×

রাজনীতি

মির্জা ফখরুল

গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম

গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে

বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির গঠিত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সংগঠন শক্তিশালী করে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে, বিশ্বপ্রেক্ষিতকে সামনে নিয়ে, সামগ্রিক অবস্থাকে সামনে নিয়ে আমাদের রাজনীতি, কৌশল আবারো সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে… যেভাবে গত দিনগুলোতে এগিয়েছি। সকলকে মনে রাখতে হবে, আন্দোলন সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।গণতন্ত্র, ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলে সেই সংগ্রামকে আরো বেশি জোরদার করতে হবে।

বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির গঠিত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বক্তব্য রাখেন।

দেশের অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিস্টদের কবলে পড়েনি, বাংলাদেশ বর্ণবাদীদের কবলে পড়েছে। আমাদের বিএনপি যারা করে তাদের ঘর-বাড়ি পর্যন্ত দখল করে নেয়া হচ্ছে, আমাদের বিএনপি যারা করে তাদের জমি দখল করে নেয়া হচ্ছে… তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেয়া হচ্ছে, তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে চাকুরিরর কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি দুঃসম্পর্কের আত্বীয় যারা আছে তাদেরকে বিএনপি হিসেবে চিহ্নিত করে বঞ্চিত করা হচ্ছে… এটা বর্ণবাদ ছাড়া কিছু নয়।

দেশটাকে তারা দুইটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে… একটা ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আরেকটা ভাগ হচ্ছে বিরোধী দল। এই অবস্থা তৈরি করে তারা এই দেশকে নিজেরাই সাম্প্রদায়িক একটা অবস্থা তৈরি করেছে। তারা আবার দাবি করে কালকেও বলেছে যে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের নাকি এই জেহাদ সব সময় অব্যাহত থাকবে। যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা নিজেরা গোষ্ঠি তৈরি করেছে, বর্ণবাদ সৃষ্টি করছে তাদের মুখে একথা শোভা পায়। শুধু কথা বলে মানুষের সম্পদ লুট করে, মানুষজনকে সর্বশান্ত করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।”

আরো পড়ুন: সরকার জনগণের ভোটাধিকারের বৈধতা কখনোই দিবে না

তিনি বলেন, প্রত্যেকদিন দেখছেন কি হারে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলা হচ্ছে, কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলা হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধবংস করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে যেখানে স্বেচ্ছাচারিতা, সেখানে বিভিন্ন রকমের অসামাজিক কার্য্কলাপ ছাড়া সেখানে আর কিছু হচ্ছে না। যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদেরকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যাদের যোগ্যতা নেই তাদেরকে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে….সব প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমনকি প্রাইমারি স্কুলগুলোতেও সেই দলীয়করণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় পুরো দেশকে রাষ্ট্রকে তারা গিলে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেখবেন যা কিছু বাংলাদেশে শুভ কাজ হয়েছে তা বিএনপির নেতারাই করেছেন। তরুন সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘চলমান আন্দোলনে এতো ত্যাগের পরেও আমার কাছে মনে হয় তরুণদেরকে আরো শক্ত করে জেগে উঠতে হবে, যুবকদেরকে জেগে উঠতে হবে। ২৮ তারিখের ঘটনায় পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমরা তরুণদেরকে বোধহয় সেভাবে নামাতে পারিনি।

আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষকে জাগিয়ে তোলা এটা এখন আমাদের প্রধান কাজ। মানুষকে আবারো সংগঠিত করতে হবে, জনগণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ভিন্ন বাংলাদেশ, আজকের বিশ্ব ভিন্ন বিশ্ব, আজকে যে ভূ-রাজনীতি আছে এই ভূ-রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরিচালিত… স্বার্থ স্বার্থ স্বার্থ…নিজ নিজ দেশ তাদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কিছু ভাবে না। সেখানে মানবাধিকার, অন্য দেশের প্রতি, তার সার্বভৌমত্বের প্রতি যে শ্রদ্ধা-সম্মান সব কিছু ভূলন্ঠিত হচ্ছে।

আজকে দেখুন চারদিকে …কি ভয়াবহ কাণ্ড। গাজায় প্যালেস্টাইনে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে নির্বিচারে একটা গণহত্যা চলছে অথচ তারই প্রতিবেশি মুসলিম দেশগুলো এখন পর্যন্ত সেভাবে কথা বলছে না, গোটা বিশ্ব সেইভাবে কথা বলছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটা রেজুলেশন পাস হয়েছে গতকাল। তার পরে গাজায় বোমা মেরে প্রায় ১৫ জন হত্যা করেছে। আজকে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করেছে, সেখানে যুদ্ধ করছে প্রায় দুই বছর ধরে, সেখানে অসংখ্য লোক মৃত্যুবরণ করছে, মারা যাচ্ছে….সারা বিশ্বের যারা বৃহৎ-ধনী দেশ তাদের একটাই লক্ষ্য সেটা হচ্ছে তাদের স্বার্থ আদায় করা।

আরো পড়ুন: খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ল

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারও বিশ্বাস করে না। ৭২-৭৫ এ তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) একবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলো জাতীয় সংসদের ভেতরে দাঁড়িয়ে মাত্র ১১ মিনিটে এবং এবার এরা সারাদেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। আমরা নয় বিশ্বের একটি নামী দামী নিউজ ম্যাগাজিন ‘টাইম ম্যাগাজিন’ তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নাম দিয়েছে বাকশাল টু। কাজেই এই সরকার একদলীয় সরকার তাদের কথা আমরা শুধু বলছি না, সারা বিশ্ব বলেছে যে, এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদের ওপরে জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন করছে, বাংলাদেশের বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেয়া হয়েছে। ৫০ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, আমি আজকে ছাত্র সমাজ যুব সমাজ যারা এখানে শ্লোগান দিচ্ছেন এই দেশ তো আপনাদের দেশ। আপনাদের আগের ছাত্ররা জীবন দিয়েছে… আমি তার সাক্ষী। একাত্তর সালে আমি তাদেরকে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। তাই তরুণ সমাজকে বলবো, প্রিয় দেশ আপনাদেরকে ডাকছে, দেশবাসী আপনাদেরকে ডাকছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন, মো্বাইলটা বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসুন। শ্লোগান আর ভোটের মাধ্যমে কাজ হবে না, আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এই অবস্থার অবসান করতে হবে। জিয়াউর রহমান মানে আমাদের আদর্শ। ৬ বছর রাষ্ট্র শাসন করার পরে তার ব্যাংকে একটা টাকাও নাই, কোনো জমি নাই, বাড়ি নাই, জীবন উৎসর্গ করে গেছেন দেশের জন্য। সেই নেতার আদর্শের মানুষজন আমাদের কি শুধু বসে বসে খালি শ্লোগান দিলে হবে? দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App