×

সাময়িকী

দহনকাল নিপীড়িত মানুষের জলছবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২০, ০৫:১৬ পিএম

দহনকাল নিপীড়িত মানুষের জলছবি

একটি নিম্ন সমাজে, নিম্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও মানুষ কীভাবে তাঁর চলার পথ সুগম করে তুলতে পারে তা দহনকাল পড়লেই অনুধাবন করা সম্ভব। এক কথায় নিপীড়িত মানুষের জলছবি ফুটে আছে দহনকাল উপন্যাসটিতে। দহনকালের লেখক কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের জীবন থেকে নেওয়া এই উপন্যাসটি তাঁর এক অনবদ্য রচনা। তাঁর লেখনীর নিখুঁত নিপুণ আঁচড়ে উপন্যাসটি পাঠক হৃদয় নাড়া দিয়েছে। তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তাঁর আত্মজীবনের বেড়ে ওঠা সংগ্রামী পথের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ও জেলে সম্প্রদায়ের কঠিন সংগ্রামের জীবনচরিত তুলে ধরেছেন। দহনকাল উপন্যাসটি পড়লে অনায়াসে উপলব্ধি করা যায়, গোবরেও পদ্মফুল ফোটে। তাছাড়া এই উপন্যাসের আদ্যোপ্রান্ত পড়লে মানব জীবনে বৃহৎ এক দীক্ষা লাভ করা সম্ভব। এই উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে আমরা আরো জানতে পেরেছি, মুক্তিযুদ্ধের অতীত ইতিহাস। চোখের সামনে ভোরের শিশিরের মতোই যেন জ্বলজ্বল করে ওঠে সেইসব করুণ চিত্র। জরাজীর্ণ জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা মানুষগুলো আরেক যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। বহু নারী নির্যাতিত ও বহু মানুষের জীবন নাশ হয়। জীবন-জীবিকা ও মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে করতে মানুষগুলো একসময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তারপর বহু জলদাসের জীবনের সমাধি ঘটে। আমরা বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে পৌঁছে, কষ্টে অতিবাহিত করা অনেক জনজীবনের ইতিহাসই ভুলে থাকি, অজানা রয়ে যায় অনেক কিছুই। কিন্তু ‘দহনকাল’ উপন্যাসটি লেখক আপন-মহিমায় অসাধারণ উপস্থাপনে আবার আমাদের সামনে নতুন ঝকঝকে আরশির মতোই বাঁধাই করে দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন নিম্ন শ্রেণির মানুষের নিত্য টানাপড়নে জর্জরিত হওয়ার কালচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানুষগুলোর দুর্বিষহ জীবনের বাস্তবচিত্র। দহনকালের পরিসমাপ্তিতে পাঠক অনুমান করতে পারবে যে, লেখকের এই উপন্যাসের প্রতিটি ঘটনায়, প্রতিটি চরিত্রে তাঁর দীর্ঘশ্বাস মিশে রয়েছে। লেখকের ভাষা- ‘এখন পিতা আর পিতা নেই, পিতা হয়ে উঠেছেন গলগ্রহ, অসহনীয় বোঝা’। সত্যিই কি নিদারুণ নিয়ম পৃথিবীর প্রান্তজুড়ে! নিজে সচল তো দাম আছে, সমীহ করে সবাই, নিজে অচল তো দু’পয়সা মূল্য আর থাকে না কারো কাছে। উৎসাহমূলক সংলাপ- ‘তাঁর আদরে, অনুশীলনে সেই ছাত্রদের মস্তিষ্ক থেকে মরিচা ঝরে পড়ে একটা চকচকে তলোয়ার বের হয়ে এসেছে। চিত্তরঞ্জন দূর থেকে সেই তলোয়ারের ঝিলিক দেখেন। মাঝেমধ্যে সেই তলোয়ারে চোখ বুজে হাত বুলান। তখন এক পরম দীপ্তিতে তাঁর মুখমণ্ডল ভেসে যায়।’ সত্যিই, শিক্ষার দ্যুতি ভীষণ প্রখর, প্রসার। যিনি শিক্ষা দেন তিনিও সে আলোয় আলোকিত হন যিনি গ্রহণ করেন তিনিও আলোকিত হয়। হরিশংকর জলদাস! জন্ম, ১৯৫৫ সালে। পিতা যুধিষ্ঠির ও মা শুকতারা। চট্টগ্রাম শহরের জেলে পাড়ায় বেড়ে ওঠেন হরিশংকর জলদাস। ১৪১৬ বঙ্গাব্দে হরিশংকর জলদাসের দহনকাল উপন্যাসটি ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার লাভ করে। ২০১১ সালে ‘ড. রশীদ আল ফারুকী সম্মাননা স্মারক’ পুরস্কারে ভূষিত হন এই লেখক। ২০১৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App