×

রাজনীতি

ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক বিএনপির

ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আজকে সকল পেশার মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, শত নির্যাতনের মধ্যেও তারা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেনি…এটাই আমাদের ভরসা। এটা দেখে আমরা আশাবাদী আমরা শেষ সংগ্রাম করতে পারবো।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘নারী সমাজের ওপর অপমানের শেষ কোথায়’ শীর্ষক এই মানববন্ধন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই আহ্বান জানান। এতে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ সম্বলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নারীরা দাঁড়িয়ে তাদের প্রতিবাদ জানায়।

গয়েশ্বর বলেন, নারীর ওপরে এহেন নির্যাতনের ঘটনা আমি বলি, আজ বাংলাদেশ ধর্ষিত, আজ দেশের স্বাধীনতা ধর্ষিত, আজ দেশের সার্বভৌমত্ব ধর্ষিত। আমি বলতে চাই, আর নয় প্রতিবাদ এখন থেকে প্রতিশোধ, এখন থেকে প্রতিরোধ।

ছাত্র লীগের ‘সোনার ছেলেদের’ অপকর্মের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) কি জবাব দেবেন? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালিত হয় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লেখা-পড়া করেন অথবা যারা শিক্ষকতা করেন তাদের মান-সন্মান কোথায় থাকবে? একটি নামকরা মহিলা কলেজের ঘটনা কয়েক বছর আগে শুনেছি; সেখানের ঘটনা। সেই কলেজের মেয়েদেরকে যদি বলা হয় তুমি কোন কলেজে পড়ো… সে (নারী শিক্ষার্থী) নাম বলতে লজ্জা পায়।

আরো পড়ুন: মিয়ানমারে চলমান সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়

মুক্তিযুদ্ধে মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিলো করা? পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী। আজকে যারা আমাদের মা-বোনের সম্ভ্রমহানি নষ্ট করছে তারা কোন বাহিনী? তারা কাদের বাহিনী না কি হাসিনা বাহিনী। এদেরকে ক্ষমতায় রাখলে এদেশের মানুষ নিরাপদ থাকবে না, এদেশটাও নিরাপদ থাকবে না। মান-সম্মান তো দূরের কথা… অর্থাৎ জীবনটাই বেঁচে থাকার সুযোগ থাকবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা এলাকায় ২০১৮ সালের ভোটে এক মহিলা (সূবর্ণচর) আমার জানাশুনা নেই, পরিচয় নেই, ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়ে গেছেন, ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে;  গতকাল সেই ঘটনার মামলার রায় হয়েছে… ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন দিয়েছে। আমি জানি না নিম্ন আদালতের এই রায় শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে কার্যকর হবে কিনা? কারণ এমন অনেক রায় কার্যকর হয় নাই। এই কারণে আমার সন্দেহ।

যে দেশে স্বামীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপভোগ করতে চায় সে দেশে আর কি হবে? আসুন আমরা কে কি দল করি, কার কি পদ-পদবি আছে সব কিছু ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমার মনে হয়, আমাদেরকে আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে হটাতে হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, স্বাধীনতার পরেও দেশের এরকম অবস্থা ছিলো…. গত কয়েক দিনের ঘটনাবলী যদি আমরা দেখি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বডিফিল্ডার ফারুক সাহেব থেকে শুরু করে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীর সূবর্ণচরে ২০১৮ সালে একজন মহিলা তাদের কথা মতো ভোট না দেয়াতে তাকে ধর্ষণ করেছিলো; এই অবৈধ সরকারের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খুন-গুম-নির্যাতন-ধর্ষণ-মানুষের অধিকার হরণ, অর্থনীতি ধ্বংস করা, মানুষকে কষ্ট দেয়া। এদের একটাই কাজ এসব কর্মের মাধ্যমে আমাদের শান্তিপ্রিয় সমাজকে ধ্বংস করা।

অতএব আমরা যতই মানববন্ধন করি, যতদিন এই সরকারের পতন না ঘটবে ততদিন আমাদের এই দাবিকে যেটা গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের হাত থেকে এই জাতিকে মুক্ত করতে পারব না। এদের পতন ঘটাতে হবে। আমি আশা করি, আমাদের নেতৃস্থানীয় নেতারা আছেন তারা অচিরেই এমন কর্মসূচি দেবেন, যেন এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ঝনঝাটমুক্ত করতে পারি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি, বাংলাদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার মতো খেলাপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীতে বিরল

সভাপতির বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, আজকের এই মানববন্ধন প্রতিবাদের মানববন্ধন নয়, এটা হলো প্রতিরোধের মানববন্ধন। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। কিছুদিন আগে আমি, ডামি দিয়ে ভুয়া নির্বাচন করে একটা অবৈধ সরকার যারা আজকে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তাদেরই সোনার ছেলেরা এই যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নারীকে ধর্ষণ করেছে। শুধু একজন নারী নয়… এদের কীর্তিকাহিনী অনেক। এই সোনার ছেলেদের হাতে তারা লাঠি তুলে দিয়েছে, এই সোনার ছেলেদের হাতে তারা হাতুড়ি-প্যারেগ তুলে দিয়েছে, এই সোনার ছেলেদের মাথায় হেলমেট পরিয়ে তাদেরকে হেট বাহিনী বানিয়ে  সাধারণ মানুষের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন করে আজকে তারা সোনা সোহাগা হয়ে একের পর এক অপকর্ম করছে।

একজন বক্তা বলেছেন, ধর্ষিত বাংলাদেশ। যারা জোর করে দখল করে সেটাকে বলে ধর্ষণ। আজকে আমরা বিচার চাই না। কার কাছে বিচার চাইব? যেখানে প্রশ্রয় পায়, যেখানে বিক্রি হয়, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ যারা সম্পূর্ণ রকমে আজকে দালালি করে চুপ করে বসে থাকে তাদের কাছে কিসের বিচার চাইব। বিচার হবে আমাদের জনগণের কাছে, বিচার করবে জনগণ।

নারীদের ওপর ধর্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের তরুণ সমাজ, ছাত্র সমাজসহ সমগ্র জনগণকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। তা নাহলে এই বাংলাদেশকে আমরা রক্ষা করতে পারবো না।

‘মিয়ানমারের গোলা: কিসের আলামত’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে মিয়ানমারের মতো দেশ গুলি করে সেই গুলি আমাদের দেশের সীমান্তে পড়ে… আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে এবং মারা গেছে। এটা কিসের আলামত! চীনের সাথে এতো বন্ধুত্ব, আর মিয়ানমার চীনের লালিত দেশ। সেই দেশ থেকে গুলি আসে… রাখাইন থেকে সোলজাররা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়; এটা কিসের লক্ষণ? ভারতের বিএসএফ এই ধরণের ঘটনায় ৭‘শ লোককে হত্যা করলো… একটা প্রতিবাদ করেন না। কি কারণে বিজেবি রেখেছেন? কি কারণে বিজেপির জন্য অস্ত্র দেয়া হয়? আমি বলি, বার বার অপকর্ম করে পার পেয়ে গেলেও সকল অপকর্মের জবাব একদিন আপনাকে (সরকার) দিতে হবে, বার বার দেয়ার সুযোগ পাবেন না।

সংগঠনের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী সঞ্চালনায় এই মানববন্ধনে সাবেক সাংসদ শিরিন সুলতানা, রাশেদা বেগম হীরা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, কাদের গণি চৌধুরী, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের তাইফুল ইসলাম টিপু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আরিফা সুলতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App