×

রাজনীতি

সংসদ নির্বাচন

সংখ্যালঘুসম্প্রদায়ের ওপর চাপ অব্যাহত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম

সংখ্যালঘুসম্প্রদায়ের ওপর চাপ অব্যাহত

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত চাপ, নির্বাচন প্রচারণায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য এখন মন্দির পোড়ানো ও ফসলি জমির ধান নষ্ট করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কিছুতেই রুখতে পারছে না এদের। নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু-সম্প্রদায়ের ওপর সম্ভাব্য নির্যাতনের মাত্রা

আরও কি কি হতে পারে এবং এর শেষই বা কোথায় তা নিয়ে ধর্ম নির্বিশেষে সংখ্যালঘুসম্প্রদায় আতংকিত ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত দুই দিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনার কয়েকটিমাত্র নিম্নে উল্লেখ করা হলো। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এখনি যদি কঠোর হস্তে এদের দমন করা না হয় তবে সন্ত্রাস ও নির্যাতনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। 

২০১২ সালের ন্যায় আবারও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত ৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার দিকে চেরাংঘাটা রাখাইন সম্প্রদায়ের উসাইসেন (বড় ক্যাং) বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বিহারের বেশকিছু অংশ পুড়ে গেছে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি হস্তক্ষেপে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন এ বৌদ্ধ বিহারটি। নির্বাচনের একদিন পূর্বে এ ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা’র কাঁচি প্রতীক সমর্থন করায় ও তাঁর জনসভায় যোগদান করায় গত ৫ জানুয়ারি তারিখ সকালে একদল দুর্বৃত্ত নৌকার শ্লোগান দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রয়াত রবীন্দ্র কুমার বৈষ্ণবের ছেলে রঞ্জন কুমার বৈষ্ণবের প্রায় এক হেক্টর রোপণকৃত বোরো জমিতে জোরপূর্বক মই দিয়ে কমপক্ষে ১০০ মণ উৎপাদিত ধানের ক্ষতি করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ-১ ও ২ সংসদীয় আসনে মারাত্মক খারাপ কিছু ঘটতে পারে বলে স্থানীয়ভাবে আশংকা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম, সরোয়াতলীর বেলাল ও আমুচিয়ার কাজল তাদের লোকজন দিয়ে এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সংখ্যালঘু ভোটারদের বলা হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের কাছ থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সরকারি সুবিধাভোগী টিসিবির কার্ড কেড়ে নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম-১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকরা নৌকার সমর্থক সবুজ চন্দ্র দাশ ও আকাশ রায়কে গুরুতরভাবে মারধর করার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সুপারিশ করেছেন এ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান। এ ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং দরিদ্র জেলে ও কৃষক। এ ঘটনার কারণে এ প্রান্তিক শ্রেণির ভোটাররা নির্বাচন পরবর্তী নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছেন। 

ঝিনাইদহ-১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের সমর্থক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের ওপর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের অনুসারীরা গত ৩জানুযারি রাতে তমালতলা বাজারে হামলা চালিয়ে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ, হুমকি-ধমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে।

স্থানীয় সন্ত্রাসী আদনান জাভেদের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় গত ৪ জানুয়ারি রাতে মুছাপুর, সন্তোষপুর, মগধরা, সারিকাইত ইউনিয়নের সংখ্যালঘুপল্লীতে ঢুকে মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা বলেছে, ‘তোমরা নৌকা মার্কার ভোটার এটা আমরা জানি, তোমাদের কষ্ট করে কেন্দ্রে যেতে হবে না। তোমাদের ভোট আমরা দিয়ে দেব, কেন্দ্রে গেলে তোমাদের জাল-নৌকা সবই যাবে। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে সবার ঘরের টিনে আঘাত করে বেরিয়ে যায়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ঈগল প্রতীক সমর্থন করায় নৌকা মার্কার সমর্থক মৎস্যজীবী লীগ নেতা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭-৮ জনের একদল সন্ত্রাসী গত ৪ জানুয়ারি বিকেলে ঝুলন দত্ত, বিক্রম জিৎ মিত্র ও রনি দে’র ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা প্রাণ বাঁচাতে শ্রী শ্রী গৌর গোবিন্দ আশ্রমে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের প্রাণ রক্ষা করে। পরে তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App