×

রাজনীতি

ভালো ভোট হয়েছে: বিদেশি পর্যবেক্ষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৭ পিএম

ভালো ভোট হয়েছে: বিদেশি পর্যবেক্ষক

ছবি: ভোরের কাগজ

ভোট গ্রহণের পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার পর্যবেক্ষকেরা। তারা বলেছেন, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি। ভোটকেন্দ্রের রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদও দিয়েছেন। 

রবিবার (৭ জানুয়ারি) ভোট গ্রহণ শেষে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, গাম্বিয়া, আরব লীগ, ওআইসিসহ নানা দেশ থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এর আগে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান তারা।

পরে বিকেলে ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়ে সার্বিকভাবে একমত হয়েছি যে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা কে কী বললো সেসব নিয়ে আগ্রহ নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। রবিবার নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোট দিয়েছে, তাদের সমর্থনই গ্রহণযোগ্যতা। পশ্চিমা বা অন্য কাউকে নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।

ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ নেই : কানাডার পর্যবেক্ষক 

ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা কানাডার পর্যবেক্ষক চন্দ্রা আর্য। নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে আর্য বলেন, ভোটার কত শতাংশ এলো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যারা এসেছে তারা ঠিকমতো ভোট দিয়েছে নির্বিঘ্নে। তাই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ নেই। বাংলাদেশের একটি বড় দল ভোট বয়কট করেছে এবং ভোটদানের হার কম হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এসব নিয়ে কথা বলতে আসিনি। কে ভোটে আসবে আর কে আসবে না তা স্ব স্ব রাজনৈতিক দল ঠিক করবে। ভোটদানের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই বছর আগে হওয়া কানাডার প্রাদেশিক ভোটে ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখানে ৪০ শতাংশের ওপরে। ভালো নির্বাচন হয়েছে।

নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার পর্যবেক্ষক 

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার অ্যান্দ্রে ওয়াই শুটব। অ্যান্দ্রে শুটব বলেন, আমি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। খুব দারুণ নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে। ভোটের পরিবেশে নিরাপত্তা ছিল, এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কোনো বিষয়ে কোনো তথ্যের অভাব ছিল না। গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ তার নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে জানিয়ে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বর চাপিয়ে দেয়ার পরিস্থিতি নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীন নীতি গ্রহণ করবে। কেউ চাপিয়ে দিলে হবে না। এছাড়া আমরা দেখছি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে।

ভোট ‘খুব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে : ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষক

ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাহী হিশাম কুহাইল মত দিয়েছেন, সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমকে কুহাইল বলেন, আমরা যেসব কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি সবগুলোতেই ভোটদানের প্রক্রিয়া খুব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে কুহাইল আরও বলেন, এমন একটি শান্তপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাদের জনগণের গর্বিত হওয়া উচিত। তবে ভোট কেমন পড়েছে সেই বিষয়ে কুহাইলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, আমরা এখানে এসেছি ভোটদানের প্রক্রিয়া বিচারের জন্য। ভোটাররা ঠিকমতো ভোট দিতে পারছেন কি-না এবং পদ্ধতি অনুযায়ী ভোটদান হচ্ছে কি-না সেগুলোই আমরা দেখেছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কুহাইল বলেন, দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া বিচারের জন্য আমরা এখানে আসিনি। এটা করতে হলে এখানে আমাকে অন্তত এক মাস অবস্থান করতে হবে। 

ভোটগ্রহণ নিয়ে সন্তুষ্টি ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধানের 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসির নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান শেখ মোহাম্মদ বন্দর।  নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে তারা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষক হিসেবে সহিংসতার কোনো চিহ্ন আমাদের চোখে পড়েনি। আমি অবাক হয়েছি, দোকান-পাট বন্ধ কেন! সড়কে কোনো মানুষ দেখা যায়নি। শহর ছিল শান্ত।তাকে করা নানা প্রশ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি এমন একটি দেশ থেকে এসেছেন যেখানে যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশে আসা কি গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশে আসার জন্য আপনার ওপর কোনো ধরনের চাপ ছিল? বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল কি না? এসব প্রশ্নের জবাব ‘না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। তিন মাস আগে আমি যখন জিম্বাবুয়েতে ছিলাম, তখন আমন্ত্রণপত্র পাই। আমি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে এসেছি, গাজার মতো সেখানে যুদ্ধ চলছে না। আরব ইলেকট্রোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার দেশের পাশাপাশি আমি ওই সংগঠনেও প্রতিবেদন জমা দেবো। যে কারণে এই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিজ্ঞতা বিনিময়। আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং আমি ও বাংলাদেশে আমার সহকর্মীরা আজ যা দেখলাম, এই সফরে আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখলাম। এটা একটি পেশাগত সফর ছিল। নির্বাচনী পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখেছি। 

ভোটে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের পর্যবেক্ষকরা

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের পর্যবেক্ষক দলও বাংলাদেশের ভোট নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। তারা বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা সন্তুষ্ট। তারা বলেন, সাত আটটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে এতো ভোটারের উপস্থিতি ও ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট এবং ভীষণ আশাবাদী। রাজধানীর বাইরে চল্লিশ থেকে সত্তর শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন তারা। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরবেন বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের এই পর্যবেক্ষক দল। এর আগে নাইজেরিয়ার পর্যবেক্ষকও ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আরব লীগের পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনাকারীরাও ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা মূল্যায়ন করতে আসিনি। তারা কোনো ধরনের সহিংসতা লক্ষ করেননি বলেও জানান তিনি।

‘ভোটার কম’ একটি ভুল কথা: মার্কিন পর্যবেক্ষক 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক জিম বেটস। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। জিম বেটস বলেন, আমি যখন এখানে আসি তখন আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ সবাই বলেছিল, তারা কম ভোটার উপস্থিতির আশঙ্কা করছে। আমি বলেছিলাম, আপনি কেবল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোট শেষ করতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তার নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে এক মাস আগে থেকে ভোট কাস্ট শুরু হয়। তাই যখন আপনার হাতে দিন এবং মাস থাকে তখন ভোটার সংখ্যা বেশি হয়। কিন্তু আপনি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করছেন। তাই আমি ভাবছি কে এখানে খেলছে। কেন তারা ‘সামান্য ভোটার’ শব্দটি দিয়ে গেম খেলছে। তিনি বলেন, যে বিষয়ে কথা বলা হয়ে থাকে, তা হলো কম ভোটার: এটি একটি ভুল কথা। কিছু দেশে ভোট বিকেল ৫/৬ টা পর্যন্ত এবং কয়েক মাস পর্যন্ত চলে। সুতরাং যখন বলা হয় কম ভোটদান, তখন এটি আসলে গণমাধ্যমকে আলোড়ন তৈরি করার জন্য কিছু একটা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App