×

রাজনীতি

মঈন খান

হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম

হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে

ছবি: ভোরের কাগজ

হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, আমাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন একদলীয় বাকশালী সরকারের বিদায় করে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন। ক্ষমতা বা অর্থের মোহে নয়, আমাদের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।’

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। সেজন্যই ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ ডামি নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যর্থ এবং জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। দেশের জনগণ অতীতেও আপস করেনি এবারও ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রশ্নে আপস করবে না।

তিনি বলেন, আজকে যে কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে সেই লক্ষ্যকে উধাও করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বহুবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। ৭৫ সালে ১১ মিনিটের ব্যবধানে সংসদে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরে সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। আজকে বিগত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হরণ করেছে। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন টাইমসের প্রবন্ধে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে বাকশাল-২ কায়েম করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র নতুনভাবে জনগণের হাতে তুলে দিতে চাই। সেজন্যই আমরা রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে কর্মসূচি পালন করে আসছি। বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনও মুখ বন্ধ করে বসে থাকে না।’

মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সংঘাতের রাজনীতি চান না। তারা সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজনীতি চায়। সত্যিকারের উন্নয়ন চায়। শুধু ঢাকার উন্নয়ন চান না ‘

তিনি বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বের কোথাও কি আছে যে সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ গুলিতে মারা যায়? দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারে? আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামে আছি। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে সংকট সেই সংকট উত্তরণে একটি নাম স্মরণীয়। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালিয়েছিল সেদিন জিয়াউর রহমান নির্দেশনা না দিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে নতুনরূপে পরিচালনা করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আধুনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক শান্তি-সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সার্ক গঠন করেছিলেন।

জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, ‘যারা জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করে তারা কারা? তারা হলো- গায়ের জোরে নির্বাচন, সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা লোক। যাদের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ৫০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও জিয়ার কাছাকাছি যেতে পারবে না। তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিল। আজকে ডলারের দাম কতো? গাজীপুরে সকল কারখানা বন্ধ। ডলার নাই, আছে শুধু আওয়ামী লীগের দম্ভ। কারণ তারা এরশাদের চেয়েও স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেজন্যই ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন করেছে। কিন্তু সেই নির্বাচনকে দেশবাসী এবং কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্ব গ্রহণ করেনি।

প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, দেশের গণতন্ত্র মৃত। আজকে দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কেন্দ্রে কোনো ভোটার উপস্থিতি ছিল না। ৭৫ সালেও গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজও নবরূপে বাকশাল কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ। এখন থেকে মুক্তির জন্য আমাদের রাজপথেই থাকতে হবে।

প্রবন্ধকার অধ্যাপক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিখোঁজের ইতিহাস ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। স্বাধীনতাত্তোর বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে অপহৃত গণতন্ত্র জিয়াউর রহমানের সময়ে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার বিচক্ষণতা জাতিকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকশনের নামে ভোটারবিহীন সিলেকশন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতারণামূলক নিশিরাতের ভোট ডাকাতি হতবাক করেছিল বিশ্ব বিবেককে।

তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয় যে, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়। ‘গণতন্ত্র’ শব্দটিই আজ অভিধানের পাতা থেকে বিদায় নেয়ার অবস্থা। কিন্তু তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান এই আন্দোলনে মুক্তিকামী জনগণের হারানোর কিছু নাই।

ড. শামীম বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মৃত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একমাত্র পথ হতে পারে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ। যে আদর্শের মাধ্যমে তিনি একদলীয় অপশাসন থেকে বাংলাদেশের মানুষকে দেখিয়েছিলেন প্রকৃত মুক্তির পথ। তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বের গুণে আবার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বাংলাদেশের লুণ্ঠিত ভবিষ্যৎ এবং হারিয়ে ফেলা গণতন্ত্র, ভাত ও ভোটের অধিকার।

গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন জেডআরএফের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেডআরএফের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম।

জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন ফারুক, বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, জেডআরএফের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মাহবুব আলম, মুক্তিযোদ্ধা দল ঢাকা মহানগরীর সভাপতি প্রকৌশলী হালিম মিয়া প্রমুখ। এ সময় জেডআরএফের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App