×

মতামত

জাগো নারী জাগো

Icon

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম

জাগো নারী জাগো

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম নারী দিবস পালন করার কথা বলেছিলো ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। পরে জার্মান কমিউনিস্ট এবং নারী অধিকারকর্মী ক্লারা জোসেফিন জেটকিন ১৯১০ সালে নারী দিবস পালনে ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। শেষে নারী দিবসটি জাঁকালোভাবে পালিত হয় ১৯১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রবিবার।

নারী দিবসের ওপর প্রথম জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বৈঠক হয় ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোয়। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে দিনটি পালনের জন্য মার্চের ৮ তারিখ ধার্য করা হয়। সেই অনুযায়ী ১৯৭৮ সাল থেকে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

আমরা পুরুষ জাতি এবং নারী জাতি—এই দুই জাতি মিলে মনুষ্যজাতি। পুরুষ জাতি দৈহিকভাবে খানিকটা বেশি সমর্থ হওয়ার কারণে তাদের ধারণা ছিল, তারাই নারী জাতির ওপর সব ধরনের খবরদারি করবে। কিন্তু নারী জাতি সময়ের সঙ্গে সে ধারণা ভাঙতে থাকে। উপরন্তু তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়।

পরিবার, সমাজ এবং দেশের দায়ভার থেকে শুরু করে সব বিষয়ে গুরুদায়িত্ব পালনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে চলেছে নারী। নারীর প্রতি পুরুষের অবিচার, অত্যাচারের সমস্ত যন্ত্রতন্ত্র ভেঙেচুরে তছনছ করে নারী জাতি বিশ্বের অনেক দেশের সিংহাসনে উপনীত হয়েছে।

ইসলাম ধর্মসহ প্রায় সব ধর্মেই নারীকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নারী হলেন মায়ের জাতি। যে মায়ের গর্ভ থেকে আমাদের জন্ম সে মায়ের জাতিকে যদি মর্যাদা না দেয়া হয়, তাহলে তা কলঙ্কজনক। এই মর্যাদার কথা এসেছে জাতীয় কবির পঙক্তিতে, ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’

কোনো সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা সভ্য বা উদার তা নির্ভর করে সেখানকার নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানের ওপর।

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে অনেকদূর এগিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের প্রমাণ, বাংলাদেশে দুই নারী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। আর নারীর ক্ষমতায়নের খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

অনেক ভালোর পেছনে মন্দও রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ নারী শাসিত দেশ সত্ত্বেও ধর্ষণ হচ্ছে, হচ্ছে এখনো নারীর প্রতি অত্যাচার-অবিচার। এসব বন্ধ করতে হবে। দেশে নারী শিক্ষার হার ও কাজে অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বরং নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহতা বেড়েছে।

বাংলাদেশে নারীদের জীবনে গত ৫২ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, হয়তো অনেকটাই এগিয়েছে, কিন্তু ইতিবাচক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীরা সামনে এগিয়ে এসেছে, কিন্তু তারা কি মুক্তি ও ন্যায়বিচার পাচ্ছে?

নারী তার ধর্ম, এলাকা, সম্প্রদায়ভেদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এই বৈষম্যের প্রধান কারণই লিঙ্গ। বৈষম্য এবং সহিংসতাকে প্রতিহত করতে নারীদের কৌশলী হতে হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও নারী শ্রমিকেরা সমান পারিশ্রমিক, নিরাপদ কর্মপরিবেশ দাবি করেও পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি আর কারখানা দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা এখনো ঘটেই চলেছে। একইসঙ্গে হচ্ছে অন্যায়-অবিচার।

কিন্তু এসবে ভয় পেয়ে পিছপা হলে চলবে না। ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ হঠাৎ যেমন কালো মেঘ ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ, নামছে মুষলধারে বৃষ্টি। তার একটু পরেই আকাশ আলো করে উঠছে সূর্য। এমন একটি মূহুর্তে একজন নারী নতুন করে বলুক “এসো আমরা এক নতুন পৃথিবী গড়তে লড়াই করি, এক সুন্দর পৃথিবী যা মানুষকে দেবে কর্মের সুযোগ, শিশুদের দেবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর বয়স্কদের দেবে নিরাপত্তা। এসব দেবার ওয়াদা করেই পুরুষেরা উঠেছিলো ক্ষমতার শিখরে। কিন্তু তারা মিথ্যা বলেছিলো। তারা কখনোই সেই ওয়াদা পূর্ণ করেনি, কখনো করবেও না। স্বৈরাচারেরা মুক্ত করেছে শুধু নিজেদেরকেই, আর ক্রীতদাস বানিয়েছে নারীদেরকে। এখন এসো আমরা একত্রে লড়াই করি সেই ওয়াদা পূরণে। 

এসো একসঙ্গে লড়াই করি পৃথিবীর সকল নারীকে মুক্ত করতে; সমস্ত জাতীয় সীমানার, সমস্ত লোভের, সমস্ত ঘৃণার এবং অসহনশীলতার ইতি টানতে। এসো একসাথে লড়াই করি একই লক্ষ্যের পৃথিবী গড়তে, এমন এক পৃথিবী যেখানে বিজ্ঞান ও উন্নয়ন মানুষকে নিয়ে যাবে সুখী জীবনের দিকে।”আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশের সকল নারী সূর্যের মতো জ্বলে উঠুক আপন সত্তায়, যে আলো পুরুষ জাতিকে মানুষ হতে সাহায্য করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App