×

সাময়িকী

বর্তমান তাকে উপেক্ষা করতে পারে ভবিষ্যৎ তার জন্য অপেক্ষা করছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০১ পিএম

বর্তমান তাকে উপেক্ষা করতে পারে ভবিষ্যৎ তার জন্য অপেক্ষা করছে

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা। লেখক হিসেবে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। তাঁর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে জিহাদের প্রতিকৃতি অন্যতম। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি নিরলসভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে জনমত গঠনসহ নানাবিধ কাজ করে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি নির্মূল কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে শ্রদ্ধা ভালোবাসা আপনার প্রতি।

শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে যখন আমার পরিচয় তখন আমাদের বয়স ১৮। আমাদের আরেক বন্ধু আলী ইমামেরও সেই বয়স। অবশ্য, শাহরিয়ার আর আলী ইমাম জগন্নাথ কলেজে এক সঙ্গে পড়েছে, সংগঠন করেছে। আমি মফস্বলের ছাত্র, পড়েছি চট্টগ্রাম কলেজে। যে বয়সে আমাদের পরিচয় হলো সে বয়স সুকান্তের ভাষায়, দুঃসাহসের বয়স। দুঃসাহস আমার আর আলী ইমামের না থাকলেও শাহরিয়ারের ছিল এবং এখনও আছে। সেটি তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তবে এ কথা বলতে পারি। ১৯৬৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পথে হেঁটে আমরা এখনও বেঁচে আছি এবং সত্তরের পথে চলছি। আমাদের বন্ধুরা, মারা যাচ্ছে, অনেকে অসুস্থ। আমার কৈশোরের আরেক বন্ধু শামসুদ্দিন পেয়ারা গতকাল ফোন করে বলল, আরে মামুন, ১৬ বছরে না ভর্তি হলাম কলেজে, এখন দেখি বয়স ৭০। কীভাবে হলোরে? শেষ বয়সে এ প্রশ্ন সবাই করে, মহাজ্ঞানী-মহাজনরাও করেছেন। এবং এ থেকেই দর্শনের উৎপত্তি। আমাদের জেনারেশনে শাহরিয়ার ছিল সবচেয়ে মেধাবী। বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা ছিল আলী ইমামের। আমি তাদের তুলনায় নবীন। এক সঙ্গেই তিনজনের লেখালেখি। যাকে বলে কিশোর সাহিত্য তা দিয়েই আমাদের তিনজনের শুরু। কিন্তু লেখালেখিতে শাহরিয়ার ছিল এগিয়ে। তবে আলী ইমাম হেন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে লেখেনি। যা তার বিষয় নয় তা নিয়েও। এতে আলী ইমাম অন্তিমে লাভবান হয়নি।

আমাদের যৌবনটা ছিল লড়াইয়ের। সংগ্রামে মিছিলে আমি আর শাহরিয়ার ছিলাম, আলী ইমাম ছিল না। রাজনীতি সম্পর্কে তার ধারণা স্পষ্ট নয়। আমার ধারণা অস্পষ্ট নয়, কিন্তু সে বয়সে সেটি মুখ্য ছিল না, ছিল লেখালেখি। যৌবনের মাঝামাঝি রাজনীতি সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা হয় শাহরিয়ারের, আমার নয়। এখন পরিণত বয়সে দু’জনের ধারণা একই রকম।

যৌবন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই আমি আর শাহরিয়ার চাকরি জীবন শুরু করেছি, সাংবাদিকতা। বিএনপির নাজমুল হুদা আক্রোশবশত শাহরিয়ারের চাকরি খাওয়ার পর, শাহরিয়ার আর চাকরি করেনি। আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে শিক্ষকতা করেছি। ৪৫ বছর শিক্ষকতা করার পর অবসর নিয়েছি।

গত সপ্তাহে আমাদের দু’জনের দেখা হয়েছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর সংবাদ বিনিময়ের পর নিজেদের প্রসঙ্গ এল। আমরা জানলাম, আমরাও আছি পড়ন্ত বেলায়। যাবার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। জীবনে খেদ নেই কোনো। এখন শুধু অপেক্ষা।

৫০ বছরের স্মৃতিচারণ দু’পাতায় হয় না। আমাদের দু’জনের কর্ম ও সক্রিয় জীবন বাংলাদেশের ঘাত প্রতিঘাতের সঙ্গে যুক্ত। বা বলা যায় আমাদের জেনারেশন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং সে কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ হয় না। আমি শুধু শাহরিয়ারের কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করব।

আমাদের সময় যারা শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা শুরু করেছিল তাদের অনেকে লেখা ছেড়ে দিয়েছে কর্মজীবনে প্রবেশ করে। অনেকে গত। গত শতকের ষাটের শেষ থেকে ৮০ দশক পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের লেখায় অন্যতম ছিল শাহরিয়ার ও আলী ইমাম। সেই সময় শাহরিয়ারের একটির পর একটি বই বেরিয়েছে এবং সে সংখ্যা হবে ৬০-এর মতো। ঐ জেনারেশনে শাহরিয়ারের মতো কৃতি লেখক, জনপ্রিয় কেউ ছিল না। জাফর ইকবাল এসেছেন আরো পরে। শাহরিয়ারের লেখায় বৈচিত্র্য ছিল যা তার সমসাময়িক বা পরবর্তী লেখকদের লেখায় ছিল না।

এখানে উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালেই কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘পূবের সূর্য’। তা শাহরিয়ারেরই লেখা। যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলন শুরু করার পর তার লেখায় ভাটা পড়ে এবং এক পর্যায়ে থেমে যায়। এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিক সামাজিক জীবনে তার অবদান থাকবে, কিন্তু লেখা চিরকালীন। আজ তার লেখা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে কয়েকটি জেনারেশন উপকৃত হতো। তাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করত যা আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধ আন্দোলন থেকে কম নয়।

নির্মূল কমিটি করতে গিয়ে শাহরিয়ার এরপর প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছে। এসব প্রবন্ধের সংশ্লিষ্টতা ছিল আন্দোলনের সঙ্গে। এবং গত শতকের নব্বইয়ের পর যেসব তরুণ সক্রিয় ছিল বিভিন্ন আন্দোলনে, শাহরিয়ারের সে সব লেখা পড়ে তারা উপকৃত হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্দোলন শাহরিয়ার গত শতকের নব্বই দশকে শুরু করেছে তা নয়। ১৯৭২ সালে শহীদ মিনারে যে সভা হয়েছিল সেখানে আমরা দু’জন ছিলাম। তখন আমরা সবে কুড়িতে পা দিয়েছি। তারপর বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া। বক্তৃতা বিবৃতি সবকিছুতে শাহরিয়ার ছিল, আমি তার সঙ্গী ছিলাম মাত্র। নব্বই দশকে ঘাতকবিরোধী আন্দোলনের যখন সূত্রপাত তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্নেল নুরুজ্জামান, আহমদ শরীফ বা হাসান ইমামের মতো মুরব্বিরা সামনে ছিলেন বটে কিন্তু শাহরিয়ার ছিল মূল চালিকাশক্তি। ‘একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়’ বইটি প্রকাশের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিল শাহরিয়ার। ঘাতকবিরোধী আন্দোলনে এই একটি বইয়ের অবদান ছিল অসীম। বইমেলায় যেদিন বইটি বেরুলো সেদিন এর প্রকাশক ডানা পাবলিশার্স-এ আমরা দু’জন দুপুর তিনটা থেকে বসে। আর একজনের পর একজন ভিড় করছেন বইটি কখন আসবে তার অপেক্ষায়। সে এক দিন বটে! নির্মূল কমিটি এরপর অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু শাহরিয়ারের প্রচেষ্টার কারণে মূল ধারা অক্ষুণ্ন রয়েছে। জাহানারা ইমামেরও সে প্রিয় ছিল। একই সঙ্গে জামায়াতবিরোধী ও মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনেরও সূত্রপাত করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার সময় সবার আগে রুখে দাঁড়িয়েছে শাহরিয়ার। সে সব এলাকায় সবার আগে ছুটে গেছে শাহরিয়ার, সান্ত্বনা ও সাহসও দিয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন মনে করেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে শেখ হাসিনা এবং লেখকদের মধ্যে শাহরিয়ার কবির তাদের আপনজন। এত ঘাত প্রতিঘাতের পরও শাহরিয়ার একা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, জেলে গেছে দু’বার, প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটিয়েছে। গত চার দশকে আমি তাকে এ প্রতিজ্ঞা থেকে সরে দাঁড়াতে দেখিনি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন মানুষকে এক প্লাটফর্মে জড়ো করার কৃতিত্বটাও তার।

মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের সিদ্ধান্তের পর, এর আইন, প্রসিকিউশন স্থাপন- সব ক্ষেত্রে শাহরিয়ার ভূমিকা রেখেছে। এবং সব সময় একটি কথা বলেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা না থাকলে এ বিচার কখনও সম্ভব হতো না। আমরা অনেকে তার সঙ্গে ছিলাম বটে কিন্তু মূল নেতৃত্ব ছিল শাহরিয়ারের এবং আড়ালে থেকে কাজ করেছেন নির্মূল কমিটির সম্পাদক কাজী মুকুল।

যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্দোলন শাহরিয়ার গত শতকের নব্বই দশকে শুরু করেছে তা নয়। ১৯৭২ সালে শহীদ মিনারে যে সভা হয়েছিল সেখানে আমরা দু’জন ছিলাম। তখন আমরা সবে কুড়িতে পা দিয়েছি। তারপর বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া। বক্তৃতা বিবৃতি সবকিছুতে শাহরিয়ার ছিল, আমি তার সঙ্গী ছিলাম মাত্র।

জামায়াতবিরোধী, মৌল জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রেও ছিল শাহরিয়ার। শামসুর রাহমানের ওপর আক্রমণের পর এ বিষয়ে সে আন্দোলনের সূত্রপাত করে। তখন অনেকে বলেছিলেন, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেকেও যে, এখানে জঙ্গি আসবে কোত্থেকে? শামসুর রাহমান পাবলিসিটির জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। শাহরিয়ার কিন্তু ক্রমাগত এসব বিষয়ে লিখেছে, নাগরিক সমাজকে সচেতন করেছে। বর্তমান সরকারের বড় কৃতিত্ব মৌল জঙ্গিবাদ দমন। কিন্তু সরকারের অভিপ্রায়ের আগেই শাহরিয়ার এই কাজ শুরু করেছে এবং করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এটিও তার জীবনের একটি বড় কৃতিত্ব। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে আসার অনেক আগে শাহরিয়ার লিখেছে ও বলেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে জঙ্গি সৃষ্টি হতে পারে এবং তা সমূহ বিপদ ডেকে আনবে এ অঞ্চলে। রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ নিয়ে যে জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে সে বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে শাহরিয়ার। মৌল-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সুফিবাদ নিয়ে বেশ ক’টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে শাহরিয়ার।

অনেকেই অবাক হন এ ভেবে যে, শাহরিয়ারের সঙ্গে ৫০ বছর আমার সম্পর্ক টিকে আছে কী করে? অনেকেই তার সঙ্গে আলোচনায় বা কাজ করতে স্বস্তিবোধ করেন না। কারণ সে উচ্চকণ্ঠ, অনেক ক্ষেত্রে বদরাগী, একগুঁয়ে ইত্যাদি। আসলে সে অত্যন্ত আবেগী, বন্ধু ও পরিবার বৎসল। ১৯৭১ সালের মার্চে আমি থাকতাম বিহারি অধ্যুষিত পল্লবীতে। আমরা বিহারিদের হাত থেকে মুক্তি পাই ২৯ মার্চ এবং সেদিন ঢাকায় আসি। শাহরিয়ার সেই ২৯-৩০ মার্চ একাকী আমার খোঁজে গেছে পল্লবীতে। পরে ঢাকায় আমাকে খুঁজে বের করেছে। সীমান্ত পেরুবার সময় আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছে। ঢাকায় ফিরে প্রথমে আমার খোঁজ করেছে। আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র নাহিন ওরফে মেসবাহউদ্দিন মুনতাসীর তার কোলে কোলে থেকেছে। এখনও সে বিদেশ গেলে আমার জন্য একটি পেইন্টিং বা পুতুল নিয়ে আসে। আন্দোলন, লেখালেখি থেকে এসব বিষয়গুলি আমার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ বাঁচে কয়দিন!

শাহরিয়ারকে একটি মহল সব সময় চীনাপন্থি বা আওয়ামী বিরোধী বলেছে। সরকার তো এখন চীনাপন্থি, কারণ, চীনের সখ্য তাদের কাম্য। জীবনের প্রথম পর্যায়ে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল সে, এ কারণেই এ রটনা। অথচ, তার নেতৃত্বে যত কাজ হয়েছে, সব আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে। জাতীয় সংবিধান দিবস, গণহত্যা দিবস পালনে সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মানুষজন বলে, শাহরিয়ার তো আপনার থেকেও বেশি হাসিনাপন্থি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে যত ইতিবাচক লেখা সে লিখেছে, সরকারের কোনো চামচা বা চামচা লেখকও তা লিখতে পারেনি। চীনাপন্থি বিবেচনায় শুনেছি, এই একটি কারণে শাহরিয়ারকে রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার দেয়া হয়নি। এটি আমাদের চেয়ে সরকারের জন্য লজ্জার। কারণ তা সরকারের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে এবং প্রমাণ করে অনেক অপদার্থ অযোগ্যকে শুধু তদবিরের জোরে পুরস্কৃত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সখ্য থাকলে যদি লজ্জার না হয় তাহলে আর কিছু লজ্জার হবে কেন? আজকে যারা সরকারে আছেন, রাজনীতিতে আছেন, মিডিয়াতে বা নিজ এলাকায় তিনি পরিচিত। কিন্তু শাহরিয়ার কবির সারা দেশে পরিচিত। আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজে সে পরিচিত। তাকে সম্মান জানানোর অর্থ নিজেকে সম্মান জানানো।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য এবং আমি জানি সে কথা কেউ মনে রাখেনি। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার বিচারে প্রথমে তারেক জিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছিল। মামলার প্রথম তদন্তকারীই বোধহয় চার্জশিট দিয়েছিলেন। শাহরিয়ারও প্রথম এক তথ্যচিত্রে দেখায়- বিখ্যাত একজন জঙ্গি বলছেন, তারেক জিয়ার বাসায়ই এই গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র হয়। অন্যান্য অনেক তথ্যও দিই। তদন্তকারী শাহরিয়ারকে বাধা দিয়েছিলেন এ সব অজানা তথ্য প্রকাশে। কিন্তু তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন শাহরিয়ারের পাশে ছিলেন। তদন্তকারী এই প্রমাণে বাধ্য হয় তারেক জিয়াকে অভিযুক্ত করতে।

শাহরিয়ার আমার বন্ধু এ জন্য আমি গর্বিত। অনেক ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে কিন্তু একজীবনে সে যা করেছে, আমাদের জেনারেশনের অনেকেই তা করতে পারেনি। শাহরিয়ার সমাজের জন্য কাজ করেছে, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেছে। তাঁর অনেক কর্ম, বক্তব্য আমাদের পছন্দ হতে না পারে, এস্টাবলিশমেন্ট তাঁর ন্যায্য সম্মান দিতে না পারে কিন্তু সমাজ তাকে উপেক্ষা করেনি। বাংলাদেশে এমন কোন উপজেলা নেই, সেখানে একজন হলেও শাহরিয়ারকে চেনেন সম্মান করেন। বস্তুত, বাংলাদেশে যে ক’জন রাজনীতিবিদকে মানুষ চেনেন, তার চেয়েও বেশি শাহরিয়ারকে চেনেন। (শেখ হাসিনাকে হিসাবের মধ্যে ধরা যাবে না, এই একজনকে ১৭ কোটিই চেনেন)। জীবদ্দশায় সমাজ থেকে অনেকেই এ সম্মান পাননি। মানুষ শাহরিয়ারের সাহস আর সততাকে শ্রদ্ধা করে। বর্তমান স্টাবলিশমেন্ট তাকে উপেক্ষা করতে পারে কিন্তু সাধারণে সে আদৃত এবং ভবিষ্যৎ তাকে উপেক্ষা করবে না। আওয়ামী বিরোধী বিএনপি নেতা মেজর আখতারুজ্জামান মাস কয়েক আগে টেলিভিশনে (বা ব্যক্তিতগতভাবে আমাকে বলেছেন, মনে নেই) বলেছিলেন, আমরা পারব কীভাবে? ‘আপনারা দু’জন চার দশক ধরে একই কথা বলতে বলতে দুটি জেনারেশন নিয়ে গেছেন।’ আমি সামনে ছিলাম দেখে তিনি আমার কথা বলেছেন বিনয়ের কারণে। আসলে এই কাজটিতে অনেকে ভূমিকা রাখলেও অগ্রণী ভূমিকা ছিল শাহরিয়ারের। সে জন্য বলেছি, বর্তমান তাকে উপেক্ষা করতে পারে, ভবিষ্যত তার জন্য অপেক্ষা করছে, ভবিষ্যতে সে উজ্জ্বল। এ অর্জন আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য। বর্তমানে আরো শাহরিয়ারের জন্ম হবে বা যার যৌবন সে শাহরিয়ারের মতো কাজ করবে এটিই আমার আশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App