তারেক রহমানের জুম মিটিংয়ের দেয়া বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে(এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে ‘বিকৃত ডিপ ফেইক’ ভিডিও বানিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। রবিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুধু লন্ডনে বসে প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের আনাচে কানাচে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এই যোগাযোগের জন্য প্রধানত: ব্যবহার করা হয় জুম নামে একটি অ্যাপ। সম্প্রতি সরকারপন্থী কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্ম এবং মিডিয়া আউটলেট থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জুম মিটিংয়ে দেয়া বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করে দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপির শুভানুধ্যায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

এটা শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরই নন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়েও একই ধরনের ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। আবার সেই চাঁদাবাজির ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। সরকার পৃষ্ঠপোষকতায় এহেন রীতি বিরুদ্ধ অশালীন ও অপকর্মের হোতারা হয়ত এসব ভিডিও দিয়ে মেসেজ আদান-প্রদানকারী এ্যাপ মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার ব্যবহার করে আবারো এমন তৎপরতা চলাতে পারে। মিথ্যা অপপ্রচার আর অনাচারের সৃষ্টি ডামি সরকারের সারাক্ষণের সঙ্গী।

এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, আমি বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশ-বিদেশের সকল মানুষকে সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইবোনদের মাধ্যমে অবহিত করতে চাই, আপনারা এ সকল ডিপ ফেইক ভিডিও থেকে সতর্ক থাকবেন।

দলের কোন নেতা কখনোই এভাবে ভিডিও কল করে কারো কাছে টাকা চাইবেন না এই বিশ্বাসটা আপনাদের নিজেদের মধ্যে রাখবেন। কেউ যদি এভাবে ভিডিও কলে আপনাদের কাছে টাকা চায় তাহলে সাথে সাথে সেটা দলীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করুন, যাতে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় ফেসবুক এবং ইউটিউবে থাকা এমন ডিপ ফেইক ভিডিওগুলোকে শনাক্ত করে সেগুলো অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার এ্যাঙ্কর ও লোগো ব্যবহার করে বেশ কিছু ডিপ ফেইক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হয়েছিল। একইসঙ্গে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের অফিশিয়াল বক্তব্য প্রদানের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল। 

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদক বেঞ্জামিন পার্কিন ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে দেখানো হয়েছিল কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারপন্থী একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে এমন ভিডিও তৈরি করছে।

বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, আওয়ামী লীগের হয়ে বিরোধীদলকে হেয় করার জন্য এহেন অপতৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘নাহিদ রেইন’ নামে একজন প্রতারক ও জেল খাটা দাগি অপরাধী। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই দাগি অপরাধীকে অনলাইনে এবং অফলাইনে প্রকাশ্যে প্রমোট করছে ভিন দেশের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। নাহিদ রেইন এর টুইটার হ্যান্ডেলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলেই এই দুঃখজনক অপকর্মের সত্যতা পাওয়া যায়। ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করে বিএনপির নেতৃবৃন্দের নামে চাঁদাবাজির অপরাধে অবিলম্বে ‘নাহিদ রেইন’ নামক প্রতারক দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।