×

রাজনীতি

জি এম কাদের

১০ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম

১০ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন?

ছবি: সংগৃহীত

বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রয়োজনের থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এই ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে। উৎপাদন ছাড়াই সেগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে। অথচ ওই কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন।

জি এম কাদের বলেন, রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোন ঘাটতি হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে, এমনকি শিল্পাঞ্চলেও লোডশেডিং বাড়ছে। এ কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে যখন সারাদেশে তীব্র তাপদাহ ছিলো, তখন সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এসময় দেশের গ্যাস সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, অচিরেই দেশ জ্বালানী সঙ্কটে পড়তে পারে। এসময় তিনি কোটি কোটি টাকা ঋণ খেলাপি, ব্যাং লুটপাট, আর্থিক সংকটসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেন।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে জি এম কাদের বলেন, আমাদের চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। প্রয়োজনের বেশী ১০ হাজার মেগাওয়াটের উপরে উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে আছে। এই ১০/১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন এবং সরবরাহের বিষয়টি পিডিবির কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে বিবেচনায় আসেনি। সংকট পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ বেসরকারি খাতে অনেক বেশী সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিলো। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি মালীকানাধীন কেন্দ্র কখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি বা কম সংখ্যক বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এর পরিমাণ তাদের সক্ষমতার এক থেকে ২ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ সময়েই উৎপাদন বিহীন অলস সময় পার করেছে।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে সরকারী হিসাবে ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাপ প্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে। ওই সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে। যদিও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার অনেক সময়ে জরুরি ছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, সেটি করা হয়নি। এর অনেকগুলো সচল ছিলো না বলে আশংকা করা হচ্ছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছে মূলত এ সংস্থার আওতাধীন গ্রাহকেরা। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৫৫ শতাংশই এ সংস্থার। তীব্র তাপদাহের সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশী লোডশেডিংয়ের শিকার হয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, শিল্পকারখানায় লোডশেডিং না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না। গাজীপুরের একটি কারখানায় জেনারেটর চালু রাখলে আগের মাসে ১৫ লাখ টাকার ডিজেল লাগতো, এখন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগছে।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সংকট মোকাবিলার কথা বলে ২ বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়। কয়েকদফা মেয়াদ বাড়ানোর কারণে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইনটি কার্যকর থাকবে। যে আইনে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয়, দফায় দফায় অতিরিক্ত মূল্যে চুক্তি নবায়ন, অতি উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, বিনা দরপত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ দেয়া হয়। যা আমাদের অর্থনীতিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App