×

মতামত

আমরা যেন পথভ্রষ্ট না হই

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম

আমরা যেন পথভ্রষ্ট না হই

সুইডেন থেকে লিখেছেন রহমান মৃধা

গাছের কৃতিত্ব খুব কমই শুনেছি জীবনে তবে ফলের প্রশংসা শুনেছি অনেক। এটা প্রকৃতির একটি বিশেষ নিয়ম। শিক্ষা ঠিক তেমনই একটি বিষয় যার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, এমনকি মহাদেশের গুণাগুণ ফুটে উঠে। মনে পড়ে গেল ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। তিনি ছিলেন বাঙালি এবং অবিভক্ত ভারতবাসী। বাংলা ভাষায় তার গীতাঞ্জলী কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে এবং নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। শিক্ষার আলোতে আলোকিত হয়েছিল একজন ব্যক্তি, একটি ভাষা, একটি জাতি, একটি দেশ এবং একটি উপমহাদেশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু লেখালেখি করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তাঁর লেখাকে ইংরেজদের সাহায্যে অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে গীতাঞ্জলীর ওপর নোবেল পুরস্কার এবং বিশ্ব দরবারে তাকে বিশ্বকবি হিসাবে বিক্রি করেন।

আমরা নিজেরাও কিন্তু প্রতিদিন আমাদেরকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছি জানা বা অজানাবস্থায়। এখন বিক্রি করতে গিয়ে যেন ভারসাম্য হারিয়ে না ফেলি সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন যদি শিক্ষার আলো বিবেককে সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারে, তখন বিবেক ভাল-মন্দের পার্থক্য হারিয়ে ফেলবে। হারিয়ে ফেলবে তার ভারসাম্যতা। তখন মানব জাতি দানবে পরিণত হবে। কারণ শিক্ষা যখন আলোময় না হয়ে কালো রূপ ধারণ করে, তখন তা আর সুশিক্ষা দিতে পারে না, দেয় কুশিক্ষা। এটা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে নজর রাখতে হবে বিশ্বের কোথায় কখন কী ঘটছে, যেমন পৃথিবীর অনেক দেশে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের উচিৎ চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ধরণের সুযোগ নেয়া। বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি এবং বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা বের করে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে পারে।

দেশের বেকার শিক্ষার্থীদের চাহিদাভিত্তিক এবং অন দি জব ট্রেনিং এর মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করে বিশ্বের অনেক দেশের সাথে ব্যবসায়ের সমন্বয় ঘটানো মিরাকল কিছু নয়। যারা দেশের দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি সত্যিকারে চেষ্টা করে তবে তারা পারবে পরিবর্তন আনতে। এবং একই সাথে নিজেদেরকে বিক্রি করা শিখতে হবে সুশিক্ষা এবং চাহিদাভিত্তিক প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে। পৃথিবীটা একটা বেচা-কেনার জায়গা। দরকারে কেনা আর প্রয়োজনে বেচার সাথে সুশিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে দ্রুত গতিতে বিক্রি করতে শেখা হোক আগামী প্রজন্মের প্রশিক্ষণ।

এখন প্রশ্ন কীভাবে সেটা সম্ভব? বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, সন্তানের জীবন গঠনে পুশ এবং পুল তত্ত্বের উপর বেশি জোর না দেওয়াই শ্রেয়। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের দিক নির্দেশনার উপর গুরুত্ব দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আশু প্রয়োজন তাদের মঙ্গলের জন্য। মানব জাতির  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হোল প্রত্যেকেই তার নিজ ব্যক্তিত্বে অসাধারণ। একটু সাহায্য ও সহানুভূতি পেলে তারা তাদের মেধার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম তবে তার জন্য দরকার ব্যক্তির আগ্রহ এবং চেষ্টা।

এখন যদি বলি আগ্রহ এবং চেষ্টার প্রতিফলন ঘটাতে সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাবা-মার সিদ্ধান্ত নয় দরকার অনুপ্রেরণা। আমার এই কথায় অনেকে কিছুটা বিচলিত হবে, হবারই কথা।

আমার কথার বিশ্লেষণে যাবার আগে আসুন একটু সময় ব্যয় করি গতির ওপর। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে তখন তাকে গতিশীল বস্তু এবং এই ঘটনাকে গতি বলা হয়।

বিশ্বজগতের প্রত্যেকটি বস্তুই গতিশীল। যেসব গতি আমরা নির্ধারণ করতে পারি তার উপর আমাদের একটি ধারণা আছে। তবে সব গতি কি আমরা নির্ধারণ করতে পারি? যেমন লাইলাতুল মেরাজের রাতে নবী মুহাম্মদ (সা.) বোরাক নামক বিশেষ বাহনে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। বোরাক নামক যে বাহনে তিনি ঊর্ধ্বলোকে গিয়েছিলেন তার গতি কত ছিল তা কি আমরা জানি?

আবার প্রেম-ভালবাসা হরমোনের একটি রসায়নের খেলা! এটা আমাদের মস্তিষ্কে সৃষ্ট এক ধরনের রাসায়নিক অবস্থা। এই রাসায়নিক হরমোনের গভীরতা যতো বেশি তার গতিও ততো বেশি।

নানা ধরনের গতি রয়েছে যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, বাতাসের গতি, শব্দের গতি, আলোর গতি, ভালোবাসার গতি, বোরাক বাহনের গতি, মনের গতি ইত্যাদি। কোন গতি কত দ্রুত তা জানি বা না জানি তাতে কিছু যায় আসে না। তবুও মাথায় চিন্তা ঢুকেছে, মনের গতি এবং তার আকর্ষণী ক্ষমতার উপর। যেখানেই গিয়েছি জীবনে, ভাবতেই মন সেখানে গিয়ে হাজির। এই মনের গতির দ্রুততা কতো তা আজও জানতে পারিনি। মনে হচ্ছে যতো কাছে বা দূরেই যাই না কেন মন সেখানে হাজির এবং সময়ের কোনো পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারছি না। আছেন কি কেউ যে এই পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন?

মনের গতির সঙ্গে কি তাহলে স্রষ্টার ক্ষমতা এবং তাঁর শক্তির উপর কিছু তুলনা করতে পারি? না পারি না, কারণ তার ক্ষমতা জানার মতো জ্ঞান আমাদের নেই। যদিও আমরা আজীবনের সব কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভ্রমণ করতে পারি মুহূর্তে, তবুও এ ক্ষমতা স্রষ্টার ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করার নয়, এতটুকু বুঝতে পেরেছি। মনের গতি যতো দ্রুতই হোক না কেন সীমানার বাইরে যাবার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই সকল গতির ঊর্ধ্বে মনের গতি থাকলেও মনের গতির ঊর্ধ্বেও আরেক গতি রয়েছে। সে গতি আমাদের অজানা, আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে গতির নাম ইনফিনিটি গতি। মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারের গতির শেষ কোথায় গিয়ে থামবে? এ প্রশ্নের উত্তর এ মুহূর্তে কেউ কি বলতে পারবে? হয়ত না, তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?

মানব জাতির বয়স্কদের চেষ্টার শেষ হতেই তাদের সন্তানদের চেষ্টার শুরু। এ চেষ্টার শুরুতে তারা তাদের নিজ গতিতে শিখবে। এখন সন্তানের জ্ঞানভাণ্ডারের গতি এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাবা-মা কী চায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বরং সন্তান নিজে কী হতে চায় সেটার উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এখন অনেকেই বলবে ছেলে-মেয়ে যখন ছোট তারা কি জানে কোনটি ভালো বা কোনটি মন্দ? সন্তান যখন ছোট তাদেরকে গড়ে তোলা এবং ভালো-মন্দের দায়ভার নেওয়া বাবা-মার দায়িত্ব।

এ কথা কিছুটা সত্য তবে মনে রাখতে হবে দুটি বিষয়। একটি হলো সন্তানকে গড়ে তোলা আরেকটি হলো গড়ে তুলতে সাহায্য করা। আমরা যখন আমাদের চিন্তাধারাকে শিশুর উপর চাপিয়ে দেই তখন তাদের নিজেদের চিন্তাশক্তি (ক্রিয়েটিভিটি) লোপ পেতে থাকে। একই সাথে পরনির্ভরশীলতাও বাড়তে থাকে। যার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মুখস্থবিদ্যা বা অন্যকে অনুসরণ করা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে। এর ফলে দেখা যায় শিশুর নিজের মধ্যে যে নিজস্ব দক্ষতা এবং প্রতিভা রয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। নিজস্ব দক্ষতা হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ যা হ্রাস পেতে থাকে। শিশুর ব্যক্তি সচেতনতা, আবেগের নিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস এবং উৎসাহের অঙ্কুরে বিনাশ ঘটে যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রকৃতিতে সব ফুলের কুঁড়ি যেমন ফুল এবং ফল দিতে পারে না, সব শিশুর জীবনও ঠিক তেমনি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। প্রশ্ন উঠতে পারে আজীবন আমরা এই ভাবেই তো সব কিছু করে এসেছি, এখন কেন অন্যভাবে করতে হবে? যুগের অবকাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মের ধরণ এবং পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের ডিএনএ এবং ফিঙ্গার প্রিন্টে প্রমাণিত হয় যে আমরা একে অন্যের থেকে ভিন্ন। সুতরাং শিশুর ইন্ডিভিজুয়াল আইডেন্টিটির বহিঃপ্রকাশ যেন ঘটে সে বিষয়ে যেমন বাবা-মার দায়িত্ব রয়েছে তেমন দায়িত্ব স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও।

দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি বিষয় বেশ কমন দেখা যায় তা হলো বাবা-মা সব সময় তাদের সন্তানদের পুশ করে যাতে তারা এমন ধরনের শিক্ষা বেছে নেয় যেখানে চাকরির নিশ্চয়তা বেশি। সন্তান কী হতে চায় তার প্রতি মনোযোগী না হয়ে বরং নিজেরা যেটা ভালো মনে করে সেটাই সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়। যদিও বাবা-মার এ ধরনের চিন্তাধারার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আমি একটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরব যা আমি দেখেছি আমার জীবনে।

১৯৮৭ সালের কথা, ফিনল্যান্ডের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে ফিনল্যান্ডের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় তার দেশে মেধা তালিকায় শীর্ষ স্থান পেয়েও ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে অর্থনীতি পড়বে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। আমার বড় ভাই তখন সুইডেনে পিএইচডি স্টুডেন্ট। লাঞ্চে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করি। বড় ভাই মেয়েটিকে কিছুটা বাংলা স্টাইলে ইন্টারভিউ নিলেন যেমন বাবা-মা কী করেন, ভাই-বোন কয়জন ইত্যাদি। পরে তার লেখাপড়ার পারফরমেন্সের উপর আলোচনার এক পর্যায়ে মেয়েটিকে বেশ মোটিভেট করতে চেষ্টা করলেন যেন সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়। 

মেয়েটি বড় ভাইকে সেদিন বলেছিল আমরা যেটা পছন্দ করি সেটার উপর গুরুত্ব দেই। কে কী বললো বা ভাবলো তার উপর নয়। আমি অর্থনীতি পছন্দ করেছি অতএব এটাই আমার সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগের চেয়ে যুক্তি ও বাস্তবতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে যা শিখেছিলাম সেদিন। যাইহোক মেয়েটির সঙ্গে আমার যোগাযোগ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে ফিনান্স ওয়ার্ল্ড পত্রিকায় দেখলাম তার বায়োগ্রাফি। সে তাঁর লেখাপড়া শেষে নোকিয়ার Senior Financial Analyst-হিসেবে কাজ করেছে এবং বর্তমানে মাইক্রোসফটের Finance Manager-NDS Business Intelligence বিভাগে উচ্চ পদে কর্মরত। জানিনে পরিবার বা পারিপার্শ্বিক চাপে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলে সে তার কর্ম জীবনে এত শীর্ষে উঠতে পারত কিনা! যা সে পেরেছে আজ তার ভালোলাগার সাবজেক্ট পড়ার কারণেই।

সুইডেনে এ ধরনের হাজারও উদাহরণ রয়েছে যা একের পর এক তুলে ধরার মতো। যেমন আরেকটি ঘটনা, দশ বছর আগের কথা। বাবা-মা দুজনেই সুইডেনের নাম করা প্রফেসর। একজন KTH -এর (Royal Institute of Technology) পদার্থ বিজ্ঞানে, অন্যজন KI-এর  (Karolinska Institute) বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নাম করা প্রফেসর। তাদের একমাত্র ছেলে জন কপিল (Jan Kopil) বেছে নিয়েছিল পড়াশুনোর সাথে টেনিস। টেনিসে সে তেমন ভালো খেলোয়াড় হতে পারেনি তবে তার সখ ছিল সে টেনিস আম্পায়ার (tennis umpire) হবে। বাবা-মার বেশ মন খারাপ হয়েছিল প্রথমে কথাটি শুনে। যেখানে তাঁরা দুজনই দেশের মস্ত বড় প্রফেসর অথচ ছেলে হবে আম্পায়ার! তাঁরা মনে মনে বিষয়টি পছন্দ না করলেও ছেলেকে টেনিস আম্পায়ার হতে ১০০% সাহায্য করেছে।

গতবছর ডেভিস কাপ খেলা ছিল সুইডেনের সঙ্গে ইসরায়েলের। আমাদের ছেলে জনাথান সুইডেনের হয়ে খেলছে বিধায় আমরা সেখানে ছিলাম। হঠাৎ জন কপিলের বাবা-মার সঙ্গে দেখা। প্রথমে ভেবেছি তাঁরা হয়ত খেলা দেখতে এসেছে, তবুও জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার দুজনই এখানে! উত্তরে বললো জন কপিল আজকের এই ডেভিস কাপ খেলার মেইন আম্পায়ার। সে এখন দেশ-বিদেশে এই দায়িত্ব পালন করছে এবং মজার জীবন যাপন করছে। কথা বলার সময় তাঁদের চোখে মুখে যে আনন্দের বার্তা দেখলাম তাতে মনে হলো তাঁরা বেশ গর্বিত বাবা-মা।

আমাদের দেশে এখনও দেখা যায় যখন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ হলো না তখন বাধ্য হয়ে অন্য সাবজেক্টে ভর্তি হয়। এক্ষেত্রে মোটিভেশন নয় বলতে গেলে কোনো উপায় না দেখে লেখাপড়া করা। কিন্তু সুইডেনে দেখেছি সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে তা তারা খুঁজে বের করে। পরে চর্চার মাধ্যমে সেই দুর্বলতা দূর করে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলে।

আমরা সমস্যা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে শেষে সমাধান নিয়ে ভাবনার সুযোগই পাই না। তাই দরকার শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন অবধি সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানা। যে ভাবনাগুলো আমাদের আলোড়িত করে, সেগুলো শুধু মাথার ভেতর না রেখে প্রয়োগ করে দেখতে হবে। তাহলেই আমরা শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানতে পারব। সর্বোপরি জীবনে আমরা কতটা সফল হতে চাই, তা নির্ভর করছে আমাদের জ্ঞানভান্ডারের গতি, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার ওপর। তারপর হৃদয় মন প্রাণ যে কাজের সাথে জড়িত সে কাজের মধ্যে মধুময় সম্পৃক্ততার সৃষ্টি হয়। হাজারও প্রমাণ তুলে ধরা যেতে পারে এ বিষয়ের উপরে। জীবনে ভালোবেসে যা কিছুই করা হোক তা সব সময় আনন্দের হয়ে থাকে। বড় চাকরি করে দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে কী লাভ যদি সে স্টোরি শেয়ার করা না যায়! জীবন আমাদের একটাই এবং তা একবারই এসেছে। তাই সত্যিকার লাভ স্টোরি তৈরি করলে ক্ষতি কী!

সন্তানের জীবনে আমাদের ভূমিকা বাবা-মা হিসেবে যেন বিরল হয়ে থাকে সেইভাবে কাজ করতে আমরা যেন সক্ষম হই। আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের জীবনের গল্প হোক বর্তমান এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা যা জানলে এবং শুনলে সবাই উপকৃত হবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App