভাবে শিক্ষক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক কর্মী, শ্রমিকসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন। ১৫২,’৭১ কিংবা ’৯০ এর মতন দেশের ছাত্র সমাজ বিজয়ের নতুন অমর একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ দেখেছে আরেকটি বিজয়। আমি বিএনপিসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দলমত নির্বিশেষে অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের বীর জনতাকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পোষাক শিল্পে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং বলেন, এরা আন্দোলের শক্তি নয়, গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি।