×

রাজনীতি

রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের গণসংযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম

রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের গণসংযোগ

ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকায় এক গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১ টায় আয়োজিত এ গণসংযোগটি চলে জাতীয় প্রেসক্লাব, তোপখানা রোড হয়ে পল্টন পর্যন্ত।

গণসংযোগ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দুই যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। 

গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচীতে আরো অংশগ্রহণ করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবুরো সদস্য কামরুল আহসান, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি  ও জাসদ নেতা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আসাদুল্লাহ তারেক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক ডা. অসিত বরণ রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শিল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি, সিপিপি, বাসদ, ঐক্য ন্যাপ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, যুব মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্ট, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রগতিশীল সামাজিক সংগঠন ও ছাত্র-যুব সংগঠন এই গণসংযোগ কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করেন।

গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচির প্রারম্ভে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন সংক্ষিপ্ত স্বাগত বক্তব্য রাখেন। 

এসময় তিনি বলেন, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তা এখনো পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় নি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন নামে একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।

গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে সর্বস্তরের লোকজনের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিষয়ে লিখিত প্রচার পত্র বিতরণ করা হয়। প্রচারপত্রে, উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম আদিবাসী অধ্যুষিত বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি অঞ্চল। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐতিহাসিক এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সকলে তখন আশা করেছিল, সাংবিধানিক কাঠামোতে এইসব আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাতন্ত্র্য অস্বীকারের মধ্য দিয়ে যে ঐতিহাসিক ভুল এই রাষ্ট্র করেছিল তার কিছুটা হলেও সংশোধন হবে উল্লিখিত চুক্তির মধ্য দিয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পেরোলেও এই চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যসহ সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। পাহাড়ে এখনো উপনিবেশিক কায়দায় পাহাড়ি মানুষের উপর শাসন ও শোষণ অব্যাহত আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার মূলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে গণসংযোগ কর্মসূচিতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মনে করেন। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাস স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আপামর মানুষ আশা করেছিল সকলের জন্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত হয় এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে আজ দীর্ঘ ৪ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও আমাদের বলতে হয়, এই রাষ্ট্র এখনো সকলের জন্য সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারে নি। আমরা চাই এই রাষ্ট্র সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করবে যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের অধিকার তথা ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী অঙ্গীকারকৃত অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত হবে।

গণসংযোগ কর্মসূচী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ৫ দফা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ২ দফা পৃথক দাবী উত্থাপন করা হয়। 

দাবীগুলো হচ্ছে-

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
  • পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে।
  • আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে।
  • পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
  • দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

 

সমতলের আদিবাসীদের জন্য আমাদের দাবীসমূহ

  • ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং আদিবাসী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
  • সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App