×

রাজনীতি

ভোটে 'গণঅনাস্হা' জানানোর আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম

ভোটে 'গণঅনাস্হা' জানানোর আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

ছবি: ভোরের কাগজ

৭ জানুয়ারি (রবিবার) ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে সরকারের প্রতি ‘গণঅনাস্থা’ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভোট বর্জনের এক সমাবেশে মঞ্চের নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমরা ভোটারদেরকে বলতে চাই, আগামীকাল আপনারাদের যে ভোট বর্জন এবং আপনাদের যে এই নির্বাচন প্রত্যাখান-বর্জনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা আপনারা ব্যক্ত করবেন। আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে যাওয়া মানে এই দুর্বৃত্ত শাসনকে দীর্ঘায়িত করা, আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে যাওয়া মানে এই চোর, এই লুটপাটকারী, খুনি-মাফিয়া-সন্ত্রাসী ওদের অবৈধ-দখলদারিত্বকে আরও সেখানে দীর্ঘায়িত করার সহযোগী হওয়া। কোনো সচেতন মানুষ এই দুর্বৃত্তদের এই খেলাতে কেউ অংশ গ্রহণ করতে পারে না। আমরা সেই কথা বলে আগামীকাল আমরা মানুষকে ঘরে থেকে যার যার চেতনা অনুসারে ভোটকে প্রত্যাখ্যান-বর্জন করে এই সরকারের প্রতি আপনারা আরেকবার অনাস্থা ব্যক্ত করবেন, লাল কার্ড দেখানোর মধ্য দিয়ে এই সরকারের বিদায়কে আপনারা নিশ্চিত করবেন।

একই সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে সাইফুল হক বলেন, আপনারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের মতন করে এই ভোট ডাকাত এই ভোট চোর সরকারের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করবার জন্যে, দীর্ঘায়িত করবার জন্যে কোনোভাবে এদের সহযোগী হবেন না। নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্তদের বলতে চাই, বিবেকের দংশন থেকে এই অবৈধ ভোট ডাকাতির ভাগাভাগি যে নির্বাচন, ডামি নির্বাচন এই তৎপরতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করুন।

ভোট বর্জনের দাবিতে বেলা ১২টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চ বিজয় নগর, পল্টন মোড় সড়ক, তোপখানা রোডে মিছিল এবং এরপর তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে।

‘ভোট আনতে টাকা দিচ্ছে’

সাইফুল হক বলেন, একেকটা ভোটের দাম নাকি শুনছি এক হাজার টাকা থেকে ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও নাকি দেড় হাজার, তিন হাজার, পাঁচ হাজার থেকে বেড়ে দশ হাজার টাকায় একেকটা ভোটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে তারা টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা, পুলিশ প্রশাসন, ব্যবহার করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে, পুলিশ হুমকি দিচ্ছে… তারা ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য একটা পরোয়ানা জারি করে দিয়েছে, যারা ভোট কেন্দ্রে আসবে না তাদেরকে নাকি দেখে নেয়া হবে। এর নাম কি ভোট? এর নাম কি গণতন্ত্র? 

 শুনছি নির্বাচনের কেন্দ্র গুলোর আশে-পাশে নাকি আওয়ামী লীগ ব্যাপক খানা-পিনার ব্যবস্থা করবে। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী অনেক কিছু কোরবানি দিয়ে একটা মানুষ জড়ো করার একটা তৎপরতা চলবে…. দেশব্যাপী লুটের টাকাটা ভোট ভোট দেখানোর জন্য তারা বণ্টন করছে। ভোট কেন্দ্রে নেবার জন্য মানুষকে গ্রেফতার করে একটা পরিস্থিতি তৈরি করে এরা ভোট কেন্দ্রে মানুষকে হাজির করতে চায়। এসব করে কি সরকার শেষ রক্ষা করতে পারবে ? 

‘নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপরে দোষ চাপাচ্ছে’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা জনগণের ঐক্যের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অহিংসভাবে এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আমরা বলেছি, সরকার নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে, নানাভাবে তারা নাশকতার তৈরি করে তার দায় বিরোধী দলের আন্দোলনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।”

‘‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমরা আহ্বান জানাই এই যে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা, এই খেলার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই যে ট্রেনের ঘটনা ঘটেছে, আগুনে পুঁড়ে নিহত হতে দেখলাম… আমাদের তীব্র ক্ষোভ, শোক, ঘৃণা আমাদের প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। আমরা আগেই বলেছিলাম এরকম নানা নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে সেগুলো খুঁজে বের করুন। আমরা স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছি, আমরা এখনো দাবি করছি এই ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ‍মুখোমুখি করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে যে গণতন্ত্র আছে সেই গণতন্ত্রের জন্য আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে যান, ভোট দেন। দেশে কি গণতন্ত্র আছে? মানুষ কি ভোট দিতে পারে? এই সময়ে কর্মী-সমর্থকরা সমস্বরে ‘না’ সূচক শ্লোগান দেন।

সাকি বলেন, এই ভোট এটা মানুষের ভোট দেয়া নয়। মানুষের ভোটের অধিকার তার ভোটের কার্যকারিতা কেড়ে নিয়ে এরা ভোট নামক একটা তামাশা একটা রঙ্গমঞ্চ তৈরি করেছে। কাজেই তামাশার রঙ্গমঞ্চে বাংলাদেশের মানুষ অংশ নেবে না।এটাই আমাদের নীরব প্রতিবাদ হিসাবে প্রতিটি মানুষ ঘরে থেকে এই নীরব প্রতিবাদে অংশ নেবে।

রাষ্ট্রীয় সুবিধাবাদী কার্ডধারীদের কার্ড বাতিলের হুমকি দিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এতো আপনাদের (সরকার) দাপট। সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আপনারা দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও আপনারা ভয়ে কম্পমান। মানুষকে ভয় দেখানো ছাড়া ভোট কেন্দ্রে কাক-পক্ষীকেও তারা নিতে পারবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তা অল্পসংখ্যক ছাত্র মেরুদণ্ড সোজা করে এই একতরফা ভোটের প্রতিবাদ করছে। সাড়ে তিন কোটি তরুণ যারা আজকে প্রথম ভোটার তাদের ভোটের অধিকার, ভোটের কার্যকারিতা কেড়ে নিয়ে এই সরকার তার নাগরিকদের যে অপমান করছে তার বিরুদ্ধে ওই ছাত্ররা দাঁড়িয়েছেন। আমরা দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা তাদের টেলিফোন নাম্বার, পিতা-মাতার ফোন নাম্বার সব নিয়ে তাদের বাবা-মাকে টেলিফোন করছেন, হুমকি দিচ্ছেন ….এই হচ্ছে আপনাদের শক্তি…আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রের প্রতিবাদ সহ্য করতে পারছেন না।”

ভোট বর্জন করে ‘নীরব’ প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সরকার পতন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘‘ আগামীকাল ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন করুন। ৭ জানুয়ারির পরে নতুন পর্যায়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ নতুন লড়াই, নতুন সংগ্রামের সূচনা করবে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা প্রিতম দাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু ও নাগরিক ঐক্যের মোফাখখারুল ইসলাম নবাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, লেবার পার্টি প্রভৃতি সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে তোপখানা রোড ও বিজয় নগর সড়কে মিছিল করে ভোট বর্জনের আহ্বান জানায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App