×

রাজনীতি

মেজর হাফিজ

ভারতের আনুগত্য নিয়ে আ.লীগ দেশ চালাচ্ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:২১ পিএম

ভারতের আনুগত্য নিয়ে আ.লীগ দেশ চালাচ্ছে

ভারতের আনুগত্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম।

শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্বাধীনতা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, আজকে একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু যে পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতি বিষয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা এটা বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস। তাদের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) যখন বিপদে পড়ে তখন বলেন যে, দিল্লী আছে আমরা আছি। এই ধরণের কথা বলতে লজ্জ্বাবোধও তাদের হয় না।

দিল্লী থাকলে এই সরকার আছে। কতখানি নির্লজ্জ্ব প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়ে আনুগত্য স্বীকার করে যাচ্ছে। আমরা কি এজন্য যুদ্ধ করেছি? রাওয়ালপিন্ডি থেকে সরে এসে আমরা কি দিল্লীর অধীনস্থ হওয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছি? কখনোই না। বাংলাদেশের স্বাধীন চেতা মানুষ কখনোই এই ধরনের গোলামী মেনে নেবে না।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে হাফিজ বলেন, ‘‘বিএনপি পথ নির্দেশ করেছে তারেক রহমান… মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ (মহাসচিব) শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্বাধীনতার মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করার জন্যে, স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহকে বাস্তবায়ন করার জন্যে বিএনপি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপির সংগ্রাম জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাবার সংগ্রাম, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রাম।

আমরা দেশবাসীর জন্য সংগ্রাম করছি… এই সংগ্রামে অবশ্যই আমাদেরকে জয়ী হতে হবে, এই সংগ্রামে চুল-দাঁড়ি পেকে গেলেও মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে… আপনারা দেশের আদর্শ। আপনাদের দিকে তাকিয়ে একজন তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। যাদের আজকে চুল-দাঁড়ি সাদা হয়ে গেছে ১৭ /১৮ বছর বয়সে ছিলো সাব মেশিন গান- সেভেন বন্ড ৬২ চাইনিজ রাইফেল… তিনি বীরবিক্রমে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করেছেন… আজকে এই বৃদ্ধকে দেখে অনেকে মনে করতে পারবে না কিন্তু আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যেতে হবে।

আরো পড়ুন: গুম-খুন ও পঙ্গু নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে সেল গঠন করছে বিএনপি

দেশের বর্তমান অবস্থায় দেখে ৮০ বছর বয়েসী অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম আক্ষেপ করে বলেন, দুঃখ লাগে ৮০ বছর বয়েসে গাড়ি পোঁড়ানো মামলায় এই স্বাধীনতার মাসে জেলে যেতে হলো। আমি আশা করি এজন্যে তারা (ক্ষমতাসীনরা) একদিন লজ্জ্বিত হবে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এভাবে অসম্মানের জন্য। অপরাধ করলে নিশ্চয়ই সাজা হবে। কিন্তু আমি এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বিমান বাহিনী প্রধান) জনতা ব্যাংকের গাড়ি পোঁড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন তো কোনো ঘটনা্ই ঘটেনি ঢাকা শহরে।

ঢাকার জন্যে দিল্লী আছি তো আমরা আছি। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এখন বৃদ্ধ বয়েসে, আগামী দিনগুলোতে আমরা-আপনারা আগামী প্রজন্মকে দীক্ষা দিয়ে যাবো দেশকে ভালোবাসো… দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনমানসিকতা অর্জন করো। এটাই হলো আজকের দিনে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছি এই সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারে না। অবশ্যই দুঃশাসনের অবসান হবেই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্ম তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান রাজনৈতিক দল তারা জনগণের ভোট পেয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দোষের কিছু নাই। ২৪ বছর অনেক অন্যায়-অবিচার-বঞ্চনার শিকার আমরা হয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ন্যায্য দাবিদার ছিলেন, সেটাই তিনি চেষ্টা করেছেন… দোষের কিছুই নাই।

কিন্তু তার দলের অনুসারীরা প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিয়ে গিয়েছেন। তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেব মিলিটারি মুভেমেন্ট শুরু হওয়ার পরেই তিনি সম্ভবত সর্বশেষ শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সেখানে টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন… পাকিস্তান সেনা বাহিনী আক্রমনাত্মকভাবে জনতার উপরে হামলা করবে শিগগিরই.. রাজপথে তারা ছড়িয়ে গিয়েছে...আপনি স্বাধীনতার ঘোষণাটি দেন। তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছিলেন, আমি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নিতে পারি না… আমি বিচ্ছন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হবো যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেই, এটি হলো বাস্তব সত্য। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদকের কথা।

আরো পড়ুন: ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

তিনি বলেন, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) অনেক কৃতিত্ব আছে। কিন্তু একজন সৈনিক চট্টগ্রাম থেকে জীবন বিপন্ন করে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে এই কৃতিত্ব আপনাকে দিতে হবে। এটুকু কৃতিত্ব অন্যকে দিতে কেনো এতো অপরাগতা? কেনো বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়া্উর রহমানকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলে প্রমাণ করতে চায়? তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধূলিসাত করে দিয়েছে। অবাক হয়ে ভাবি কিভাবে দেশটা নষ্ট হয়ে গেলো।

দেশে যা কিছু করে ভালো-খারাপ সব কিছু বিএনপি করেছে। আমরা ক্ষমতায় নেই এতো বছর এই জিনিসপত্রের দাম নাকি বিএনপি বাড়াচ্ছে তাদের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য। আমিও বানিজ্যমন্ত্রী ছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের শেষ ছয় মাস। চেষ্টা করেছি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে… ওই সময় বাজার দর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। আমরা জনগণকে খেজুরের বদলে বরই খাওয়ার উপদেশ দেইনি। আজকে মানুষ দিশেহারা দ্রব্যমূল্যের অবস্থায়।

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘অরক্ষিত স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিহীন বিপন্ন বাংলাদেশ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সাহাবুদ্দিন রেজার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হালিম মিঞা, সৈয়দ সরোয়ার আলম, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, ফরিদ উদ্দিন, মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শাহ নেছারুল হক, কাজী মনিরুজ্জামান মুনির, নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App