×

রাজনীতি

ফোনে বলেছিল আসলে মেরে ফেলবে, পরোয়া করিনি : প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম

ফোনে বলেছিল আসলে মেরে ফেলবে, পরোয়া করিনি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেইদিন অনেকেই ফোন করে বলেছিল আপনি আসবেন না, আসলে মেরে ফেলে দেবে। আমি পরোয়া করিনি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি ফিরে আসবই। ১৭ মে (১৯৮১ সালের) ওইভাবে এসেছিলাম। পরে ৭ মে এসেছিলাম ২০০৭ সালে। আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের মাটিতেই মরব, কিন্তু আমি আসব।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সরকারি বাধা উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন। এ নিয়ে সরকার দলের আরেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেনও কথা বলেন।

সেসময়কার সরকারের রক্তচক্ষু ও নিজের দলের কিছু নেতার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৭ বছর আগের ৭ মে তারিখে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হওয়ায় দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী দিনটিকে তার জন্য অনন্য দিন বলেও মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার সংসদে ওই সময়কার ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার গ্রেপ্তার হয়েছি। অনেক বাধা, সরাসরি গুলি। বোমা, গ্রেনেড সব কিছু অতিক্রম করে আজকে জনগণের সেবা করতে পারছি। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

এক এগারোর সময় জরুরি অবস্থা জারির পর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ২০০৭ সালের ৭ মে তিনি দেশে ফেরেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এরপর তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য অনন্য দিন। আমি সেদিন শত বাধা অতিক্রম করে ফিরে এসেছিলাম। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টাও ফোন করে বলেছিলেন আপনি আসবেন না। আপনার বাইরে থাকার যা যা লাগে আমরা করব। আবার কেউ কেউ আমাকে ধমকও দিয়েছিল। এ কথা বলা হয়েছিল বাংলাদেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই মেরে ফেলা হবে।

আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের মাটিতেই মরব, কিন্তু আমি আসব। সমস্ত এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়েছিল আমাকে যাতে বোডিং পাস দেওয়া না হয়। আমেরিকার বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে করে লন্ডনে আসি। সেখানে আসার পরে যখন প্লেনে উঠতে যাব, তখন আমাকে উঠতে দেয়া হয়নি।

সেদিন যেভাবে হোক বাংলাদেশে আসার প্রতিজ্ঞার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এমনকি যখন আমি বিমানবন্দরে রওনা হয় তখন অনেকেই ফোন করে বলেছিল আপনি আসবেন না, আসলে মেরে ফেলে দেবে। আমি পরোয়া করিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তখন বলা হয়েছিল কেউ যাতে বিমানবন্দরে না যায়। এমনকি আমার দলের ভেতর থেকেও তখন দলের যিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি সবাইকে বলে দিয়েছিলেন কেউ বিমানবন্দরে গেলে বহিষ্কার করা হবে। কয়েকজনের নাম নির্দিষ্ট করা ছিল, আমাদের নেতাকর্মী কেউ রাস্তায় থাকতে পারবে না।

আমি শুধু মেসেজ দিয়েছিলাম সকলেই থাকবে, তবে আমরা গেরিলা যুদ্ধ করেছি, সবাই ঘাসের সঙ্গে মিশে থাকবে। আমি প্লেন থেকে না নামা পর্যন্ত তোমরা বের হবে না। আমাকে বলা হয়েছিল গাড়িতে উঠলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি উঠে ড্রাইভারকে বলেছিলাম যেখানে মানুষ আছে সেখান দিয়ে যাবে। ফ্লাইওভারে উঠবে না।  

সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, দলের কিছু লোকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, সংবর্ধনাই শুধু নয়, আমাকে নিরাপত্তাও দিয়েছে। যেন আমাকে কোনো দিকে নিতে না পারে। এরপর তো এক প্রকার হাউজ অ্যারেস্ট (সুধা সদন) ছিলাম। কাউকে ঢুকতে দিতো না। হঠাৎ কালেভদ্রে দু’একজন আসতে পারতো আমার সঙ্গে।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক যে সাবিনা ইয়াসমিন অসুস্থু। আমি অনেকটা গেরিলা কায়দায়ই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমি জানি আমাকে বেরোতে দেবে না। সেই সময়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সোজা হাসপাতালে চলে যাই। তখন আমি কতগুলি কথা বলেছিলাম। কারণ সেই সময় দেশ চালাচ্ছে কে? সেটা আমার প্রশ্ন ছিল। সেদিন আমি খুব কড়া কথা কিছু বলি। পরদিন সকালেই পুলিশ হাজির আর্মি হাজির এবং আমাকে অ্যারেস্ট করে। সংসদ ভবনের একটা (ভবন) তখন ওটা প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল-সেখানে আমাকে নিয়ে আসে। সমস্ত একেবাবে ফাঙ্গাস পড়া। খুবই নোংরা একটা ভবন, সেখানে আমাকে বন্দি করে রাখে।

তিনি বলেন, শুধু ওই দিন নয়, ১৯৮৩ সালে এরশাদ সাহেবও আমাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল ৩০ নম্বর হেয়ার রোড লাল দালান-সেখানে রেখেছিল। সেখান থেকে ডিজিএফআইয়ের অফিসে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে। এরশাদ সাহেবের সময়ে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করে। হাউজ অ্যারেস্ট করে। কখনো সারারাত কন্ট্রোল রুমে বসিয়ে রাখে। এরকম বারবার গ্রেপ্তার হয়েছি। অনেক বাধা, সরাসরি গুলি। বোমা, গ্রেনেড সব কিছু অতিক্রম করে আজকে এখানে এসে জনগণের সেবা করতে পারছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App