×

রাজনীতি

এক টেবিলে আইভী-শামীম ওসমান

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধি

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

এক টেবিলে আইভী-শামীম ওসমান

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সরকারের দেড় দশকে প্রথম নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এমপি এক টেবিলে বসেছেন। 

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রেসক্লাব ভবনে নাগরিক সমস্যা যানজট ও ফুটপাত দখল সমস্যা সমাধানে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভি সমর্থক ও হকারদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভি সহ প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও শামীম ওসমান এমপি মুখোমুখি হয়ে পড়েন।

বৈঠকে ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য ডা. আইভী, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এমপি ঐক্যমত্যে পৌঁছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক তাদের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামীকাল (রবিবার) থেকেই যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা হবে।

আরো পড়ুন: বিআইডব্লিউটিএর গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, আমাদের বাসই তো চলে না। তাহলে কেন বাইরে থেকে এসে দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে চাষাঢ়ায় বাস রেখে দেবে। আপনারা কন্ট্রোল করেছেন তখন যানজট ছিল না। রোজার সময় কন্ট্রোল করে ফেলেন। আমরা আমাদের কাজ সঠিকভাবে করলে কোনো প্রব্লেম থাকে না। ট্রাফিক তো সিটি কর্পোরেশন বা এমপির ওপর দোষ চাপাতে পারে না। আপনাদের কাছে চিঠি দেয়া আছে বৈধ বা অবৈধ স্ট্যান্ডের। একটাও কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

আইভি আরও বলেন, ৬০০ হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা সবাই দোকান বিক্রি করে রাস্তায় বসছে। প্রতিটি সড়ক হকারদের দখলে। আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে কাজের কথা বললে করে দেব। তবে ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্ব নিতে হবে। এসপি সাহেব বলেছেন, ওই এলাকায় তার বাড়ি তাই তিনি যান না। তাহলে কী সেই এলাকায় মানুষ থাকে না? আমাদের কেন বন্দি করে রেখেছেন? আপনারা সেখানে থাকলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এই রাস্তাটা যানজটমুক্ত থাকত।

ট্রাকস্ট্যান্ড নিয়ে মামলা হয়েছে। সেটা উচ্ছেদ করে জানাতে বলেছে কোর্ট। একটা লেন ছিল আগে, এখন তিনটি লেন হয়েছে। হকার সড়কে বসতে পারবে না। এটা আজ আমার বড় দুই ভাইকে কমিটমেন্ট দিতে হবে। মেয়রদের কথা প্রশাসন শোনে না, এমপিকেই এটা বলতে হবে।

আরো পড়ুন: গাজীপুরের শ্রীপুরে মোজা তৈরির কারখানায় আগুন

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে একটা সমস্যা ইপিজেড ছুটি হলে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যায়। ফুটওভার হলে সেই রাস্তার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। আমি আর আইভী একটা কাগজে সই করে পাঠালেও এটা (সমাধান) হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকার মুক্ত করুন। কবে করবেন জানান। মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে।

শহরে চলমান যানবাহনের বিষয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা চলছে। কিন্তু এই অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের কারণে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এরা কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। তারা বিল না দিয়ে চলছে, গাড়ি চালাচ্ছে। ওরা দয়ায় চলছে না, কেউ না কেউ টাকা খাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। বিআরটিএ’র পারমিশন ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেয়া উচিত না বলেও জানান তিনি। 

এমপি বলেন, বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির পারমিশন দেবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। সিএনজি ও অটোরিকশার পারমিশন সিটি কর্পোরেশন দিলে কাল এর অযুহাতে সারা দেশে সবাই পারমিশন দেবে। এটা কেন সিটি কর্পোরেশন দেবে? এটা আপনাদের কাজ। স্ট্যান্ড কোথায় হবে, দরকার থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এরা কিন্তু ফ্রি বসে না। তারা কাউকে না কাউকে টাকা দেয়।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকমুক্ত করার আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর

সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না। এটা সবার জন্য হতে হবে। মীর জুমলা সড়ক বন্ধ। হাইস্কুলের সড়কটা খালি থাকলে সেটা মীর জুমলা সড়ক হয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবে। ছোট একটা সড়কে ১৬ বার ট্রেন চললে পুলিশ কেন ফেরেশতাদের জন্যেও যানজট কমানো সম্ভব না। আমরা রেল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলতে পারি ট্রেন চাষাঢ়ায় থামুক। শুধু ইঞ্জিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন। এতে বেশি সময় লাগবে না।

নারায়ণগঞ্জ -৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সমস্যার শেষ নেই। আজকে আমরা উঠে গেলাম আর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। তিনি বলেন, আমার ছোট বোন (সেলিনা হায়াৎ আইভী) একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার দায়িত্ব যেটা নয়, সেটার জন্য কেন আমাকে দোষারোপ করা হবে, আমি সেটা জানতে চাই।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যা ময়লা। এই ময়লা কোথায় যাবে। বাধ্য হয়ে লিংক রোডে গিয়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার কোনায়, বন্দরে যায়। যতক্ষণ রাস্তা পরিষ্কার না হবে, ততক্ষণ এ সকল সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, রাস্তার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের হাতে। ফুটপাত কার হাতে? এটা কি মাসলম্যানদের হাতে? এই দখলকারীরা কারা? এরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না। সারা দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, মানুষ ভালো থাকুক। আমাদের একত্রই হতে হবে। একটা ফুটপাতও দখলে থাকবে না। এটা না থাকলে মাদক, ইভটিজিংও থাকবে না।

আরো পড়ুন: আমাদের নিজেদের মধ্যে কিছু ত্রুটি আছে

হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের জান বের হয়ে যায় পরীক্ষা থাকলে। আমরা বাস কিনে দিয়েছি। কিন্তু কলেজ গেটে বাস কোথা দিয়ে যাবে? কেন এই রাস্তা বারবার উচ্ছেদ করার পরেও কাঁচাবাজার বসে সেখানে? এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করতে পারলে বসব, নয়ত আমরা বসব না, যোগ করেন সেলিম ওসমান।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, এখানে কোন রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি একটাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে চলাচল করতে দিতে হবে। আমরা মেয়রকে অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা করোনার সময়ও করেছি। আমরা স্কুল করেছি, কিন্তু বাচ্চারা স্কুলে যায় কিনা খবর রাখতে পারি না।

আমরা একসাথে বসব স্বেচ্ছাসেবী নেব। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো সমস্যা রাখব না। আমার মেয়র আইভীকে নিয়ে আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে নিয়ে আমরা এটা করব। শামীম ওসমানকে আমরা শক্তি হিসেবে কাজে লাগাব, যোগ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ সহায়তা করব বলে জানালেন জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু, বিআরটি এর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী শামসুল হকসহ, ব্যবসায়ী ও পরিবহন সেক্টর নেতৃবৃন্দ গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App