×

রাজনীতি

এলাকায় এমপিদের জনপ্রিয়তা খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ০৮:২২ এএম

এলাকায় এমপিদের জনপ্রিয়তা খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ
  • নির্বাচনের আগে আর কোনো ইউনিটে সম্মেলন নয়, তৃণমূলের গ্রুপিং নিরসনের তাগিদ
নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) জনপ্রিয়তা বা কার কত ভোট তা খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও কঠিন হবে। এই লড়াইয়ে যেসব প্রার্থী ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, ভোটে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন- এমন প্রার্থীকেই বেছে নেবে দলটি। তাদের কপালেই জুটবে নৌকার টিকেট। আর যেসব এমপি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন, রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে পারিবারিক বলয় তৈরি করেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদত দিয়েছেন- এমন এমপিদের বাদ দেবে দলটি। তাদের ভাগ্যে কোনোভাবেই মিলবে না নৌকার টিকেট। এ বিষয়ে খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কাছে সবার আমলনামা আছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা দিয়ে নিয়মিত জরিপ কাজও চালাচ্ছেন তিনি। এমন আভাস মিলেছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার বৈঠকে। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠক- যা চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। দলটির সভাপতি, সম্পাদকমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরপর ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, শোকাবহ আগস্টে মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব দিবসে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। পরে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন মির্জা আজম, খুলনা বিভাগের বি এম মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রাম বিভাগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রংপুর বিভাগের সুজিত রায় নন্দী, সিলেট বিভাগের আহমদ হোসেন, রাজশাহী বিভাগের এস এম কামাল হোসেন, বরিশাল বিভাগের এডভোকেট আফজাল হোসেন ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এসব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় কয়েকজন নেতাও কয়েকটি এলাকারসমস্যা নিয়ে কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ভোরের কাগজকে জানান, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হবে। সেই কথা বিবেচনায় রেখে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যারা সংসদ সদস্য প্রার্থী তাদের আরো সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তারা যেন এলাকায় বেশি করে সময় দেন। জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যান। বিএনপি-জামায়াতের বিগত দিনের দুঃশাসন, জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষকে পুড়িয়ে মারার যে ঘটনা আছে, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাদের অপকর্মগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। সাইবার লড়াইয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিদেশি মহলের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেউ যেন একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ না করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে যেন কোনোভাবেই কুৎসা না রটায়। কেননা এতে ওই প্রার্থীর চেয়ে দলেরই ক্ষতি বেশি হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আমাদের দলের যারা এখন সংসদ সদস্য আছেন- দলীয় ভোটের বাইরে নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নতুন ভোটার যারা আছে, তাদের কাছে কে কতটুকু জনপ্রিয় বা ব্যক্তি ইমেজে কার কতটুকু ভোট আছে, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জরিপ সংস্থা দিয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। সবার আমলনামা আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। যেসব এমপি জনপ্রিয়, ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব নেই, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, তাদেরই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। আর যারা অজনপ্রিয়, ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি, স্বেচ্ছাচারী, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন, পারিবারিক বলয় তৈরি করেছেন, এলাকায় বেশি সময় দেননি- এমন প্রার্থী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে না- এ বিষয়ে দলীয় প্রধান খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বৈঠকসূত্র আরো জানায়, গতকালকের বৈঠকের আগে যেসব জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে- সেগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠানে বাধা নেই। তবে নির্বাচনের আগে নতুন করে আর কোনো জেলা, মহানগর, উপজেলা বা ইউনিয়নের সম্মেলন করা যাবে না। প্রতিটি ইউনিটে এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকায় গ্রুপিং রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App