×

রাজনীতি

সংসদে মেনন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও এমপি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে ভিসানীতি, শ্রমিক অধিকার নীতি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছিল। অবাধ নির্বাচন নয়, রেজিমচেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনই তাদের লক্ষ্য ছিল বলে জানান তিনি। 

তবে এ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হয়ে যাওয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে ভোটারদের নগণ্য উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করলেও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না বলেও মন্তব্য করেন মেনন। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বর্ষিয়ান বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেনন এসব মন্তব্য করেন। 

মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর স্বাভাবিক সহযোগি ছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা দেশের অভ্যন্তরে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের প্রতিরোধ তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস, ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেল লাইন উপড়ে ফেলা নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটি হয়ে যাওয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং অসাংবিধানিক ধারার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিজয়। তবে এ কথা সত্য যে নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষকে যে অনাস্থাবোধ তা দূর করা যায়নি। কালো টাকার প্রভাব, বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ, কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব, শহরাঞ্চলগুলোতে ভোটারদের নগণ্য উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। কিন্তু তা কোনক্রমেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। 

উপজেলা নির্বাচনের জামানত পুনর্বিবেচনার আহ্বান

রাশেদ খান মেনন বলেন, এবারের নির্বাচন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। উপজেলা নির্বাচনকেও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা জন্ম নেবে কিনা সেটা দেখার। এই ব্যবস্থায় ধনীরাই থাকবে, গরিব-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ নয়। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের জামানত এক লক্ষ, ভাইস-চেয়ারম্যানের জামানত ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। এটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান মেনন। 

তিনি বলেন, আমাদের সামনে সাম্প্রতিক পাকিস্তানের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাকিস্তানের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘লন্ডন ষড়যন্ত্র’ বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের নির্বাচনকেও একই পরিণতি বহন করতে হত। তিনি বলেন, এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা। এটা একইভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ১১টি প্রধান প্রতিশ্রুতির প্রথম প্রতিশ্রুতি। বাজার সিন্ডিকেট না ভাঙার কোন কারণ নাই। কারণ কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের তা জানা। অন্য দলকে এ ব্যাপারে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দাম বেড়ে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতি উচ্চ বৈষম্য সৃষ্টি করছে

মেনন বলেন, বাংলাদেশে দরিদ্র বিমোচন বিশ্ব প্রশংসিত হলেও এই মূল্যবাড়া ও মূল্যস্ফীতি তাকে কোন দৃঢ় ভিত্তি দিতে পারছে না। মূল্যবাড়ার কারণে মধ্যবিত্ত ক্রমশঃ দরিদ্র, দরিদ্র অতি দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। এর আরেকটি ফলাফল হচ্ছে উচ্চ বৈষম্য। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবই বলছে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের চেয়ে ধনীরা ১১৯ গুণ বেশি আয় করে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ উচ্চ বৈষম্যের দেশে পরিণত হতে চলেছে। বৈষম্যের পরিমাপন গিনি সোহাগের মাত্র দশমিক ১ শতাংশ দূরে আছে। 

অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই মেনন মনে করেন, বর্তমান অর্থনীতিক পরিস্থিতি অর্থনীতি ক্ষেত্রে নয়া উদারনীতিবাদ অনুসরণের ফসল। এই নীতিতে মুষ্টিমেয়ের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটে। বাংলাদেশে এই নয়া উদারনীতিবাদেরও বিকৃত প্রয়োগ ঘটছে। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকই পরিণত হয়েছে নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে। দুর্বৃত্তায়িত এই অর্থনীতি বিস্তৃত হয়েছে রাজনীতি ক্ষেত্রে। ক্ষুদ্র ধনিকগোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের বৃত্তে বন্দী অর্থনীতি-রাজনীতি। একে এক কথায় অলিগার্কিই হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই অলিগার্কিই দেশের অর্থনীতি-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনীতি-নির্বাচন এসবই ক্রমশঃই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পরছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য দূরে থাক, আওয়ামী লীগ যে মিশ্র অর্থনীতির কথা বলেছে তার থেকে তারা আজ যোজন যোজন দূরে। দেশে জন্ম নিয়েছে করোনী ক্যাপিটালাইজেশন যার স্বাভাবিক সম্পর্ক সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে। আর সাম্রাজ্যবাদের স্বাভাবিক মিত্র মৌলবাদ। বাংলাদেশ সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। 

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের উপর পড়ছে

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তিনি বলেন, মানবতা থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলেও তারা আজ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মায়ানমারের গৃহযুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের উপর পরছে। এই হুমকির মুখে দাড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখন্ডতা রক্ষা করা আজ কর্তব্য। 

মেনন বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে কিন্তু সামনের চ্যালেঞ্জগুলো অতি কঠিন। কোন একক দলের পক্ষে এটা মোকাবিলা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ সংগঠিত করা। শত্রু সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ। এ ব্যাপারে কোন দ্বিধা থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেলুন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জয়ী হবেই। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App