×

সাময়িকী

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ ও রোমান্টিকতায় উজ্জ্বল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৫৯ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ ও রোমান্টিকতায় উজ্জ্বল

কবি নজমুল হেলাল একজন বহুমাত্রিক কবি প্রতিভা। নজমুল হেলালের কবিতায় সুতীব্র সমাজ সচেতনতার পাশাপাশি আবহমান বাংলা এবং বাঙালি একাকার হয়ে দেখা দিয়েছে। একই সাথে তিনি একজন ঐতিহ্য সচেতন কবি প্রতিভা। বাঙালি ও বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি কবি’র যেমন রয়েছে গভীর আস্থা এবং শ্রদ্ধা তেমনি বৈশি্বক চেতনায় ঋদ্ধ। তাই নির্মোহ এবং নিরপেক্ষতায় তার কবিতাগুলো ক্লাসিক রূপ লাভে ধন্য হতে চলেছে। ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সচেতন কবি হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলা ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। কবি নজমুল হেলাল ‘বঙ্গলিপি’র জয়গান’ কবিতায় ভাষা, ভাষার হাজার বছরের সংগ্রাম এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আমরা জানি, এক সময় পূর্ব পাকিস্তানিরা জোর করে আমাদের ওপর উর্দু নামক ভাষার জগদ্দল পাথর আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার রয়েছে হাজার বছরের সুমহান সমৃদ্ধ সংগ্রামী ইতিহাস। বাংলা ভাষা তার আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল-

“উর্দু শুধু আল্লাহ্র ভাষা নয়রে এই কথা আজ বঙ্গলিপি কয়রে। ভয়কে দিয়ে দূরে ঠেলে উড়ছে লিপি পাখা মেলে বঙ্গলিপির জয়রে”। (বঙ্গলিপি’র জয়গান)

নজমুল হেলালের কবিতায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অনুরণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানেই পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে এক গভীর শ্রদ্ধার নাম। অপরিমেয় ভালোবাসার নাম। দুর্জয় সাহস ও অকুতোভয় সেনানীর নাম। বাংলা বাঙালি ও সংগ্রাম- এই তিনটি বিষয় মহান ব্যক্তিত্বের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

“ যত আশা যত ভালবাসা তার চেয়ে ভাষাপ্রেম শিকড় সন্ধানে নেমে পড়ে জাগ্রত ছাত্র জনতাকে নিয়ে কারাগারে রোজনামচা লেখেন বঙ্গবন্ধু রাজপথ রঞ্জিত করে ক’বে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে”। (বাংলাদেশ রূপে মুজিবই বহমান থাকে)

কবি নজমুল হেলাল দেখাতে চাচ্ছেন, যতদিন বাংলার বুকে পদ্মা, মেঘনা, গৌরি, যমুনার স্রোতধারা বহমান থাকবে ততদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কীর্তি বহমান থাকবে। কারণ তার এই কীর্তি হাজার বছরের সাধনার ধন। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে তিনি স্বাধীনতার মতো পরম আকাক্সিক্ষত বস্তুটি আমাদের উপহার দিয়েছেন। তিনি কেবল জাতির জনক বা স্বপ্নদ্রষ্টা অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন না বাংলাদেশের বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সোনালি দেশ বিনির্মাণের প্রতিটি ধাপেই ইতিহাস হয়ে আছেন। তার বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা, অমিত-সাহসী মনোভাব, পরিকল্পিত নির্দেশনা বাংলাদেশ বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একবৃন্তে তিনটি চেতনার ফুল। বিশ্বের মুক্তিকামি মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চির অম্লান, চিরঞ্জীব। তদ্রুপ বাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-মেহনতি জনতার হৃদয়সহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন। বাংলার মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল বাংলাদেশ ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। মাত্র সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু কে জানত স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকেরা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র শানিয়ে তুলছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। “ কোথায় পাবো এমন নেতা আঁধার রাতের আলো মুজিব প্রদীপ লুকিয়ে না রেখে ঘরে ঘরে আজ জ্বালো।” (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ)

কবি নজমুল হেলাল উচ্চতর দার্শনিক মার্গের এই তত্তে্ব বিশ্বাস করেন যে, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষের নশ্বর দেহকে হারিয়ে ফেললেও মহান নেতার অবিনশ্বর স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের অহংকার পতাকা ও সার্বভৌমত্বের সৃষ্টির দাবিদার। অসাম্প্রদায়িক চেতনার রূপকার, মুক্ত গণতন্ত্র চেতনার পতাকাবাহী চার মূলনীতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে বেঁচে না থাকলেও বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল প্রতিটি বাঙালির অন্তরে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহাপুরুষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। কবি নজমুল হেলাল তার বাংলাদেশের রূপে মুজিবই বহমান থাকে, কবিতায় স্পষ্ট ঘোষণা করলেন-

“আদর্শ স্বরূপে সাহসের নাও হয়ে আজও বহে জীবনে মরণে নিত্য স্মরণে চেতনায় সদা পাই যাঁকে মহান মুজিব বলি তাঁকে”।

মুজিব এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা একই সূত্রে গ্রথিত। তীব্র সমাজ সচেতন কবি নজমুল হেলালের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নামক কবিতায় অসম সাহসী মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতা যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কবির যেন এক মহাকাব্যিক শ্রদ্ধার্ঘ্য “মুক্তিযোদ্ধা মনের মানুষ নির্ভয় এক প্রাণ; ব্যর্থতা তার পদতলে গায়রে জয়গান”

পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি কবি নজমুল হেলাল একজন তীব্র সমাজ সচেতন ও বহুমাত্রিক চেতনার কবি। তার কবিতায় আধুনিক সভ্যতার কর্মনাশা স্রোতটিও সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। কবি বৈশ্বিক সংটটের প্রেক্ষিতে উপলব্ধি করেছেন যে মানুষের তৈরি যন্ত্রদানবের জাঁতাকলে পৃষ্ট হয়ে যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষের কর্মকাণ্ডকে বড় বেশি আর্টিফেশিয়াল করে তুলেছে। তাই প্রকৃতি আজ মানুষের প্রতি বড়ই বিমুখ। গ্রিন হাউসের প্রভাবে বাংলাদেশেও আজ প্রচণ্ড প্রাকৃতিক বিপর্যয়। “মঞ্চ তোরণে ফুলদানিতে নকল ফুল বারান্দার গ্রিলে মানিপ্ল্যান্ট.......... “কুমারী বধূর শিউলিহীন খোঁপা বাতাসকে বিরহী করে তোলে রাতদিন শিউলি ভরা উঠান কোথায় পাবো শিশির ভেজা ভোর বেলায়।”

(শরতে শিউলি শেফালি নেই)

‘প্রিয়তমা পৃথিবী’ কবিতায় একই সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবি নিকট অতীত ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের আদলে সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছেন যে, সভ্যতার বেদনাদীর্ণ অবক্ষয়ের পেছনে রয়েছে মানুষের বিধ্বংসী চেতনার স্বাক্ষর। আমরাই করোনা নামক মহাব্যধিকে আমন্ত্রণ করেছি। প্রকৃতির নির্মম প্রতিহিংসার কাছে মানুষ আজ অসহায়। বেদনার্ত কবির কলম থেকে তাই অসহায় আকুতি বের হয়ে আসে

“করোনা তুমি চ’লে যাও” কবিতার মর্মে ইতিহাস আর অস্তিত্বে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞানকে সামনে রেখে রোমান্টিকতার বিভোরে কবি তার “ভালবাসলেই খোঁজ রাখতে হয়”- কবিতায় লিখলেন,-

“কখনো খোঁজ রাখতে হয় চোখে কখনো কানে কখনো মনে মনে সঙ্গোপনে খোঁজ রাখতে হয়।”

নিরবধি কালের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসে কবি নজমুল হেলালের কবিতা সাহসী সময়ের নকিব, চিত্তদীর্ণ হৃদয়ের তীরভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়ের মধ্যে সাহসী উচ্চারণ আশায় বসতির বিচ্ছুরণ। ২২ কার্তিক জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের শ্রদ্ধা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App