×

রাজনীতি

গণতন্ত্র মঞ্চ

ভোট বাতিল না করলে জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম

ভোট বাতিল না করলে জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে

‘ভোট বাতিল না করলে জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে’ মঙ্গলবার কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ছবি: ভোরের কাগজ

৭ জানুয়ারি ভোট বাতিল না করলে ‘জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে’ বলে সরকারকে হুশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো নির্বাচন না। মানুষদের বলছি, এই ভোট দিতে যাবেন না। আমি এখানে বসে ছিলাম দেখলাম কয়েকজন রিকশাওয়ালা গেলো… সাংবাদিক ভাইয়েরা হয়ত খেয়াল করেছেন তারা কি বলতে বলতে গেছে… আপনারা শুনেছেন। রিকশাওয়ালা, পান-বিড়ি দোকানদার, গ্রামে যে সমস্ত চায়ের দোকান আছে, হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় মানুষ বলছে, কিসের ভোট? ভোট তো আগেই হয়ে যায়, এই ভোট আমরা দিতে যাবো না।”

‘‘আমরা বলি, এরপর একেক করে যদি আবারো সারা দুনিয়া থেকে আপনাদের (সরকার) ওপরে চাপ আসে সহ্য করতে পারবেন? আমরা তো ওইজন্য চিন্তিত। আমরা দেশকে ভালোবাসি তাই বলি এই ভোট বাতিল করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেন। জানি একথা শুনবেন না আপনারা। কিন্তু তবুও ভালো কথা বলতে তো দোষ নাই। ভালো কাজ যদি না করেন নিশ্চিত থাকতে পারেন জনগণ এরকম শান্ত থাকবে না। নিশ্চিত থাকতে পারেন আমরা যেরকম করে কেবল লিফলেট বিতরণ করছি, সভা করছি… মানুষ বলবে, সব বন্ধ করে দাও, হরতাল দাও, অবরোধ দাও আবার... এই নির্বাচনে আমরা যাবো না।”

মান্না বলেন, ‘‘নির্বাচন তো হচ্ছে না। নির্বাচনের নামে যা হচ্ছে এগুলো দেখছেন আপনারা। সরকারি দলের নেতা তারা যা কথা বলছে সেই কথাগুলো আপনারা শুনছেন। আমরা শুধু বলছি, জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব… সেই দাবি ছাড়ব না…আন্দোলন করবো যতক্ষণ পর্যন্ত এই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সেখানে বৈধ জনগণের পছন্দমতো সরকার গঠন করতে না পারি।”

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি এবং ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের ডাকে গণতন্ত্রমঞ্চ কাকরাইল মোড়ে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ শান্তিনগর-মালিবাগ সড়কে মিছিল বের করে।

‘অধ্যাপক ইউনুসের রায় সরকারের প্রতিহিংসার ফল’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘সরকার ঘরপোড়ার মধ্যে আলুপোঁড়া দিচ্ছে। যখন বিরোধী দল রাজপথে আন্দোলন করছে একই সাথে তারা আইন আদালত ব্যবহার করে বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটাচ্ছেন। এটা করেই তারা শেষ করেননি। আপনারা খেয়াল করেছেন, নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে শ্রম আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই ঘটনা ইতিমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক শিবিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।”

‘‘বাংলাদেশের কি পরিস্থিতি, সরকার কি করে আদালতগুলোকে ব্যবহার করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে চায়… ইতিমধ্যে সারা দুনিয়া এর প্রতিক্রিয়া তারা ব্যক্ত করেছেন। ড. ইউনুসের এই মামলা জনগণ এটাকে তাদের পক্ষের মামলা হিসেবে বিবেচনা করে না, ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সরকার এবং সরকারি দলের প্রতিপালন হচ্ছে তার একটা বহিঃপ্রকাশ। এই সরকার কোনো গুণী মানুষকে সন্মান করে না… তারা সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশটাকে প্রকারান্তে তারা যে একটা মগের মুল্লুকে পরিণত করেছেন… উচ্চ আদালতের বিচারপতি যখন বলেন, আপনারা দেশটাকে কি জাহান্নামের দিকে নিয়ে গেছেন… সোমবারের প্রফেসর ইউনুসের মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে আরেকবার তারা প্রমাণ করেছেন যে, তারা কোনো রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে, কোনো ভিন্নমতের রাজনৈতিক ভাবে মতাদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা তারা রাখেন না।”

সোমবার ঢাকার তিন নম্বর শ্রম আদালতের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার রায় দেন।

সাইফুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘তারা (সরকার) গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে যে, ৭ তারিখের পরে বিএনপিকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেন কিনা। এরকম উদ্যোগে অতীতে যারা নিয়েছেন যারা রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে যারা প্রশাসনিক অর্ডার দিয়ে নিষিদ্ধ করতে গেছেন দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছে। মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদেরকে বর্জন করেছে।

‘‘আমি আশা করি, ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ সেই পথে আপনারা হাঁটবেন না। যখন আপনি অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়েন সেদিন লোকেরা বলত পাশে আরেকপা গর্ত খুঁড়ে রাখবেন কারণ এই গর্তে পরেরদিন হয়ত আপনাকেই পড়তে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনও শর্ত দিচ্ছেন যে, নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকেও নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লক্ষণটা আপনারা দেখছেন। বিবিসি গতকাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ইলেকশন হ্যাজ বিকাম এ ওয়ান উইমেন সো। দুনিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে সরকার, সরকারি দলের এবং বিশেষ ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছা পূরণের, তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছেন।”

‘‘কেউ এটা জাতীয় নির্বাচন বলছেন না। ডিপ্লোমেটরা তাদের দেশে বার্তা পাঠাচ্ছে যে, বাংলাদেশে এটা নির্বাচন না, তারা বলছেন, স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন, বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা… এটাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সেজন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবকে (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলছি, যে খেলা আপনারা শুরু করেছেন, এটা আপনাদের জন্য খেলা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণেরে জন্য নতুন একটা বিপর্যয় নতুন একটা বিপদ আপনারা ডেকে আনছেন। তাই বলব, এই খেলাটা বন্ধ করেন।”

‘এই নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নাই’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন। ৭ তারিখে যা হচ্ছে সেইটা সুষ্ঠু নির্বাচন না, ৭ তারিখে যা হচ্ছে তা তামাশা, ৭ তারিখে যা হচ্ছে একই দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে তথাকথিত ভোটার আনার জন্য। কাজেই মানুষের এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নাই, মানুষ ভোট দিতে যাবে না।”

‘‘ আমরা সরকারকে বলি, এখনো সময়ে আছে… সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী করতে পারেন পার্লামেন্ট ভেঙে দেন… সমস্ত দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, সংকট সমাধান করেন.. একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন…. সেটা সকলের জন্য মঙ্গল। আর না হয় এদেশের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করবে, তার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া তারা সহ্য করবে না।”

 নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিজুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App