×

সাময়িকী

হুমায়ূনযুগের সূচনা ও শঙ্খনীল কারাগার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ০৭:৪৯ পিএম

হুমায়ূনযুগের সূচনা ও শঙ্খনীল কারাগার

বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ এক নতুন যুগের জন্ম দিয়েছিলেন তার কথাসাহিত্য সম্ভার নিয়ে, চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি বড় কোনো উচ্চতায় পৌঁছাতে না পারলেও টেলিভিশন নাটক লিখে এবং নির্মাণ করে তিনি তার জনপ্রিয়তায় যুক্ত করেন আরও এক উজ্জ্বল পালক; এসব কথা আজ সর্বজনবিদিত। সেই হুমায়ূন যুগের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই তার সেরাসৃষ্টি ‘শঙ্খনীল কারাগার’ দিয়ে। শঙ্খনীল কারাগার হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম উপন্যাস হলেও তার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। শঙ্খনীল কারাগার আমার সদ্য যৌবনে পড়া প্রভাব বিস্তারী উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের আগে আমার পাঠপ্রিয়তায় ছিলেন প্রধাণত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত এবং শহিদুল্লাহ কায়সার। শহিদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ এবং ‘সারেং বৌ’ এ দুটি মাত্র উপন্যাসের সাথেই আমার পরিচয় ঘটেছিল। ১৯৭৩ সালে (বৈশাখ ১৩৮০ বঙ্গাব্দে) যখন খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয় ‘শঙ্খনীল কারাগার’।

এর কিছুদিন পরই বইটি আমার পড়ার সুযোগ হয়; বলে রাখা ভালো, তখনও আমার দু’চোখে লেগে আছে ‘দেবদাস’-এর বেদনায় কাতর হৃদয়ের অশ্রু, নীহাররঞ্জন গুপ্তের রহস্য উপন্যাসের উদ্বেগ-উত্তেজনা আর ‘সংশপ্তক’-এর সম্পূর্ণ না-বোঝা সমাজচিত্রের টানাপড়েন। তারপরও মনে পড়ছে হুমায়ূন আমাকে ভাবনায় ফেলেছিলেন। বলে রাখা ভালো, তখনো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ বা ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর সাথে আমার পরিচয় হয়নি; পরিচয় হয়নি বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকরসহ অনেকের সাথেই। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এবং ‘নন্দিত নরকে’ লেখার পর হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখিতেও কিছুদিন ছেদ পড়ে; এবং সেই সময় বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর-মানিক থেকে শীর্ষেন্দু-সুনীল-শওকত ওসমান-রশীদ করিম-মাহমুদুল হক-সৈয়দ হক-রিজিয়া রহমানসহ অনেকের উপন্যাসই আমার ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের পুনরাবির্ভাব ঘটেছে এবং তার উপন্যাস পড়ে বহুবার পাঠসুখ পেলেও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ আমার প্রিয় উপন্যাস হয়ে আছে। তাই আমি আমার প্রথম যৌবনে পড়া ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এর পাঠস্মৃতি শেয়ার করতে চাই সব সময়। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। উপন্যাসটি হুমায়ূন উৎসর্গ করেছিলেন তার দুই কাছের মানুষ আহমদ ছফা এবং আনিস সাবেতকে। প্রথম প্রকাশের ভ‚মিকায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন, “সোমেন চন্দের লেখা অসাধারণ ছোট গল্প ‘ইঁদুর’ পড়ার পরই নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিয়ে গল্প লেখার একটা সুতীব্র ইচ্ছা হয়। ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘মনসুবিজন’ নামে তিনটি আলাদা গল্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেলি। নিজের উপরে বিশ্বাসের অভাবের জন্যেই লেখাগুলি দীর্ঘদিন আড়ালে পড়ে থাকে। যা-ই হোক, জনাব আহমদ ছফা ও বন্ধু রফিক কায়সারের আগ্রহে ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয় মাসছয়েক আগে। এবারে প্রকাশিত হলো ‘শঙ্খনীল কারাগার’।”

বাঙালি নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগরিক জীবন ও নিত্যতার আনন্দ-বেদনার অসাধারণ চালচিত্র হুমায়ূন নিপুণ মুন্সিয়ানায় বাক্সময় করে তুলেছেন তার ৮০-৯০ পৃষ্ঠার শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাসে। উপন্যাসের ভাষা-সারল্য এবং গতিময়তা প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিলেন। উপন্যাসের আরও দু’টি গুণের কথা না বললেই নয়; যার একটি উপস্থাপনশৈলীর বিন্যাসে বিশ্বস্ততা এবং অন্যটি হিউমার-ঋদ্ধ বাক্যবিন্যাস। দীর্ঘসময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কেন হুমায়ূন আহমেদের শঙ্খনীল কারাগার আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল? সেটাই আজকের অনুসন্ধান। খুব সংক্ষেপে যদি স্মৃতি থেকে উপন্যাসটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে চাই, তাহলে বলতে পারি— কাহিনীর কথক ‘খোকা’ কলেজ-শিক্ষক। খোকারা ছয় ভাইবোন- রাবেয়া, খোকা, রুনু, ঝুনু, মন্টু আর নীনু। এক মায়ের গর্ভজাত হলেও সবার বড় রাবেয়া মায়ের আগের পক্ষের মেয়ে। রাবেয়ার বাবা আবিদ হোসেন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। আবিদ হোসেনের সাথে খোকার মায়ের সংসার টেকেনি; ছাড়াছাড়ির পর তাদের বাড়ির চিলেকোঠায় আশ্রিত বিএ পাস বেকার আজহার হোসেনকে বিয়ে করেন খোকার মা। খোকার মা শিরিন সুলতানা এমএ পাস, অভিজাত, ভালো গাইতেন। রাবেয়ার বাবার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর, দরিদ্র আজহার হোসেনকে বিয়ে করে তার ভাড়া বাড়িতে উঠে আসেন শিরিন। আজহার হোসেনের সাথে শিরিনের ২৩ বছরের নিরুত্তাপ সংসারে ক্রমান্বয়ে জন্মায় খোকা, রুনু, ঝুনু আর মন্টু। ছোট মেয়ে নীনুর জন্মের সময় মারা যান খোকার মা শিরিন। মায়ের মৃত্যুতেও কোনো কিছু থেমে থাকে না। জীবন চলতে থাকে। জীবনের এইসব সমীকরণের গল্প নিয়ে পল্লবিত কাহিনীর নাম ‘শঙ্খনীল কারাগার’। প্রায় সাদামাটা নিম্নবিত্তের নিরীহ অথচ কিছুটা জটিল নাগরিক জীবনের গল্পে যুক্ত হলো কিছু বাড়তি দ্যুতি।

গায়ের রঙ কালো হবার কারণে রাবেয়ার বিয়ে না হওয়া; এই সামাজিক বাস্তবতাটি এমন নিপুণভাবে হুমায়ূন রচনা করেন, পাঠকের কাছে রাবেয়া স্বজন হয়ে যায়; রাবেয়ার জন্য সবাই গভীর টান অনুভব করেন; যেন রাবেয়ার সাথে দেখা হলেই আনন্দ। যে মেয়েটির গভীর ভালোবাসায় পুরো সংসার আপন গতিতে চলতে থাকে, বড় হতে থাকে তাদের সবচেয়ে ছোট বোন-নীনু; ভিন্ন বাবার সন্তান হবার পরও তাই রাবুআপা সবার চোখের মনি হয়ে থাকেন। টানাপড়েনের সংসারটিও হয় ওঠে স্বর্গ। কাহিনীতে কিছু ঝড়ঝাপ্টাও আসে; খোকার বোন রুনুর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা পাশের বাড়ির মনসুরের; একটা চিঠির কারণে ভেঙে যায় বিয়ে। মনসুরের বিয়ে হয় আরেক বোন ঝুনুর সাথে। দুঃখে মানসিক ভারসাম্য হারায় রুনু এবং মারা যায়। এভাবেই একটি একটি করে সংকট এসে ভিড় করে সুখী সংসারে। কাহিনীর বাঁকে একসময় রাবেয়ার ধনাঢ্য বাবার আবির্ভাব ঘটে। রুনুর মৃত্যুর পর তার ছোট্ট ট্রাঙ্ক থেকে পাওয়া ডায়েরিটি গল্পে যোগ করে নতুন ব্যঞ্জনা এবং সেই ডায়েরির উপস্থাপনশৈলীটিও ঘনিষ্ঠ; খুবই সাদামাটা আর আটপৌরে। তারপরও যেন জাদুময় ঝিলিক।

সব মিলিয়ে কাছের মানুষগুলো যখন ধীরে দূরে সরে যায়, রাবেয়া ময়মনসিংহ শহরের একটি হাই স্কুলের গার্লস হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট হয়ে পরিবার থেকে কিছুটা দূরে চলে যায়। রাবেয়ার এই দূরে সরে যাওয়া এবং ময়মনসিংহ থেকে খোকাকে লেখে মাধুর্যভরা চিঠিটিও হয়ে ওঠে উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ- “খোকা, তোদের সঙ্গে যখন থাকতাম তখন এক ধরনের শান্তি পেয়েছি, এখন অন্য ধরনের। এখানে মনে হচ্ছে জীবনের সমস্ত কামনা বাসনা কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে গেছে। আর বেশি কিছু চাইবার নেই। কাল রাতে ছাদে বসে ছিলাম একা একা। কেন যেন মনে হলো একটু কাঁদি নির্জনে। মার কথা ভেবে, রুনুর কথা ভেবে দু’এক ফোঁটা চোখের জল ফেলি। কিন্তু একটুও কান্না আসলো না! কেন কাঁদবো বল? প্রচুর দুঃখ আছে আমার। এত প্রচুর যে কোনোদিন কেউ তা জানতেও পারবে না। কিন্তু তবুও আমি খোকার মতো ভাই পেয়েছি, কিটকির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে যে ভাই আমাকেই সান্ত¡না দিতে আসে। রুনু, ঝুনুু, মন্টু, নীনু- এরা আমার পারুল বোন চম্পা ভাই। চারদিকে এমন চাঁদের হাটে কি কোনো দুঃখ থাকে?” কী অসাধারণ! কাহিনীর ভাষ্যকার খোকা যখন স্মৃতির প্রাচুর্য-বেদনায় নিঃসঙ্গতায় ডুবে যেতে থাকে, তার সে নিঃসঙ্গতাও যেন পাঠককে আঁকড়ে ধরে- “মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্না সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতায় সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে ওঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশে অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”

‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাসের অপূর্ব ছন্দময়তা বারবার আপ্লুত করে পাঠকের অন্তর। হুমায়ূনের গদ্যশৈলী পাঠককে টেনে নিয়ে যায় গল্প শেষ অব্দি। সূ² অনুভূতিগুলো, ভালোলাগায় ভরে ওঠে; যে ভালোলাগাই খোকার সাথে পাঠকের নিবিড় সংযোগ ঘটিয়ে দেয়; ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাসটি এভাবেই প্রিয় হয়ে ওঠে আমার এবং যে কোনো সংবেদী পাঠকের কাছে। হুমায়ূন তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘বলপয়েন্ট’-এ নিজের প্রথম উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ লেখার পটভ‚মি লিখেছেন। যেখানে তিনি বলেন- “বয়স তখন উনিশ। মন আবেগে পূর্ণ। ইউনিভার্সিটি ছুটি হয়েছে। ছুটি কাটাতে বরিশালের পিরোজপুরে গিয়েছি। একগাদা ঈযবসরংঃৎু বই নিয়ে গেছি। আগামীকাল থেকে পড়তে শুরু করব, এই ভেবে সময় কাটাচ্ছি। বইয়ের পাতা খোলা হচ্ছে না। বিকেলে কেমন যেন অস্থির লাগে। আমি হাঁটতে বের হই। ... প্রথমেই একটা কবরখানা পড়ে। গাছপালায় ঢাকা এমন সুন্দর একটা জায়গা। একদিন কবরখানার ভেতরে ঢুকলাম। অবাক কাণ্ড, কবরখানার ভেতর টলটলে পানির ছোট্ট একটা পুকুর। পুকুরের পাশে শ্যাওলা ধরা এক কামরার মসজিদ। আমার বৈকালিক ভ্রমণে পিরোজপুর কবরখানা একটি বিশেষ জায়গা দখল করে ফেলল। প্রায়ই সেখানে যাই, কবরের গায়ে লেখা নামগুলি পড়ি। ... আমি একদিন এই কবরস্থান থেকে ফিরেই প্রথম উপন্যাস লেখায় হাত দিই।... বাইরে তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাসার সামনে বিশাল পুকুর। পুকুর থেকে ঝুপঝুপ বৃষ্টির শব্দ আসছে। পিরোজপুর শহরে বৃষ্টি হওয়া মানেই কারেন্ট চলে যাওয়া। আমি সিরিয়াসলি পড়ছি ভেবেই আমার সামনে হারিকেন দেয়া হয়েছে।

আমার মাথার ভেতর একের পর এক লাইন আসছে। এক ধরনের অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আমি লিখতে শুরু করেছি আমার প্রথম উপন্যাস- শঙ্খনীল কারাগার। শঙ্খনীল কারাগার আমার প্রথম লেখা উপন্যাস, যদিও প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস নন্দিত নরকে।” আমরা জানি, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ অবলম্বনে ১৯৯২ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেই চলচ্চিত্রে রাবেয়া ও খোকা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে ডলি জহুর ও আসাদুজ্জামান নূর; অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আবুল হায়াত, জাফর ইকবাল, সুবর্ণা মোস্তাফা, চম্পা প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে ১৯৯২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। মাত্র ১৯ বছরের একজন যুবক যে মুন্সিয়ানায় সংসারের গূঢ়তম জটিল কথা সহজ-সরল বাক্যবন্ধে তুলে ধরে নিজের আগমনবার্তা সবাইকে জানান দিলেন, তা এককথায় অসাধারণ। ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এর প্রতিটি পাতায় আছে একজন দক্ষ জীবনশিল্পীর নিবিড় স্পর্শ। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে যেন গভীর মমতায় সৃষ্টি করেছেন হুমায়ূন। গল্প বলার সরল্যের মধ্যেও কিছু রহস্যময়তা যোগ করে সে রহস্যের উন্মোচন ঘটিয়েছেন সমাপ্তিতে; হুমায়ূনের এ গল্পশৈলীটিও আমায় আকৃষ্ট করেছে। আমি চাইবো, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে পড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনাসৃত গল্প ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এর সৌন্দর্য পাঠ থেকে নতুন প্রজন্মের পাঠক যেন বঞ্চিত না হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App